BRAKING NEWS

সুশাসনের দায়িত্ব

Civil Service Dayইংরেজ ভারত ছাড়িলেও তাঁহাদের প্রশাসনিক বিভিন্ন ধারা, নিয়ম রাখিয়া গিয়াছে৷ যাহা গণতান্ত্রিক ভারতের শাসন কাঠামোয় আজও অনেক বেশী জাঁকাইয়া আছে৷ এই ধারা, প্রশাসনিক নিয়ম নীতি ইত্যাদির হাত হইতে যেন মুক্তি নাই৷ কোনও দেশের শাসন প্রণালী ছাড়া চলিতে পারে না৷ কিভাবে প্রশাসনিক কাজ চলিবে তাহার সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকিতে হইবে৷ যেকোনও গণতান্ত্রিক দেশে প্রশাসনিক নিয়ম বিধি বা প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সিভিল সার্ভিস অফিসাররা৷ তাঁহারাই প্রকৃত পক্ষে কোনও সরকারের চালিকা শক্তি৷ বৃহস্পতিবার সারা দেশের সাথে ত্রিপুরাতেও সিভিল সার্ভিস দিবসটি পালিত হইয়াছে৷ আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে এইদিনের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন টিসিএস, টিপিএস, আইপিএস ও আইএএস অফিসাররা৷ এই দিনের আলোচন া সভায় সিভিল সার্ভিস দিবসটির তাৎপর্য্য বিশ্লেষণ করেন বিভিন্ন বক্তা৷ সুশাসন আনিবার লক্ষ্যে এই অফিসারদের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি দক্ষতার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া আলোচনায় প্রাধান্য পাইয়াছে৷ সিভিল সার্ভিস দিবস সারা দেশের সঙ্গে ত্রিপুরায় পালিত হওয়াও এই বিষয়ে আলোচনা ইত্যাদির মধ্য হইতে যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য মিলিয়াছে তাহাকে কতখানি মর্যাদা দেওয়া হইবে তাহাই প্রশ্ণ৷
গণতান্ত্রিক দেশে সিভিল সার্ভিস অফিসারদের মধ্যে ইদ্যানিং জো হুজুর মার্কাদের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়৷ এই অফিসারদের সততা, দক্ষতা বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্ণের মুখে দাঁড়াইয়া গিয়াছে৷ এই সিভিল সার্ভিস অফিসারদের মধ্যে অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের অনুগত হইয়া পড়েন৷ গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তগুলি রূপায়নের দায়িত্বই বর্তায় এই সিভিল সার্ভিসদের উপর৷ জন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকারে অংশ নেওয়ার পর প্রশাসনিক ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল না থাকিলেও সমস্যা হয় না৷ সেক্ষেত্রে সিভিল সার্ভিস অফিসাররাই প্রশাসনিক নিয়ম নীতির মধ্যে কর্ম সম্পাদন করেন৷ কিন্তু লক্ষ্য করিবার বিষয় এইসব সিভিল সার্ভিস অফিসাররা অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভুত্বের কাছে নতজানু হইয়া পড়েন৷ এইসব অফিসারদের একাংশ দূর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হইয়া প্রশাসনের স্বচ্ছতাকে বিনষ্ট করেন৷ সেখানেই সুশাসনের ইন্তেকাল ঘটে৷ গণতন্ত্রে প্রশাসনিক স্তরে প্রজানুরঞ্জনকেই প্রাধান্য দেওয়া হইয়া থাকে৷ দলীয় রাজনীতির যুপকাষ্টে এই প্রজানুরঞ্জনের তাগিদ বলি প্রাপ্ত হয়৷ তখন দলীয় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সরকারী দাক্ষিণ্য ইত্যাদিই প্রাধান্য পায়৷ সিভিল সার্ভিস অফিসাররা এক্ষেত্রে নিরুপায় হইয়া পড়েন৷ আমাদের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনই যে, দলীয়করণের ঝোঁককে রোখা যায় না৷ আর এজন্যই, সত্যিকারের গণতন্ত্রের যে পরিবেশ পরিস্থিতি হইবার কথা তাহা বাধাপ্রাপ্ত হয়৷ দলীয় অনুশাসনই গ্রাস করে কর্তব্যে নিয়োজিত সিভিল সার্ভিস অফিসারদের৷ এইভাবে প্রশাসনে দলীয় হস্তক্ষেপ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যাহার বেড়াজাল ছিন্ন করিতে পারে না সাধারণ মানুষ৷ এইক্ষেত্রেই গণতন্ত্রের গৌরব বিপন্ন হইবার সম্ভাবনা বাড়ে৷ গণতন্ত্রের প্রসার, তাহার সঠিক অবস্থায় নিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে দায় দায়িত্ব সরকারী অফিসাররা অস্বীকার করিতে পারেন না৷ তাঁহারাও তো দায়বদ্ধ৷
গণতন্ত্রের ইহাও অনেক বেশী দূর্ভাগ্যের যে, সিভিল সার্ভিস অফিসারদের অনেকেই কোনও রাখ ঢাক না রাখিয়াই দলীয় রাজনীতির মাঝেই নিজেদের সমর্পিত করেন৷ ইহাতে প্রকৃত অর্থে অফিসাররা যে অঙ্গিকার নিয়া এই সার্ভিসে যুক্ত হইয়াছেন তাহাই বিপন্ন হইতেছে৷ ত্রিপুরায় সিভিল সার্ভিস দিবসকে পালনের মধ্য দিয়া যে অঙ্গিকার উঠিয়া আসিয়াছে তাহাকে মূল্য দিতে না পারিলে মানুষ কোথায় দাঁড়াইবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *