নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুন৷৷ একদিকে যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদের ঘন ঘন সফরে অনেকটাই চাপে রয়েছে রাজ্য সরকার৷ এরই মাঝে রাজ্যপাল তথাগত রায় মনে করেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদের এই ঘন ঘন সফরে পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলি উপকৃত হবে৷

বুধবার উত্তরপূর্বাঞ্চল কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের সম্মেলনের মঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশংসাই ফুটে উঠেছে রাজ্যপাল তথাগত রায়ের বক্তব্যে৷ এদিন, এনইআরসিপিএ’র সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ভেলিডেকটারি সেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, উত্তরপূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ যার কারণে, এই অঞ্চলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিরা ঘন ঘন সফর করছেন৷ তাঁর দাবি, উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সৌভাগ্য যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিরা এই অঞ্চলের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদের ঘন ঘন সফরে রাজ্যগুলির সমস্যা এবং দাবিদাওয়া তাঁদের কাছে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা সম্ভব৷ তাতে এই অঞ্চল উপকৃত হবে বলেই তিনি মনে করেন৷ যোগাযোগের গুরুত্ব উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেন, উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে রেল সংযোগে বিরাট অগ্রগতি হয়েছে৷ রেল সংযোগ এই অঞ্চলে গত কয়েকদিনে সম্প্রসারিত হয়েছে৷
মঙ্গলবার এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূর্বোত্তরের প্রতিনিধি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই অঞ্চলের উন্নয়নের প্রশ্ণে কেন্দ্রীয় সরকারকে নানাভাবে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করেছিলেন৷ সাংবিধানিক মর্যাদা বজায় রেখে লোকসভার অধ্যাক্ষা সুমিত্রা মহাজন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সমস্ত অভিযোগ খন্ডন করেছিলেন৷ তিনি দাবি করে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের উন্নয়নে যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে কাজ করে চলেছে৷ আজ ফের লোকসভার অধ্যক্ষার সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্যপাল তথাগত রায়ও কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের প্রতি সহৃদয় সেই বিষয়টি জোর গলায় দাবি করেছেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদের ঘন ঘন রাজ্য সফর এই অঞ্চলকে উপকৃত করবে বলেই দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর৷ ফলে, এনইআরসিপিএ’র মঞ্চে পূর্বোত্তরের উন্নয়নের প্রশ্ণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ আরও শক্তিশালী করে তোলার যে ডাক দেওয়া হয়েছে তাতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির সম্পর্কে চাপানউতোর নয়া মাত্রা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এদিন, সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল তথাগত রায় আরো বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের একটা বৃহত্তর অংশ৷ ভাষা,কৃষ্টি ও সংসৃকতির বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল৷ যা খুবই আকর্ষণীয়৷ তিনি বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিকাশ ত্বরান্বিত হলে দেশ সমৃদ্ধ হবে৷ ভূমিক্ষয় এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা৷ এই সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ রাজ্যপাল আশা প্রকাশ করেন এই সমস্যা সমাধানে এই আলোচনা একটা সঠিক দিশা দেখাবে৷
রাজ্যপালের মতে, বিশ্বে নানা রকমের গণতন্ত্রের পরিকাঠামোর রূপ আমরা দেখতে পাই৷ কিন্তু আমাদের দেশের গণতন্ত্রের চরিত্র একটু ভিন্ন৷ আমরা গর্বিত আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য৷ নানা দল, নানা মত এবং একটা বৃহৎ অংশের জনগণ আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রে ভাবে কাজ করেন৷ তারা সংসদীয় গণতন্ত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন এধরনের সম্মেলন সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতেও ভূমিকা নেবে৷
সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার পরিষদীয় মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বিকাশে এই অঞ্চলের রাজ্যগুলির একটা কমন ভয়েস থাকা প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, দেশের সব অঞ্চলের সার্বিক বিকাশের উপরই নির্ভর করছে আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত৷ সমস্ত অঞ্চলের মানুষের কল্যাণই আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের লক্ষ্য৷
সম্মেলনে সমাপ্তি বক্তব্য পেশ করেন সমিতির চেয়ারম্যান মেঘালয় বিধানসভার অধ্যক্ষ আবু তাহের মন্ডল৷ তিনি উত্তর পুর্বাঞ্চলের সার্বিক অগ্রগতির জন্য যৌথ ভাবে কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ পবিত্র কর৷ সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে স্পীকার্স রিসার্চ ইনিসিয়েটিভ বিষয়ে আলোচনা করেন লোকসভার সচিব ড ডি ভাল্লা, রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলাপিং কান্ট্রি-র ডিরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক শচীন চতুর্বেদী প্রমুখ৷