BRAKING NEWS

কৌশলের দ্বিচারিতা

CONGRESS CPIMকংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়িবার তাগিদ বাড়িয়াছে সিপিএমে৷ পশ্চিমবঙ্গ হইতে তৃণমূল সরকারকে হঠাইতে কংগ্রেসের সখ্যতা ও জোট গড়িতে এক রকম আদা জল খাইয়া লাগিয়াছেন বুদ্ধদেব, সূর্য্যকান্ত মিশ্ররা৷ ভুলের কারণে ক্ষমতা হারাইবার পর এখন তাঁহাদের সম্বিত ফিরিয়াছে৷ যে সিঙ্গুরে চাষযোগ্য জমি টাটাদের কারখানার জন্য অধিগ্রহণ করিয়াছিল বুদ্ধবাবুর সরকার সেখানেই জমি দেবার আন্দোলন হইতে ক্ষমতার সিংহাসন দখল করে তৃণমূল৷ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়া অগ্ণিকন্যা মমতা যে ধনুর্ভঙ্গ পণ করিয়াছেন, সিপিএম হঠাইবেন বলিয়া তাহা তিনি রক্ষা করিতে পারিয়াছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ বামশাসনের অবসান ঘটাইয়া মমতা যে ইতিহাস রচনা করিয়াছেন তাহার তুলনা খোঁজা মুশকিল৷ বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতায় তৃণমূল কংগ্রেস একাই যেখানে ক্ষমতায় থাকিতে পারে বলিয়া কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিন্ন করাতে কোনও সংকট দেখা দেয় নাই৷ সবই কৌশলের খেলা৷ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার হইতে তৃণমূল সমর্থন তুলিয়া নেওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস তৃণমূলকে তালাক দিয়াছে৷ তৃণমূল যে কংগ্রেসকে নিয়া সিপিএমকে হঠাইয়াছে, সেই কংগ্রেসকে নিয়া এখন তৃণমূলকে হঠাইতে মনস্থির করিয়া ফেলিয়াছে সিপিএম৷ ইহা কমিউনিস্টদের ভাষায় কৌশলী রাজনীতি৷ এই কৌশলী রাজনীতি খেলিয়াই ত্রিপুরায় প্রথম ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করে সিপিএম৷ সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি করিতে চাহিয়াছে বাম দল৷
এই ত্রিপুরাতে ১৯৭৭ সালে সিপিএম তো ছিল একেবারেই ক্ষীণবল৷ তখন সি এফ ডি ও জনতার সঙ্গে জোট করিয়া কংগ্রেসকে একেবারে নিঃস্ব করিয়া দেয়, ধরাশায়ী করে সিপিএম৷ ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে জয়প্রকাশের নেতৃত্বে জনতা দলের জয়জয়কার এবং ইন্দিরা কংগ্রেসের শোচনীয় ভরাডুবির রেশ সারা দেশেই ছড়াইয়া পড়ে৷ ত্রিপুরাতে কংগ্রেসের বিধায়করাই সিএফডি ও জনতা দলে যোগ দেন৷ শচীন্দ্রলাল সিংহ ছিলেন সিএফডি নেতা৷ তাঁহার দল সিপিএমের সংগে জোট বাধিয়া সরকার গঠন করে৷ তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল দাস অসুস্থ হইয়া বিছানায় শুইয়াই রাজ্য চালাইয়া ছিলেন৷ কিন্তু কৌশলের রাজনীতিতে এক নম্বর নৃপেন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সরকারী কর্মচারীদের অর্থনৈতিক দাবী দাওয়া নিয়া জোর সওয়াল শুরু করিলেন৷ এবং বিপ্লবীয়ানা দেখাইয়া কর্মচারী বঞ্চনা ইত্যাদির কারণে সিএফডি মন্ত্রিসভা হইতে বাহির হইয়া আসেন৷ আবার জনতা দলের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে সিপিএম৷ মুখ্যমন্ত্রী হন জনতা দলের রাধিকা রঞ্জন গুপ্ত৷ এই মন্ত্রিসভা তিনমাস টিকে নাই৷ সিপিএম একই অভিযোগ তুলিয়া সরকার হইতে বাহির হইয়া আসিয়া নির্বাচনের দাবী তুলে৷ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস, সিএফডি, জনতা ধুইয়া মুছিয়া প্রায় পরিষ্কার হইয়া যায়৷ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়া সিপিএম ১৯৭৮ সালে রাজ্যে প্রথম মন্ত্রিসভা গঠন করে৷ শচীন সিংহের কংগ্রেস ত্যাগ, কংগ্রেসের লোভীদের ক্ষমতার লোভ, ইন্দিরার পতন ইত্যাদির কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাইয়া, সিপিএমের পোড় খাওয়া নেতা নৃপেন চক্রবর্তী রাজ্যে বামফ্রন্টের ক্ষমতারোহণের পর দলের শিকড় আরো পরিব্যাপ্ত করেন৷ ১৯৮৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীর সামান্য ভুলের কারণেই কংগ্রেস যুব সমিতি পাঁচ বছর রাজত্ব করিয়াছে৷ সেই জোট আর কোনও দিন ক্ষমতায় ফিরিয়া আসিবে এমন সম্ভাবনা আপাতত নাই৷ এই কথা বলা যাইতে পারে৷
ত্রিপুরাকে অনুসরণ করিয়া পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা আবার ফিরিয়া পাইতে বুদ্ধদেব, সূর্য্যবাবুরা কতখানি সফল হইবেন সেই প্রশ্ণ আছে৷ কারণ ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা৷ এখানে অবাম কোনও দলেরই পায়ের তলায় শক্ত মাটি নাই৷ কংগ্রেস তো তলাইয়া গিয়াছে৷ বিজেপি’র নতুন রাজ্য সভাপতি তো নিজের নিরাপত্তা নিয়াই তটস্থ৷ তাঁহার অভিষেকের পরই গোষ্টী কোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে আছড়াইয়া পড়িয়াছে৷ সুতরাং একই কংগ্রেসী চালচলন৷ কোনও জনগ্রাহ্য নেতা প্রদেশ সভাপতি পদে নাই৷ দলের কর্মী সমর্থকরাই প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করিয়াছে৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম যদি জোট বাঁধিতে পারে তাহা হইলে ত্রিপুরাকে কংগ্রেস শূন্য করা সহজ হইবে৷ ভাবমূর্তি উজ্জ্বল না হইলে, জনসংযোগ বাড়াইতে না পারিলে বিজেপি কংগ্রেসের বেহাল অবস্থার সুযোগ নিতে পারিবে না৷ সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে ত্রিপুরা মডেল অচল৷ কংগ্রেসকে জোটের আহ্বান জানাইয়া পশ্চিমবঙ্গে নহে গোটা দেশেই সিপিএম দলের দ্বিচারিতা আরো বেশি স্পষ্ট হইয়া গেল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *