BRAKING NEWS

আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে সংবাদ প্রেরক নিয়োগ নিয়ে ঘোটালার গুরুতর অভিযোগ

PENনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/খোয়াই, ৬ এপ্রিল৷৷ দূরদর্শনের সংবাদ বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ অভিযোগ উঠেছে যে একটি কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল এই কেন্দ্রকে ঘিরে রেখেছে৷ সংবাদ বিভাগের লোক নিয়োগের ক্ষেত্রেও পক্ষপাতিত্ব৷ রাজনৈতিক প্রভাব ইত্যাদির মাধ্যমে আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রটি কার্যত একটি স্বার্থান্বেষী চক্রের কামধেনুতে পরিণত হয়েছে৷ শুধু সংবাদ বিভাগ নয়, অন্যান্য বিভাগেও চলছে মুখ চিনে মুগের ডালের কান্ড৷ প্রোগ্রাম পাইয়ে দেওয়ার নামেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে৷ যেহেতু এ রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতাসীন সেহেতু এই রাজনৈতিক প্রভাব দূরদর্শন কেন্দ্রকে নানাভাবে পরিচালিত করার অভিযোগও উঠেছে৷ বার্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক এখন নিজের বদলি ইত্যাদি রুখতেই রীতিমত ব্যতিব্যস্ত৷ অনেক ধরাধরি করে আগরতলা কেন্দ্রে যোগ দেওয়ার পর তিনি একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের অঙ্গুলী হেলনে চলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷
এদিকে, আগরতলা দূরদর্শনে জেলাভিত্তিক সংবাদ প্রেরক চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷ সম্প্রতি আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে জেলাভিত্তিক সংবাদ প্রেরক চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়৷ সে মোতাবেক গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই নিয়োগ সংক্রান্ত বিবৃতি সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়৷ তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, আগ্রহী প্রার্থীরা অফেরত যোগ্য এক হাজার টাকার ড্রাফট জমা দিয়ে উক্ত পদের জন্য আবেদন জানাতে৷ অভিযোগ, উক্ত পদের জন্য যারা আবেদন করেছিলেন তাদের অনেককেই বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে দূরদর্শন কর্তৃপক্ষ ইন্টারভিউয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানাননি৷ দূরদর্শন কর্তৃপক্ষ এনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের চার চাকা বিশিষ্ট গাড়ি এবং এক্সডি-ক্যাম ক্যামেরা থাকা বাধ্যতামূলক বলে প্রকাশিত বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন৷ অভিযোগ উঠেছে যারা এই শর্তে আবেদন করেছিলেন তাদের সিংহভাগ আবেদনকারীরই চার চাকা বিশিষ্ট গাড়ি নেই৷ অথচ তারা গত চার এপ্রিল দূরদর্শন কেন্দ্রে ইন্টারভিউর আমন্ত্রণ পেয়েছেন৷ খোয়াই জেলা থেকে একাধিক আবেদনকারী উক্ত চুক্তি ভিত্তিক সংবাদ প্রেরকের পদে আবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু ইন্টারভিউর দিন শুধুমাত্র একজনকে ছাড়া আর কাউকেই আমন্ত্রণ করা হয়নি বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে৷ কোন জেলা চুক্তিভিত্তিক সংবাদ প্রেরক হিসেবে কাদের নিয়োগ করা হয়েছে সে সম্পর্কিত তালিকা এখনো দূরদর্শন কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি৷
অভিযোগ উঠেছে, খোয়াইয়ের জনৈক প্রাক্তন কলমচি গত ৩ মাস আগে থেকেই প্রচার করে যাচ্ছেন আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের খোয়াই জেলার সাংবাদিক তিনি৷ এমনকি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং সংস্থার অনুষ্ঠানে তিনি দামি ক্যামেরা হাতে নিয়ে নিজেকে আগরতলার দূরদর্শন কেন্দ্রের পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ৷ আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের বার্তা সম্পাদকের সাথেও তাঁর মধুর সম্পর্ক রয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে৷ জানা গেছে, মাস দুয়েক আগে তিনি ক্যামেরাও ক্রয় করেছিলেন৷ এরই ভিত্তিতে ইন্টারভিউ আমন্ত্রণ থেকে বঞ্চিতরা অভিযোগ তুলে বলেন, দূরদর্শনের সংবাদ বিভাগ থেকে জেলাভিত্তিক সংবাদ প্রেরক নিয়োগের ইন্টারভিউতে খোয়াই জেলা থেকে শুধুমাত্র তাঁকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ অগ্রিম ক্যামেরা ক্রয় করা সে সঙ্গে দূরদর্শনের সাংবাদিক না হয়েও এর তকমা জড়িয়ে বেড়ানো এই বিষয়গুলিতে ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হচ্ছে অন্য আবেদনকারীদের মধ্যে৷ বঞ্চিত আবেদনকারীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অন্যের গাড়ি তিন বছরের জন্য ভাড়া নেওয়ার চুক্তির কাগজ জমা দিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছেন অনেকেই৷ ফলে, খোয়াই জেলা থেকে আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে সংবাদ বিভাগের চুক্তি ভিত্তি সংবাদ প্রেরক হিসেবে যদি ঐ প্রাক্তন কলমচি নির্বাচিত হন তাহলেই প্রমাণিত হয়ে যাবে বাছাই প্রক্রিয়ায় কতটা ঘোটালা হয়েছে৷
এদিকে, ত্রিপুরায় দূরদর্শন কেন্দ্রের মান দিনে দিনেই যে নিম্নমুখী হচ্ছে তাও রাজ্য বিধানসভায় উত্থাপিত হয়েছে৷ ত্রিপুরায় দূরদর্শন কেন্দ্রের প্রচার কর্মসূচীর মানোন্নয়ন সম্পর্কিত একটি দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাব দিয়েছেন তথ্য মন্ত্রী৷ তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তরের মাননীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকার এক চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর নিকট প্রেরণ করে এই রাজ্যে তরুণ আগ্রহী চিত্র নির্মাতা ও কলাকুশলীদের উৎসাহ দানের জন্য রাজ্য সরকারের আগ্রহ থাকলে কেন্দ্রীয় সরকার টেলিভিশন ও ফিল্ম তৈরির প্রতিষ্টান গড়তে পারে৷ এবিষয়ে তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের মন্ত্রী ৫ই আগস্ট ২০১৪ সালে এক পত্রের মাধ্যমে তৎকালীন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজ্য সরকারের আগ্রহের কথা জানানো হয় এবং প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়৷ এর জন্য রাজ্য সরকার ত্রিপুরা হাইকোর্ট সংলগ্ণ স্থানে ৩৪৩০ একর ভূমিরও ব্যবস্থা করেছে৷ শুধু তাই নয় সে পত্রে দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলার সম্প্রচারে এসটিবিএস যুক্ত করার অনুরোধ করা হয়৷ যাতে সারা রাজ্যে অতি সহজেই দূরদর্শনের অনুষ্ঠান সমূহ সম্প্রচার সম্ভব হয়৷ এছাড়াও আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে স্থানীয় অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের জন্য ২৪x ৭ ট্রান্সমিটার চালু করার জন্য অনুরোধ করা হয়৷
দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাবে তথ্য মন্ত্রী আরো জানান, রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে গত নভেম্বর ২০১৩ সালে প্রসার ভারতীর সিইও জওহর সরকার এ রাজ্যে এসেছিলেন এবং রাজ্য সরকারের পক্ষে শুধুমাত্র দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলা ছাড়াও আকাশ বাণী কেন্দ্র সমূহেরও কি করে সম্প্রচার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখা হয়েছিল এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় দূরদর্শন ও আকাশবাণী কেন্দ্র সমূহের সম্প্রচারে মান উন্নয়নে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল৷
এছাড়াও এ রাজ্যের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে দূরদর্শনের সম্প্রচারের মান উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে গত ২০১২ সালে তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের তৎকালীন সচিব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন৷
এদিন, দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাবে তথ্যমন্ত্রী আরো জানান, রাজ্য সরকারের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও দূরদর্শন কেন্দ্রের সম্প্রচারের মান এখনো তেমন বৃদ্ধি হয়নি৷ এখনো প্রতিদিন ৮ ঘন্টা সম্প্রচার করে থাকে৷ ও বি ভেনার এর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ট্রান্সমিটারের শক্তি এখনো বৃদ্ধি হয়নি, রিলে কেন্দ্রগুলির শক্তি এখনো পূর্বাবস্থা বর্তমান৷ রাজ্যে দূরদর্শন কেন্দ্রের সম্প্রচারের মান উন্নয়ন সহ সম্প্রচারের সময় সীমাবৃদ্ধি, ও বি ভেনারের ব্যবস্থা করা সমূহ সুযোগ সম্প্রসারণে দপ্তরের পক্ষে তার প্রয়াস আগামীদিনেও জারি থাকবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *