নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারি৷৷ কংগ্রেসের সাথে জোটের বদলে সংগঠন মজবুত করার জন্য আলিমুদ্দিনকে পরামর্শ দিয়েছেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সাথে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ ফলে, তৃণমূল স্তর থেকে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে জোটের প্রয়োজনীয়তা পড়বে না বলে বঙ্গের সিপিএম নেতৃত্বদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন তিনি৷ তবে, আজ সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকে অধিকাংশ সদস্যই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করেন৷ বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্য্যকান্ত মিশ্র বলেন, কংগ্রেস বার্তা দিয়েছে৷ এই সুযোগ হাতছাড়া করলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না৷ ফলে, কংগ্রেসের সাথে জোটের বিরুদ্ধে মানিক সরকারের প্রস্তাব কার্যত বাতিল হয়ে যায়৷
সূত্রের খবর, শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম রাজ্য কমিটির আহ্বানে বৈঠকে যোগ দেন মানিকবাবু৷ ঐ বৈঠকে বঙ্গ নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত৷ মূলত, কংগ্রেসের সাথে জোটের প্রশ্ণে ত্রিপুরার মতামত জানতেই বৈঠকে মানিক সরকারকে আহ্বান জানানো হয়৷ তাতে কংগ্রেসের সাথে জোটের প্রশ্ণে বিরোধিতায় সরব হন মানিকবাবু৷ সূত্র অনুসারে জানা গেছে, এদিন তিনি ১৪ পাতার প্রস্তাব পেশ করেন৷ তাতে পশ্চিমবঙ্গে দলীয় নেতৃত্বদের উদাসীনতা নিয়ে সওয়াল করেছেন মানিকবাবু৷ তাঁর বক্তব্য, বঙ্গে সিপিএমের নেতৃত্বদের উদাসীনতা এবং একাংশ নেতার ভোগ বিলাসিতায় মেতে ওঠায় সংগঠন দুর্বল হয়ে ওঠেছে৷ তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সাথে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা এখন কংগ্রেসের সাথে জোট গঠনের তাগিদ সৃষ্টি করেছে৷ মানিকবাবুর দাবি, রাজ্যের সমস্যাগুলি আলিমুদ্দিনের নেতৃত্বরা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেননি৷ চিটফান্ড ইস্যুতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে চেপে ধরতে পারেনি দল৷ এমনকি তৃণমূলের কলঙ্কিত নেতাদের বিরুদ্ধেও বিশেষ কোন প্রচারাভিযান দেখা যায়নি৷
সূত্র অনুসারে আরো জানা গেছে, এদিন তিনি আলিমুদ্দিনের নেতৃত্বদের তৃণমূল স্তরে সংগঠন মজবুত করতে পরামর্শ দেন৷ পাশাপাশি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে তৃণমূলের কলঙ্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করার জন্য বলেন৷ শুধু তাই নয়, বিভাজনের রাজনীতি কাজে লাগানোর জন্য আলিমুদ্দিনের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন মানিকবাবু৷
তাঁর দাবি, সারা দেশেই কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ ফলে, তাদের সাথে জোট গঠনে বিশেষ কোন লাভ হবে না সিপিএমের৷ বরং তৃণমূল স্তরে সংগঠন মজবুত করতে পারলেই কংগ্রেসের হাত ধরার প্রয়োজনীয়তা পড়বে না৷ এদিন, মানিকবাবু আলিমুদ্দিনকে ত্রিপুরা মডেলের চিত্র তুলে ধরেন৷ রাজ্যে একটানা বামফ্রন্টের শাসন কিভাবে সম্ভব হয়েছে সেই সমীকরণ আলিমুদ্দিনকে নিতে পরামর্শ দেন তিনি৷
দলের এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আলিমুদ্দিন মানিক সরকারের প্রস্তাবে অনীহা প্রকাশ করেছে৷ আগামী ১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের সাথে জোট নিয়ে খসড়া রিপোর্ট জমা দেবেন পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতৃত্বরা৷ সেখানে জোট নিয়ে জোর সওয়ালও করবেন তাঁরা৷ কারণ, গতকাল পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে জোটের প্রশ্ণে বামেরা ঐকমত্য হয়েছেন৷ প্রস্তাব এলে কংগ্রেসের সাথেআলোচনায় রাজি হয়েছেন বামেরা৷ এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বের সাথে ক্রমাগত যোগযোগ রেখে চলেছেন৷ সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির বৈঠকের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক যাতে কেন্দ্রীয় কমিটিও জোটে সায় দেয় সেজন্য জোর চেষ্টা করছেন প্রদীপবাবু৷ এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বঙ্গের নেতাদের দিল্লিতে তলব করেছেন৷ জোটের বিষয়ে চুড়ান্ত ফয়সালা ঐদিনই হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন৷