BRAKING NEWS

আগরতলা ও বিশালগড়ে দুই গৃহবধূকে নির্যাতন, খোয়াইয়ে বাড়ছে যৌন নিগ্রহ

domestic violanceনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, খোয়াই, ৩০ মে৷৷ রাজ্যে গৃহবধূ নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে৷ এটি একটি সামাজিক মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পণের দায়ে গৃহবধূর উপর অমানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে নির্যাতিত কিংবা মৃতের আত্মীয়পরিজনরা সুবিচার পাচ্ছে না৷ এধরনের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ক্রমশ বাড়ছে৷ সোমবার আগরতলা শহর সংলগ্ণ বিটারবন এলাকায় এক গৃহবধূকে পিটিয়ে গুরুতরভাবে জখম করেছে তার স্বামী৷ আহত গৃহবধূর নাম সম্পা সাহা৷ অভিযুক্ত স্বামীর নাম রাজু সাহা৷ জানা যায়, মাত্র সাত মাস আগে সম্পা সাহার সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়েছিল বিটারবন এলাকার রাজু সাহার সঙ্গে৷ বিয়েতে পাত্র পক্ষের দাবি অনুযায়ী নগদ টাকা, সোনাগয়না, আসবাবপত্র সব কিছুই মিটিয়ে দিয়েছিল৷ কিন্তু তাতেও খাই মিটেনি৷ গৃহবধূর উপর নির্যাতন দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ সোমবার দুপুর নাগাদ সম্পার বড় বোন তাদের বাড়িতে এসেছিলেন সম্পাকে বাপের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ কিন্তু সম্পার স্বামী রাজু সাহা তাকে বাপের বাড়িতে যেতে দেয়নি৷ এনিয়ে তীব্র বাকবিতন্ডা হয়৷ এমনকি গৃহবধূ সম্পা সাহাকে পিটিয়ে গুরুতরভাবে জখম করা হয়৷ বর্তমানে গৃহবধূ সম্পা সাহা জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ ঘটনার খবর পেয়ে রামনগর আউট পোস্টের পুলিশ ছুটে যায়৷ অভিযুক্ত স্বামী রাজু সাহা পলাতক৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷
এদিকে, বিশালগড়ের ধবজনগর এলাকায় এক গৃহবধূ ও তার বড় ভাই স্বামীর মারধরে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন৷ দুজনকেই জিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ আহতরা হল গৃহবধূ আসমিনা বেগম এবং তার বড় ভাই বিটন মিয়া৷ জানা যায়, ধবজনগরের মিটন মিয়ার সঙ্গে সামাজিক প্রথায় দুবছর আগে বিয়ে হয়েছিল বক্সনগরের ভেলুয়ারচর এলাকার বিটন মিয়ার ছোট বোন আসমিনা বেগমের৷ বিয়েতে পাত্র পক্ষের দাবি অনুযায়ী টাকা পয়সা সহ অন্যান্য জিনিসপত্র মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ বর্তমানে তাদের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে৷ কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই গৃহবধূকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা পয়সা এনে দেওয়ার জন্য ক্রমাগত নির্যাতন শুরু হয়৷ বেশ কয়েকবার টাকা পয়সার জোগানও দেওয়া হয়৷ কিন্তু নির্যাতন কমেনি৷ নির্যাতিতা গৃহবধূ এক মাস আগে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন৷ শনিবার তার স্বামী মিটন মিয়া ফোন করে স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসে৷ বাড়িতে আসার পরই তার উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ খবর পেয়ে তার বড় ভাই বিটন মিয়া ছুটে আসেন৷ তাকেও মারধর করা হয়৷ আহত দুজনকেই জিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ এব্যাপারে বিশালগড় থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও নির্যাতিতাদের অভিযোগ গ্রহণ করেনি পুলিশ৷ তাতে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷ অপরদিকে মিটন মিয়া নামে ঐ ব্যক্তি তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে উল্টো বিশালগড় থানায় মামলা করেছে বলে জানা গেছে৷
