শিল্প স্থাপনে বাঁকা পথ বরদাস্ত করা হবে না, বনিকদের অভয় দিয়ে আধিকারীকদের সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী

INVEST TRIPURAনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ জুন৷৷ রাজ্যে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বাঁকা পথে যেতে হবেনা বলে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অভয় দিলেন বিনিয়োগকারীদের৷ পাশাপাশি তিনি রাজ্যের সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারীকদেরও সতর্ক বার্তা দিয়েছেন যে, বিনিয়োগ ক্ষেত্রে কোন অনিয়মের পথ অবলম্বন করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যদি তাদের বিরুদ্ধে তথ্যনির্ভর অভিযোগ মিলে৷ শনিবার আগরতলায় প্রজ্ঞা ভবনে ‘ইনভেস্ট ত্রিপুরা’ শীর্ষক এক সভায় উপস্থিত বনিকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করে বলেন, ত্রিপুরায় স্বচ্ছ প্রশাসন রয়েছে৷ এরাজ্যে শিল্প স্থাপনে কাউকে এক কাপ চা খাওয়াতে হবেনা আপনাদের৷ রাজ্য প্রশাসনের আধিকারীকদের একাংশকে সতর্ক করে বনিক গোষ্ঠীকে অভয় দিয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ চা খাওয়ার আব্দার করেন, তাহলে আমাদের কাছে আসুন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ পাশাপাশি তিনি বনিক গোষ্ঠীকে এরাজ্যে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঝঁুকি নিতেও বলেছেন৷ তিনি বলেন, শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ মানেই ঝঁুকির বিষয়টি থাকছেই৷ তবে, এরাজ্যে বিনিয়োগ করে ঝঁুকি থাকলেও আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যয়ের সাথে জানান, এরাজ্যে বিনিয়োগ করে আপনাদের মুনাফা হবেই৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ করলে শিল্পপতিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না৷ তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশের বাজারকেও কাজে লাগাতে পারবেন৷ ত্রিপুরায় ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ানোর সম্ভাবনা বিষয়ে আয়োজিত এই কর্মশালায় বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রী আলহাজ আমির হোসেন আমু, রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী তপন চক্রবর্তীও আলোচনা করেন৷
এদিন আলোচনায় সুচারুভাবে রাজ্যের প্রচার করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, শিল্প স্থাপনের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো দরকার৷ সব থেকে বেশী প্রয়োজন শিল্প সহায়ক পরিবেশ৷ এখানে গণতন্ত্র গ্রামস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত৷ রাজ্যের মানুষ ঐক্য ও সংহতিকে রক্ষা করছে৷ শিল্প স্থাপনের জন্য যে শান্তি দরকার তা রাজ্যে আছে৷ রাজ্যের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ৷ এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই৷ রয়েছে দায়িত্বশীল স্বচ্ছ প্রশাসন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা আয়তনে ছোট হলেও অবস্থানগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরাবাসীর সম্পর্ক আরও গভীর৷ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার, ত্রিপুরা দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশদ্বার হয়ে উঠার সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের যেমন সাফল্য আছে, তেমনি দুর্বলতাও আছে৷ তাই ত্রিপুরায় বিনিয়োগ করার আগে বিনিয়োগকারীরাও পরীক্ষা করুন৷ রাজ্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে৷
আলোচনায় বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রী আলহাজ আমির হোসেন আমু বলেছেন, ভারত আমাদের একক প্রতিবেশি৷ ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৪,০৯৬ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে৷ এর মধ্যে ১৭৪১ কিলোমিটার সীমানা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে যেমন- আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সাথে৷ বিশেষ করে ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে বাংলাদেশের শিল্পয়ান ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে হবে৷ এসব রাজ্যগুলোতে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে৷ এগুলো বাংলাদেশে আমদানি করে মুল্য সংযোজনের মাধ্যমে পুনরায় রাজগুলোতে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে৷ এক্ষেত্রে দু’দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারেন৷ দু’পক্ষের জন্যই এ উদ্যোগ লাভজনক হবে৷
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ এবং ভারতের অন্যান্য প্রদেশের সাথে কার্যকর কানেকটিভিটি জোরদারে বাংলাদেশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে৷ আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে নতুন সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের নিয়েছি৷ পাশাপাশি নতুন ল্যান্ড কাষ্টমস স্টেশন/ল্যান্ড পোর্ট স্থাপন ও পুরাতনগুলো পুনরায় চালু করতে যাচ্ছি৷ দু’দেশের মধ্যে যোগযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এবং বাংলাদেশের আখাউড়া ও ভারতের আগরতলার মধ্যে রেল যোগযোগ স্থাপনের কাজ চলছে৷ এছাড়া, রামগড়, সাব্রুম এবং দিমগিরি, তেগামুখ বর্ডার পয়েন্টের উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে৷ বর্ডার হাট চালুর মাধ্যমে দু’দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে৷ এগুলো দু’দেশের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে৷ আমরা ভারতের সাথে বহুমাত্রিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পর্ক বাড়িয়েছি৷ গৌহাটিতে বাংলাদেশের একজন উপহাইকমিশনার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে৷ আগরতলা ভিসা অফিসকে ইতোমধ্যে সহকারি হাইকমিশনে উন্নীত করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ত্রিপুরায় আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলন বাংলাদেশের সাথে ভারতের শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অংশীদারিত্ব জোরদারে নতুন মাত্রা যোগ করবে৷ এর মাধ্যমে আমরা ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যেগুলোতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে শিল্পায়নের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হবো৷
আলোচনায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, রাজ্য সরকার শিল্প সরকার শিল্প সহায়ক পরিকাঠামো নির্মাণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে৷ বিনিয়োগের জন্য শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ নীতি তৈরি করা হয়েছে৷ তিনি রাজ্য শিক্ষা পরিকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তি, টেলিপরিষেবা, বায়ো টেকনোলজি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, মেডিক্যাল ট্যুরিজম ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরার বিনিয়োগে রাজ্য সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে৷
আলোচনা করেন মুখ্যসচিব ওয়াই পি সিং, শিল্প বাণিজ্য দপ্তরের সচিব এম নাগারাজু৷ তিনি ত্রিপুরায় শিল্প পরিকাঠামো, কি কি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায় তা তুলে ধরেন৷ বক্তব্য রাখেন ইয়েস ব্যাঙ্কের সিনিয়র প্রেসিডেন্ট তথা কান্ট্রি হেড তুষার পান্ডে, এ টু জেড ইনফ্রা-র এম ডি অমিত মিত্তাল৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন আসোচেমের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালা৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাজ্যে বিনিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়৷ এদিকে, চলতি বছরে ফিকি, আইসিসি এবং সিআইআই এদের সাথে যৌথভাবে আরও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে এ ধরনের ‘ইনভেস্টার মিট’ এর আয়োজন করা হবে৷ জানা গিয়েছে, আগামী ২২ ও ২৩ সেপ্ঢেম্বর ফিকি দ্বারা নর্থ ইস্ট কানেকটিভিটি সামিট, নভেম্বরে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর এসইসিওএনই এর উদ্যোগে ‘ইনভেস্টার মিট’ সহ আরও দুটি বিনিয়োগ সম্পর্কিত আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হবে৷