সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরা নেশা কারবারীদের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে৷ এই রাজ্যের তিন দিক দিয়া বাংলাদেশ ঘিরিয়া রহিয়াছে৷ অপর একদিক পার্বত্য ঘেরা৷ এই রাজ্যের পশ্চাদপদতাকে পঁুজি করিয়া সীমান্ত এলাকাকে নেশা সামগ্রী পাচারের অন্যতম ভূমিতে পরিণত করিয়াছে৷ শুধু তাই নয়, গাঁজা চাষের স্বর্গভূমিতেও পরিণত হইয়াছে ত্রিপুরা৷ এখানকার উঁচু নীচু টিলাভূমিকে গাঁজা চাষের প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবে বাছিয়া নিয়াছে একাংশের গাঁজা মাফিয়ারা৷ শুধু তাহাই নহে, বহিঃরাজ্য হইতে কোরেক্স, ফেন্সিডিল নেশাজাতীয়, ট্যাবলেট সংগ্রহ করিয়া সীমান্ত পথে বাংলাদেশে পাচার করিতেছে৷ এই নেশাজাতীয় সামগ্রীগুলি যে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের যুব সমাজকেই ধবংস করিতেছে তাহ মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নহে৷ ত্রিপুরার যুবসমাজও নেশা সাগরে ডুবিয়া ধবংস হইতেছে৷ এই ভয়ঙ্কর প্রবণতা ভবিষ্যত প্রজন্মকে মৃত্যু মুখে নিশ্চিতভাবে ঠেলিয়া দিবে৷ সেই কারণেই ত্রিপুরা রাজ্যকে এই অপরাধ প্রবনতা হইতে মুক্ত করিবার জন্য একদিকে যেমন প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে, ঠিক তেমনি জনমানসকেও সচেতন হইতে হইবে৷ শুধু মদ কিংবা গাঁজাই নহে, ধূমপানও বিপজ্জনক নেশা হিসেবে চিহ্ণিত হইয়াছে৷ এই বিষয়ে রাষ্ট্রনায়কদেরও কঠোর হইবার সময় আসিয়াছে৷ জানিয়া শুনিয়া বিষ পান করিবার ঘটনা নতুন কিছুই নহে৷
যুগ যুগ ধরিয়া বিষ পানের প্রতিযোগিতা চলিয়া আসিতেছে৷ এই বিষক্রিয়ায় অকালে কত মানুষের যে প্রাণ বলি হইয়াছে তাহা বলিয়া শেষ করিবার নহে৷ তবু, বিষ পান বা বিষ খাওয়া বন্ধ হইতেছে না৷ মাঝে মাঝেই কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক নড়িয়া চড়িয়া বসিতে চায় এবং বিষ পান প্রতিযোগিতা বন্ধে নানা পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে৷ যেমন সিগারেট ও তামাক সংক্রান্ত জিনিসের গায়ে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ লেখার আদেশ বা আইন কার্য্যকর করা হয়৷ তামাকের বিভিন্ন নেশা সামগ্রীতে তো দেশ ছাইয়া গিয়াছে৷ আজকের প্রজন্মের বহু যুবক এই নেশার কবলে বন্দী৷ কিভাবে এই সব বেআইনী নেশা সামগ্রীতে দেশ ছাইয়া গিয়াছে তাহা কি সরকার জানে না? নেশার বিরুদ্ধে নিয়ম রক্ষার প্রচার চলিতেছে দেশব্যাপী৷ প্রকাশ্যে ধুমপানের বিরুদ্ধে যে আইন চালু আছে তাহাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট দেখাইয়া তো হরদম নেশা কারবার সর্বগ্রাসী হইয়া উঠিতেছে৷ জনমনে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং ধুমপানের বিরুদ্ধে, জনমতের কারণেই সিগারেট ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ও আঘাত আসিয়াছে৷ কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বিড়ি ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো লক্ষ্যনীয়৷ প্রকাশ্যে ধুমপায়ীরা বিড়ি টানিতেছেন৷ দোকানে, হাটে বাজারে, রিকসা শ্রমিক ও অন্যান্যরা দিব্যি বিড়ির সুখটান দিয়া চলিয়াছে৷ সমাজের গরীব অংশের মানুষ, যাহারা এখনও শিক্ষার আলো হইতে অনেক দূরে তাহাদের বড় অংশই তো বিভিন্ন নেশার কবলে তলাইয়া যাইতেছে৷ বিষ নেশার কারণে, বিভিন্ন রোগ সুখে আক্রান্ত হইয়া অকালে প্রাণ হারাইতেছে৷ অথচ রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার যেন নেশার বিষে আত্মসমর্পণ করিয়া চলিয়াছে৷ এই আত্মসমর্পণই সমাজকে পঙ্গু করিয়া দিতেছে, যুব শক্তির জীবনী শক্তি দূর্বল করিয়া দিতেছে, অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলিয়া দিতেছে৷ এই অবস্থার হাত হইতে যে, সহসা মুক্তি নাই, বরং গোটা জাতির সামনে যে ভয়ানক সংকটই নিয়া আসিয়াছে সে বিষয়ে তো কোনও সন্দেহ নাই৷
মূল প্রশ্ণ হইল, যে নেশা সামগ্রী মানুষের জীবন তছনছ করিয়া দেয়, তরুণ তরুণীদের জীবনে অন্ধকার কায়েম হয়, অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলিয়া দেয়৷ সেই বিষবৃক্ষের লালন পালন তো সরকারী সমর্থনেই হয়৷ যদি এক্ষেত্রে সরকার দ্বিচারিতায় ভূগিতেন না, যদি তামাক বর্জনের জোরদার দাবী তোলা হইত, যদি এগুলি একেবারেই নিষিদ্ধ ঘোষিত হইত তাহা হইলে এইভাবে সমাজ সরকারকে অন্ধকার গ্রাস করিত না৷ কেন্দ্রীয় সরকারকে ঝাড়িয়া কাশিতে হইবে৷ তামাক জাতীয় মরণ নেশার হাত হইতে যদি বর্তমান প্রজন্মকে রক্ষা করাই লক্ষ্য হইত তাহা হইলে কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও বেশী সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন ছিল৷ কিন্তু হইাই স্পষ্ট হইতেছে যে, তামাকজাত দ্রব্য নিষিদ্ধ না করিয়া জন সচেতনতার উপর গুরুত্ব দেওয়ার পথেই আগাইতে চায় কেন্দ্র৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ও রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে দ্বিচারিতার ঘটনা সমাজ সচেতন মানুষকে বিস্মিত করিয়াছে৷ এইভাবে বিস্ময়ের ঘোরের মাঝেই দেশ জুড়িয়া বিষ পানের প্রতিযোগিতা চলিবে, লক্ষ লক্ষ মানুষ নেশার ছোবলে অকালে প্রাণ হারাইবে৷ তবু, এমন দুর্বিষহ অবস্থা সত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার তামাককে তালাক দিবেন না৷ বরং তামাককে আরও বেশী মারমুখী হইয়া প্রাণ সংহারে মত্ত করিবে৷ এই ভবিতব্যই তো দেশবাসীকে মানিয়া নিতে হইতেছে৷ কিন্তু, এর চাইতে দূর্ভাগ্যের আর কী হইতে পারে?