BRAKING NEWS

রাজ্য পুলিশের জনবিচ্ছিন্ন ভাবমূর্তিতে উদ্বিগ্ণ মুখ্যমন্ত্রী, প্রত্যাশা পূরণে ‘প্রয়াস’ সুপার ফ্লপ

CM Policeনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জানয়ুারি৷৷ রাজ্য পুলিশের জনবিচ্ছিন্ন ভাবমূর্তি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে বিশেষভাবে ভাবাচ্ছে তা আজ পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে৷ জনগণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়া নিয়ে যে ফারাক রয়েছে তা নিয়ে পুলিশের উপর অসন্তোষ জাহির করার পাশাপাশি এদিন তিনি তাঁদের সতর্কও করেন৷ মূলত জনগণের সাথে সম্পর্ক আরো নিবিড় করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের প্রয়াস কর্মসূচী প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ সে বিষয়ে তিনি আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, প্রয়াস কর্মসূচীর মাধ্যমে জনগণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছু কিছু সাফল্য আসলেও লক্ষ্য পূরণে তা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে৷ এই কর্মসূচী শুরু করার আগে ধারণা করা হয়েছিল পুলিশের সাথে জনগণের সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে৷ [vsw id=”cGlXZ4MHHhg” source=”youtube” width=”325″ height=”244″ autoplay=”yes”]কিন্তু তাতে অনেকটাই ঘাটতি রয়ে গেছে বলে এদিন তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি প্রয়াস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় জনগণের বক্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ হলে চলবে না৷ এমনকি বৈঠক বন্ধ করে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না বলে কড়া বার্তা দেন তিনি৷ এই কর্মসূচীতে জনগণকেই অধিক গুরুত্ব দিতে হবে৷ ফলে পুলিশ যতটা বক্তব্য রাখবেন তার থেকে বেশি জনগণকে নিজেদের বক্তব্য জাহির করা সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন তিনি, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পারদর্শীতা নিয়েও সওয়াল করেছেন৷ তিনি বলেন, গোয়েন্দা বিভাগের পারদর্শীতা এবং দক্ষতা আরো বাড়াতে হবে৷ কারণ, যে কোন অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগাম খবর গোয়েন্দা মারফতই রাজ্য পুলিশের কাছে পৌঁছায়৷ সেক্ষেত্রে গোয়েন্দারা তাদের দক্ষতা আরো বৃদ্ধি না করলে অপরাধ শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে না৷ এরই পাশাপাশি রাজ্য পুলিশকেও আরো স্মার্ট হয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ এর জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘন ঘন প্রশিক্ষণের আয়োজন করার সুপারিশ করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশের প্রশিক্ষণ নিয়ে সওয়াল করাকে ঘিরে রাজ্যে পুলিশ প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং বিভিন্ন অপরাধজনিত ঘটনার তদন্তে যে ব্যর্থতার নজির স্থাপন করছে তাতে তিনি যে অনেকটাই অসন্তুোষ্ট তাই ফুটে উঠেছে৷ এবিষয়ে তিনি রাজ্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে রাজ্যের সমস্ত পুলিশ কর্মীদের স্মার্টন্যাস সুরক্ষিত করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি তাদের চলাফেরা এবং কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রেনিংয়ের যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেদিকেও নজর রাখার জন্যও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে সজাগ করেছেন৷ বিশেষ করে সিভিক পুলিশের কর্মীদের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে সে বিষয়েও সুপারিশ করেছেন৷
রবিবার অরুন্ধীতনগরে মনোরঞ্জম দেববর্মা স্টেডিয়ামে পালিত হয় পুলিশ দিবস৷ এই অনুষ্ঠানে বিগত বছরে বিভিন্ন বিভাগে উৎকর্ষতা প্রদর্শনের জন্য পুলিশ কর্মীদের বিভিন্ন পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়৷ পুলিশের তদন্তদ কার্যে উৎকর্ষতা প্রদর্শনের জন্য সাব ইন্সপেক্টর মীনা দেববর্মাকে বেস্ট ইনভেস্টিগেটর ২০১৫ পুরস্কার সম্মানিত করা হয়৷ সার্বিক কাজে দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য কলমচৌরা থানাকে দেওয়া হয় বেস্ট পুলিশ স্টেশন পুরস্কার৷ প্রয়াস এর কাজে দক্ষতার জন্য বেস্ট পুলিশ স্টেশনের পুরস্কার দেওয়া হয় কিল্লা থানাকে৷ জেলা স্তরে প্রয়াস কর্মসূচীতে সম্মান জানানো হয় ঊনকোটি জেলাকে৷ টি এস আর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানকে সম্মান জানানো হয় বেস্ট ব্যাটেলিয়ান পদক দিয়ে এবং বছরের সেরা পুলিশম্যান পদকে সম্মানিত করাহয় আনন্দবাজার থানার ওসি রাজকুমার জমাতিয়াকে৷ সবার হাতে পুরস্কারতুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ এছাড়া, পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কর্মীদের ছেলেমেয়েরা যারা উচ্চ মাধ্যমিক বা অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা কোর্সে ৯০ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছে তাদেরকে মেধা পুরস্কার দেওয়া হয় এই অনুষ্ঠানে৷
এদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার পুলিশ সপ্তাহ পালনের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, মূলত পুলিশের কাজকর্মের পর্যালোচনা ও তাঁর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়াই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য৷ তিনি বলেন, যদিও ত্রিপুরায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রাশ পেয়েছে তা সত্বেও আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগার কোন অবকাশ নেই৷ বাংলাদেশের মাটিতে এখনো সন্ত্রাসবাদীদের গোপন ঘাঁটি রয়েছে৷ তবে বাংলাদেশ সরকার তাদের সহায়তা করছে না, বরং সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানার এক বিরাট অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও এখনো কিছুটা অংশে কাজ সম্পন্ন হয়নি৷ এই কাজ করতে গিয়ে যেসব বাধা আসছে তার সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রককে এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান তিনি৷
এদিকে, এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পুলিশের উদ্যোগে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব যশপাল সিং, পুলিশের বর্তমান ও প্রাক্তন মহানির্দেশক এবং অন্যান্য আধিকারিকগণ৷ স্বাগত ভাষণ দেন পুলিশের মহানির্দেশক কে নাগরাজ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *