গুয়াহাটি, ০৭ জুন, (হি.স.) : মহানগরের ব্যস্ততম পল্টনবাজার এলাকার সাইমন হাউসের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ৪২টি দোকানের মালিক সত্তরোর্ধ্ব কনক চৌধুরীর রহস্যজনক মৃত্যুর এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। রবিবার রাতে তাঁর ঘরের ভিতরে যখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, তখন সেই ঘরের দরজায় বাইরে সাঁটা তালা ভেঙে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত চৌধুরীর লাশ তাঁর বিছানায় তাঁকে শয্যাশায়ী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। এরপর গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত পুলিশ ও ফরেন্সিক বিভাগের লোকজন অনুপুঙ্খ তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়েছেন। এখনও এই লোমহর্ষক মৃত্যুর কোনও দিশা পাওয়া যায়নি। রহস্যজনকভাবে তাঁর ক্যায়ার ট্যাকার তথা দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্তও উধাও। এমতাবস্থায় এই মৃত্যুকে সাধারণ মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে না-জুড়ে এর পেছনে খুনের গন্ধ পাচ্ছে পুলিশ।
কনক চৌধুরী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর স্বত্বাধিকারী ৪২টি দোকানের মালিক চৌধুরী কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকারী। স্থানীয় পল্টনবাজারের নেপালি মন্দিরের সম্মুখবর্তী তিনতল বিশিষ্ট সাইয়ন হাউসের প্রথম তলে তাঁর নিজের একটি ঘরে ‘থ্রিলার’-এর মতো রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। বিশাল সম্পত্তির মালিক কনকবাবুর কীভাবে মৃত্যু ঘটেছে তা এক বিস্ময়। পারিপার্শ্বিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একে নিছক হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। কনক চৌধুরীর এক ছেলে থাকেন আমেরিকায়। বিবাহিতা দুই মেয়েও রয়েছেন তাঁর। গত এক বছর আগে পত্নী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। তাঁর দেখভাল করত বিশ্বজিৎ রায় নামের এক ব্যক্তি। বিশ্বজিৎ তার পত্নী ও দই সন্তান নিয়ে একই ফ্ল্যাটে থাকত। দিনে ব্যবসার কাজ শেষ করে নিশ্চিন্তে রাত কাটাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন গত এক বছর ধরে। রবিবারও এভাবেই তাঁকে সারাদিন দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু রাতে এই লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে যাওয়ায় মর্মাহত প্রতিবেশী থেকে তাঁর পরিচিত মহল।
রবিবার রাত প্রায় ১১.০০ মিনিট। আচমকা প্রতিবেশীদের নজরে আসে এই বাড়ির প্রথমতলের একটি কোঠার ভিতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। শুনা যাচ্ছে আর্ত চিৎকার। হতবিহ্বল আশপাশের মানুষের মধ্যে শুরু হয় হুলস্থুল। খবর যায় একশো হাত দূরে অবস্থিত পল্টনবাজার থানায়। সঙ্গে সঙ্গে দমকল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় পুলিশের বিশাল দল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কনকবাবুকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, যে কোঠায় কনকবাবুকে তাঁর বিছানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ঘরের মূল দরজায় তালা সাঁটা ছিল। দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ঝলসে যাওয়া তাঁর লাশ বের করা হয়েছে। বিছানায় তাঁর লাশ উপুড় হয়ে পড়েছিল বলেও জানায় পুলিশ। এই লাশের নীচে পুড়ে যাওয়া অগ্নিদগ্ধ একটি কুকুরের মৃতদেহও পাওয়া গেছে। কুকুরটি তাঁর পালিত ছিল। আগুনে তাঁর ওয়াড্রোবের ভিতরের সামগ্রীও জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এদিকে কনক চৌধুরীর দেখভালের জন্য নিয়োজিত জনৈক বিশ্বজিৎ রায়ও ঘটনার পর থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। একই ফ্ল্যাটের দ্বিতীয় তলে থাকতো সে। বিশ্বজিতের অন্তর্ধানের ঘটনায় বিষয়টিকে অধিক রহস্যময় করে তুলেছে। তাকে খুঁজে বের করতে ময়দানে নেমে পড়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে কনকবাবুর যাবতীয় ব্যবসার হিসাব-নিকাশের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনৈক অমরজ্যোতি শর্মাকে পুলিশ আটক করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিশাল সম্পত্তির মালিক কনকবাবুর মোটা অঙ্কের নগদ টাকা লুটের জন্যই এই খুন। ঘরে রাখা বিশাল নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে খুব ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে কনক চৌধুরীকে।
ইতিমধ্যে বাবার এই করুণ মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আমেরিকা থেকে গুয়াহাটির উদ্দেশে তাঁর ছেলে রওয়ানা হয়েছেন বলে জানা গেছে।
2016-06-07