খোয়াই জেলায় উঠতি যুবক-যুবতীদের মধ্যে অপরাধমূলক ঘটনার প্রবণতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ খোয়াই জেলা হাসপাতালের প্রাইভেট চেম্বারগুলিতে কান পাতলেই শোনা যায়, দৃষ্টি রাখলেই দেখা যায় পনের থেকে কুড়ি বছরের যুবতীদের ভিড়৷ শহর থেকে গ্রামে গঞ্জে এর প্রবণতা কোন অংশে কম নয়৷ বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানগুলিতে নীল ছবি অবাধে বিক্রি চলছে৷ ডট কমের যুগে এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ণে বিভোর নব প্রজন্মের হাতে হাতে এখন স্মার্ট ফোনের ছড়াছড়ি৷ গ্রাম থেকে শহর, শ্রমিক থেকে আম আদমি সবার হাতেই এখন মোবাইল ফোন সামান্য ব্যাপার৷ আর এই মোবাইলে করেই নীল ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের সকলের মধ্যে৷ সে সাথে নেশার প্রকোপের বাড় বাড়ন্তের মধ্যে ট্যাবলেট, মদ কিংবা অন্যান্য নেশারপাশাপাশি হেন্ডিং, জুয়ার রমরমা এবিষয়ে ইন্ধন যুগাচ্ছে আজকের সমাজ দূষণের কবলে৷ নেশা, জুয়া আর মানবিক অধঃপতনের মধ্যে থানা বাবুদের প্রয়াস শুধুমাত্র মাসোহারা আদায় পর্যন্তই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ সমাজের প্রতি দায়তবদ্ধতা যাদের বেশি থাকার কথা তারাই সমাজের অধঃপতনের মধ্যে ভূমিকাহীন৷ সুতরাং সমাজকে ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন এবং গোটা সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে৷ সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে৷ একযোগে ব্যারিক্যাড তৈরি করলে সমাজকে ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভপর হতো৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইদানিংকালে খোয়াই মহকুমার দুটি থানা এলাকায় ক্রমাগতই ঘটে চলছে নারীর উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা৷ নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলিতে পুলিশের দরজায় যে কয়টি অভিযোগ আসে তার মধ্যে সিংহভাগ ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ ছাড় দিয়ে রেখেছে৷
আইনের এই টিলাঢালার কারণে প্রায়দিনই ঘটছে যৌন নির্যাতনের অপরাধ৷ কখনো চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া সুকল ছাত্রী কখনো যুবতী আবার কখনো গৃহবধূরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ রাজ্যের সাইনবোর্ড সম্বল মহিলা কমিশনও মোটেই চিন্তিত নন রাজ্যের নারীরা সুরক্ষিত না থাকার পরও৷ সম্প্রতি খোয়াইতে তিন তিনটি শিশু ও যুবতী কন্যার উপর যৌন নির্যাতন বা নির্যাতনের চেষ্টার ঘটনা ঘটে গেলেও রাজ্যের মহিলা কমিশন দিব্যি নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছে৷ খোয়াই থানায় দুটি শ্লীলতাহানি ও চাম্পাহাওর থানা এলাকায় একটি ধর্ষণের ঘটনায়ও রাজ্যের নারী দরদি মহিলা কমিশনকে দূরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ থানার পুলিশ শ্লীলতাহানির বা ধর্ষণের অভিযোগ হাতে পেয়ে কজন আসামীকে ধীরে আদালতে পাঠাল সে বিষয়ে মেদবহুল রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছে কোন তথ্য নেই৷
ঐসব মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মহিলা কমিশন মহিলা নির্যাতন বা যৌন নির্যাতনের চেষ্টার ঘটনাগুলিতে সহজে খোলস ছেড়ে ঘটনাস্থলে আসেন না৷ এরাও অপেক্ষায় থাকেন শিশু, যুবতী, গৃহবধূরা যদি ধর্ষণের শিকার হল শতভাগ তারপরই পরিস্থিতি বুঝে ম্যাডামদের পদধূলি পড়ে ঘটনাস্থলে৷ গত রবিবার যে শিশুটি তার কাকার হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় আশারাম বাড়িতে ঐ শিশুটিকে একবার দেখার জন্যও ম্যাডামদের হৃদয়ে কোন অনুভূতিই জন্মেনি৷ আজ ঐ ধৃত কারা লিটন দাসকে আদালতে তোলা হলে আদালত লিটনকে চৌদ্দ দিনের জন্য জেল হাজতে পাঠায়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *