BRAKING NEWS

ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে হাইকোর্টের ভৎর্সনা, সহকারী অধ্যাপক পদে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল

Highcourt of Tripura Imageনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ ফেব্রুয়ারি৷৷ সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মকে ঘিরে উচ্চ আদালত ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে (টিপিএসসি) ভৎর্সনা করেছে৷ পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল বলে রায় দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, আগামী তিনমাসের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে বলে কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট অব ত্রিপুরার মুখ্য বিচারপতির নেতৃত্বের ডিভিশন বেঞ্চ৷ সেক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার এবং টিপিএসসিকে নির্দিষ্ট গাইড লাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷
শুক্রবার উচ্চ আদালতের মুখ্যবিচারপতি দীপক কুমার গুপ্তা এবং বিচারপতি এস সি দাসের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয়৷ এদিন, উচ্চ আদালত ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ণ তুলেন৷ শুধু তাই নয়, কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে উচ্চ আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছে৷ বেশি নম্বর পাওয়া প্রার্থীর বদলে এমন অনেক কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাছাই করেছে কমিশন৷ এবিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে উচ্চ আদালত বলেছে, টিপিএসসিকে স্বচ্ছতা মেনে কাজ করতে হবে৷ আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, ইউজিসির নিয়মের বাইরে নিয়োগ করা চলবে না৷
এই মামলায় আবেদনকারীদের মধ্যে জ্যাকপ হালাম এবং জওহরলাল দেববর্মা দুজনই তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত এবং যোগ্য প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাদের অযোগ্য মনে করেছে কমিশন৷ এই দুই প্রার্থীর যে প্রাপ্ত নম্বর রয়েছে তার চাইতে কম নম্বর প্রাপ্ত প্রার্থীকে ভাল গ্রেড দেওয়া হয়েছে৷ আদালতের প্রশ্ণ শিক্ষাগত যোগ্যতায় মেধার দিক দিয়ে বিচার করলে তারা চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য নন কেন? উচ্চ আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে, জ্যাকপ হালামের প্রাপ্ত নম্বর মাধ্যমিকে ৪০৩৭ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯শতাংশ, মাদ্রাস ইউনির্ভাসিটি থেকে বিএ ৭৪ শতাংশ, ফিলোসফিতে এম এ ৭০৩৭ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ইউজিসি থেকে ফিলোসফিতে এনইটি এবং ২০১২ সালে এম ফিল করেছেন৷ অথচ তাকে সি গ্রেড দেওয়া হয়েছে৷ আবার দেখা গেছে, জনৈক প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর মাধ্যমিকে ৪৫০৫ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৭০৪ শতাংশ, বিএ ৫৭৩৩ শতাংশ, এম এ ফিলোসফি ৫৮২৫ শতাংশ এবং তিনি বি এড এবং এম এড করেছেন৷ তাকে বিপ্লাস থ্রি গ্রেড দেওয়া হয়েছে৷ এই তথ্য উল্লেখ করেই উচ্চ আদালত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশন স্বচ্ছতা বজায় রাখেনি বলে ভৎর্সনা করেছে৷
আদালতের বক্তব্য, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক সংরক্ষণ রাখতে হবে৷ ইন্টারভিউ বোর্ডে এসটি এবং এসসি অধিকর্তাদের রাখতে হবে৷ শুধু তাই নয়, ইউজিসির গাইড লাইন মেনে মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে ২০ নম্বর রাখার জন্য বলেছে উচ্চ আদালত৷
এদিন, রায় ঘোষণার পর আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী অরুণ কান্তি ভৌমিক জানিয়েছেন, উচ্চ আদালত সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল বলে ঘোষণা দিয়েছে৷ তিনি জানান, উচ্চ আদালত টিপিএসসিকে নির্দেশ দিয়েছে বিষয়ভিত্তিক এবং মার্কসের উপর ভিত্তি করে নিয়োগ করতে হবে৷ তাতে এই রায়ে কমিশনের সুপারিশে ১১৭ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে গেছে বলে জানান তিনি৷ শ্রী ভৌমিক জানান, ১৫০টি পদের মধ্যে এসটি ক্যাটাগরিতে ১২৫ জন এবং এসসি ক্যাটাগরিতে ২৫ জন রয়েছে৷ কিন্তু টিপিএসসি ১৫০টি পদের মধ্যে মাত্র ১১৭ জনকে বাছাই করে তালিকা পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে৷ যেহেতু আদালতের রায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল হয়ে গেছে, ফলে নতুন করে পদক্ষেপ নেবে কমিশন৷ তাতে যারা আগে দরখাস্ত করেছিলেন তাদের মধ্যে থেকেই কমিশনকে বাছাই করতে হবে৷ নতুন করে দরখাস্ত গ্রহণ করা হবে না৷ এদিকে, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক এসটি ক্যাটাগরিতে পদ খালি থাকলে তা এসসি ক্যাটাগরি থেকে নিয়ে পূরণ করা যাবে৷ একইভাবে এসসি ক্যাটাগরিতে পদ খালি থাকলে তা এসটি ক্যাটাগরি থেকে নিয়ে পূরণ করা যাবে৷ এসটি এবং এসসি উভয় ক্যাটাগরিতে পদ খালি থাকে তাহলে সাধারণ ক্যাটাগরি থেকে নিয়ে পূরণ করা যাবে৷ তবে, চাইলে কোন পদ অসংরক্ষিত করতে পারবে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে ইউজিসির গাইড লাইন মেনে চলতে হবে৷
উল্লেখ্য, রাজ্যের কলেজগুলিতে ৩০টি বিভিন্ন বিষয়ে মোট ১৫০ জন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ সে মোতাবেক টিপিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো হয়৷ টিপিএসসি রাজ্য সরকারকে ১১৭ জন প্রার্থী চয়ন করে তালিকা পাঠায়৷ কিন্তু ঐ তালিকায় অনেক যোগ্য প্রার্থী সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ উঠে৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে মামলা হয়৷ গত চার ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি শেষ হয়৷ আজ উচ্চ আদালত রায় ঘোষণা করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *