নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ মে৷৷ রাজ্যের আর্থ সামাজিক অবস্থা দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের তুলনায় অনেক ভাল৷ সেই যুক্তিতেই কেন্দ্রীয় সরকার চলতি বছরে রেগায় শ্রমদিবস কমিয়ে দিয়েছে বলে গ্রামোন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে৷ তবে, আগামী সেপ্ঢেম্বর মাসে সংশোধিত বাজেটে পুনরায় রাজ্যের জন্য শ্রমদিবস বাড়ানোর জন্য বিবেচনা করে দেখা হবে বলেও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক আশ্বাস দিয়েছে৷ এদিকে, চলতি বছরে প্রথম কিস্তি অনুযায়ী ষাট কোটি টাকা ইতিমধ্যেই মঞ্জুর করা হয়েছে রাজ্যের জন্য৷ কিন্তু, ত্রিপুরার সাংসদরা রেগায় এখন পর্যন্ত রাজ্যের জন্য অর্থ মঞ্জুর করা হয়নি এবং শ্রমদিবস বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে যে দরবার করেছেন তা নিয়ে অবাক রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী৷ সূত্রের খবর,রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ত্রিপুরার সাংসদদের নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে রীতিমতো হতবাক৷ সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার রেগা প্রকল্পে শ্রমদিবস বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে শর্ত রেখেছে, যে সমস্ত রাজ্যে ভূমিদাস, মেথর কিংবা আদিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অধিক থাকবে সেই রাজ্যগুলিকেই বিবেচনা করা হবে৷ এরাজ্যে এর কোনটাই নেই৷ ফলে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক মনে করছে যেহেতু রাজ্যের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন হয়েছে তাই রেগায় শ্রমদিবস বৃদ্ধির আপাতত কোন প্রয়োজন নেই৷ সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার আর্থ সামাজিক বর্ণ জনগণনা ২০১১-১২ অনুসারে রেগায় অর্থ বরাদ্দ এবং শ্রমদিবসের বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে রেখেছে৷ রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি মোতাবেক মানুষের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন ঘটেছে তা সম্প্রতি বাজেট অধিবেশনেও বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন ও বিধায়ক রতন লাল নাথের তারকা চিহ্ণ বিহীন প্রশ্ণের উত্তরে পরিকল্পনা দপ্তরের মন্ত্রী জানিয়েছিলেন৷ তাঁর দেওয়া তথ্যে ২০১৩-১৪ সালে মথাপিছু আয় যেখানে ৬১ হাজার ৫৭০ টাকা ছিল তা ২০১৪-১৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৬৬৬ টাকা৷
সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে গত বছর ৮৮ শ্রমদিবস ধরে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল৷ এবছর ৮০ শ্রমদিবস ধরে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তবে বরাদ্দ অর্থে কাটছাঁট হয়নি তা সম্প্রতি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন৷ গত ২৩ এপ্রিল সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন রেগায় চলতি বছরে কেন্দ্রীয় শেয়ারে ১৩০০ কোটি টাকা এবং রাজ্যের শেয়ারে এর দশ শতাংশ অর্থাৎ ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে৷ তাতে মোট ১৪৩০ কোটি টাকা এমজিএন রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে রাজ্যের জন্য৷ গত অর্থ বছরেও রাজ্য ১৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল৷ সূত্রের দাবি, শ্রমদিবস বৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে দাবী জানানো হয়েছে৷ আগামী সেপ্ঢেম্বরে সংশোধিত বাজেটে তা ভেবে দেখা হবে বলেও আশ্বাস মিলেছে৷ এদিকে, সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে চলতি অর্থ বছরে চল্লিশ কোটি টাকা রেগার মজুরী বাবাদ এবং কুড়ি কোটি টাকা উপাদান খাতে পাওয়া গিয়েছে৷ কিন্তু, রেগার শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি রাজ্যের প্রত্যাশা মতো করেনি কেন্দ্রীয় সরকার৷ যেখানে ২৭২ টাকা মজুরীর দাবী জানানো হয়েছিল, সেখানে শ্রমিকদের মজুরী চলতি অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক মঞ্জুর করেছে ১৭২ টাকা৷
কিন্তু, ত্রিপুরার সাংসদরা সংশোধিত বাজেটে রাজ্যের দাবী খারিজ হওয়ার আগেই শ্রমদিবস বৃদ্ধি এবং রেগায় চলতি অর্থ বছরে কোন অর্থ মিলেনি বলে যে দরবার শুরু করেছেন তাতে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের দেওয়া তথ্যের সাথে সাযুজ্য খঁুজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ সূত্রের দেওয়া তথ্যে স্পষ্ট চলতি অর্থ বছরে রেগা প্রকল্পে ইতিমধ্যেই প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছে রাজ্য সরকার৷ এমন কি শ্রমদিবস বৃদ্ধি নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীও৷ সূত্রের খবর, আগামী সংশোধিত বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমদিবস বৃদ্ধির রাজ্যের দাবী মেনে নেবে বলে নিশ্চিত তিনি৷ যে যুক্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের জন্য রেগায় শ্রমদিবস বাড়ানোর বদলে কমিয়ে দিয়েছে তাতে খুব একটা বিচলিত নন তিনি৷ সূত্রের খবর, এনিয়ে ঘনিষ্ট মহলে তিনি বলেছেন, রাজ্যে যেহেতু মানুষের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন ঘটেছে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অযৌক্তিকভাবে রাজ্যের জন্য রেগায় শ্রমদিবস কমায়নি৷ এদিকে, রাজ্যে কিছু কিছু জায়গায় চলতি বছরে রেগা প্রকল্পে কাজ বন্ধ ছিল৷ তা শুরু হয়ে গিয়েছে৷ সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে, ছাওমনু, ডম্বুরনগর ইত্যাদি স্থানে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কাজ বন্ধ ছিল, তা শুরু হয়ে গিয়েছে৷
2016-05-14