মহা ধুমধামে রাজ্য সরকার ককবরক দিবস পালন করিয়াছে৷ প্রতিবছরই ১৯ জানুয়ারী দিনটি ককবরক দিবস হিসাবে পালিত হয়৷ ১৯৭৯ সালে এই দিনটিতেই ককবরক ভাষাকে সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়াছে বামফ্রন্ট সরকার৷ এই স্বীকৃতির দিনকেই ককবরক দিবস হিসাবে সরকারী উদ্যোগে পালিত হয়৷ রাজ্য সরকারের উপজাতি গবেষণা, সংসৃকতি কেন্দ্র ও ককবরক এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তরের উদ্যোগে সেমিনার, কবি সম্মেলন ও ক্যুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এদিন৷ এই উপলক্ষে রাজধানী শহরে শোভাযাত্রাও হয়৷ এডিসির সদর দপ্তর খুমুলুঙে এবং রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ককবরক দিবস পালিত হয়৷ ককবরক ভাষায় লেখকদের সম্মানীত করা হয়৷ সোজা কথায়, এই দিনটি উদ্যাপনের ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগই মুখ্য৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে এই দিনটি সম্পর্কে তেমন আগ্রহ বা উৎসাহ নাই৷
ককবরক এরাজ্যের উপজাতিদের ভাষা৷ এই ভাষার স্বীকৃতির ৩৮ তম বছরেও একটি সর্বজন গ্রাহ্য হরফ ঠিক করা গেল না৷ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপজাতি অংশের মানুষই হরফ সম্পর্কে বড়বেশী অসহায় অবস্থায় আছে৷ সিপিএম বা বামফ্রন্ট এবং বাম সরকার ককবরকের জন্য বাংলা হরফই পছন্দ করিয়াছেন৷ রাজ্যে উপজাতিদের অবিসংবাদিত নেতা দশরথ দেবও বাংলা হরফের পক্ষেই সওয়াল করিয়াছেন৷ কিন্তু, অতি উপজাতি দরদী বলিয়া পরিচিত কিছু উপজাতি অংশের মানুষ ককবরকে রোমান হরফের দাবীতে অনঢ় আছেন৷ এই হরফ বিতর্কের কারণে ককবরক ভাষা অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার মতো স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পারিতেছেন না৷ এখনও যদি একটি সর্বজন গ্রাহ্য হরফ পাওয়া না যায় তাহা হইলে এই ভাষার কপালে দুর্ভোগ যে আছে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ এখনও সময় আছে, ককবরক ভাষার হরফ বিতর্কের অবসান হউক৷ একটা হরফকে তো মানিয়া নিতেই হইবে৷ এক্ষেত্রে নানা কূটচাল সর্বনাশের পথকে প্রশস্ত করিতেছে৷ ত্রিপুরার অধিকাংশ মানুষই বাংলা বুঝেন৷ উপজাতিদের বড় অংশ যেভাবে বাংলাকে বুঝেন, সেই কারণে ককবরকে বাংলা হরফই তো অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য হইবার কথা৷ ভাষার হরফ নিয়া দীর্ঘ রাজনীতি আমাদেরকে অপরাধ বোধে আচ্ছন্ন করিতে পারে৷ কারণ, এই বিতর্কই ককবরক ভাষাকে সাবলীল ও সমৃদ্ধির পথে কাঁটা হইয়া আছে৷ ভাষাকে সাবলীল ও শক্তিশালী করিতে হইলে এই মুহুর্তে হরফ বিতর্কের অবসান ঘটাইতে হইবে৷ প্রতিবছর লোক ককবরক দিবসের ভাষণ শিল্প কি কাজে আসে? এই ভাষার স্বীকৃতির চাইতে বড় কথা হইল সমৃদ্ধ ভাষা হিসাবে গড়িয়া তোলা৷ তখনই এই ককবরক দিবস পালনের সার্থকতা খঁুজিয়া পাওয়া যাইবে৷