ত্রিপুরার প্রতি কি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পাখীর চোখ করিয়াছে? আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দল কি সর্বশক্তি নিয়া ঝাপাইয়া পড়িবে? এমনই প্রশ্ণ উঠিবার পিছনে কারণ আছে৷ প্রায় মাসখানেক সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের পাঁচ পাঁচজন মন্ত্রী রাজ্য সফর করিলেন৷ তাঁহারা রাজ্যে সরকারী সফরে আসিতেছেন৷ রথ দেখা কলা বেচার মতো পার্টির কাজও সারিয়া নিতেছেন৷ দেশের মন্ত্রীরা প্রতিনিয়তই দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ন হন৷ একদিকে সরকারী কাজ, অন্যদিকে দলের কাজ৷ এই ক্ষেত্রে বিরূপ সমালোচনার সুযোগ নাই৷ এক্ষেত্রে সব দলেরই একই অবস্থা৷ কেন্দ্রের বেশীরভাগ মন্ত্রী রাজ্য সফর করিয়া রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তেমন মুখ খোলেন নাই৷ কিন্তু কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জানাইয়া যাইতেছেন৷ বাম সরকারও এইসব অভিযোগ সম্পর্কে তেমন কোনও বক্তব্য এই নিবন্ধ লেখার সময় পর্য্যন্ত জানা যায় নাই৷ রাজ্যে পিএমইজিপি প্রকল্পে বেকারদের ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলির তালবাহানার বিরুদ্ধে শুধু সোচ্চারই হন নাই কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী গিরিরাজ রীতিমতো ধমকও দিতে কসুর করেন নাই৷ রাজ্যে জিবি হাসপাতালে গিয়া এক ধর্ষিতা উপজাতি কিশোরীকে দেখিয়া গিরিরাজ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হইয়াছে বলিয়া মন্তব্য করেন৷ রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্ব চলিতেছে বলিয়া মন্তব্য করিয়া কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী গিরিরাজ কি বুঝাইয়া দিতে চাহিতেছেন যে তাঁহারা আর দর্শক হইয়া থাকিবেন না৷
সিপিএমের সঙ্গে জোটের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ কংগ্রেস নেতার সওয়ালে ত্রিপুরায় প্রাচীন এই দলের চরম সর্বনাশ যা হইবার হইয়া গিয়াছে৷ সাধারণ মানুষ ধরিয়াই নিয়াছেন যে, কংগ্রেসকে সিপিএমের বি টিম বলিয়া এতদিন যে অভিযোগ উঠিত, তাহা যে সত্যি তাহার প্রমাণ হাতে হাতে মিলিয়া গেল৷ পশ্চিমবঙ্গের বেশীরভাগ কংগ্রেস নেতাকে যাহারা তরমুজ কংগ্রেস বলিয়া অভিহিত করিতেন তাহাও ষোল আনা সঠিক, ইহাই প্রতিষ্ঠিত হইয়া গেল৷ এতদিন কংগ্রেস সিপিএমের ছিল গোপন অভিসার৷ এক সময় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করিয়াই রাজনীতির মাটি দখল করা সিপিএম পরবর্তীতে কংগ্রেসের প্রতি অনেক বেশী উদারতা প্রদর্শন করিয়াছে৷ কংগ্রেস সিপিএমের সখ্যতার বার্তা দিকে দিকে বিদ্যুৎ বেগে প্রচার হওয়ার কারণে বিশেষ করিয়া ত্রিপুরায় বিজেপির সামনে সুবর্ণ সুযোগ সমুপস্থিত হইয়াছে৷ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী গিরিরাজের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে যথেষ্ট তাৎপর্য্য রহিয়াছে বলিলে নিশ্চয়ই ভুল বলা হইবে না৷ রাজ্যে বিজেপিকে শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড় করাইতে যে সময় ও অধ্যবসায় ও নেতাদের ত্যাগের পরীক্ষা দিতে হয় তাহাই তো বড় কথা৷ রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে সংগঠনের বিস্তার অনেক বেশী কঠিন কাজ৷ প্রতিদিন মানুষের সঙ্গে থাকিয়া যে সিপিএম দল রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় সংগঠন গড়িয়া তুলিয়াছে সেখানে উপজাতি ভিত্তিক দল আইপিএফটি কিছুটা থাবা বসাইয়াছে৷ অন্য দলগুলি তো সামান্যতম দাঁতও বসাইতে পারে নাই৷ শহরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হুঙ্কার গ্রাম পাহাড়ে নিতে হইল সংগঠন চাই৷ ধর্ষিতা উপজাতি কিশোরীকে হাসপাতালে দেখিয়া গিরিরাজ যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিয়াছেন তাহাতে জনমনে ধারণা হইতে পারে রাজ্যে বিজেপির লক্ষ্য অনেক বড়৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত বিরোধী দলের মর্য্যাদায় আসীন হইবার স্বপ্ণ দেখিতে পারে৷
১৯৮৮ সালের সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি ছিল? প্রায় আঠাশ বছর আগে রাজ্যে কংগ্রেস যুব সমিতি জোট ক্ষমতায় বসিয়াছিল সিপিএম বা বামফ্রন্টকে হটাইয়া৷ তখন রাজীব গান্ধী স্বয়ং ত্রিপুরা জয়ের স্বপ্ণ দেখিয়াছিলেন৷ নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের সতেরজন মন্ত্রীকে রাজ্য সফরে পাঠাইয়াছিলেন৷ সৈনাপত্য করিয়াছিলেন কেন্দ্রের মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব৷ যাঁহাকে সিপিএম তখন সন্ত্রাস মোহন বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছিল৷ রাজ্যে উপদ্রুত আইন জারী করিয়া, উগ্রপন্থী দমনে মিলিটারী নামাইয়া রাজ্যে তখন ভোট হইয়াছিল৷ এত কিছুর পর কিভাবে কংগ্রেস যুব সমিতি ক্ষমতায় আরোহন করিয়াছিল তাহা তো কিছুই গোপন থাকে নাই৷ সেই অভিজ্ঞতা যেখানে ত্রিপুরার মানুষের রহিয়াছে সেখানে গিরিরাজের লক্ষ্য সম্পর্কে নানা প্রশ্ণ দেখা দিতেই পারে৷
2016-02-06