কণ্ঠরোধের অভিযোগে বিধানসভায় বিরোধীদের হৈ হট্টগোল, ওয়াকআউট

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ সেপ্ঢেম্বর৷৷ বিধানসভায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে৷ এমনই অভিযোগ এনে আজ সোমবার ত্রিপুরায় নিয়মরক্ষার বিধানসভা অধিবেশনে তুমুল হৈ হট্টগোল করেছেন বিরোধী সদস্যরা৷ গলায় প্ল্যা-কার্ড ঝুলিয়ে তাঁরা সরকার বিরোধী স্লোগান দেওয়ায় বিধানসভার পরিবেশ মুহূর্তের মধ্যেই ভারী হয়ে যায়৷ কিন্তু অধ্যক্ষ তাঁদের কথায় কান না দিয়ে অধিবেশন পরিচালনায় অগ্রসর হওয়ায় প্রতিবাদে বিরোধী ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যান তাঁরা৷ তাতে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেন, কোভিড ইস্যুতে মুখ পুড়বে, তাই পালিয়ে মুখ রক্ষা করেছেন বিরোধী বন্ধুরা৷


করোনা-র প্রকোপে বিধানসভার বাদল অধিবেশন একদিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটির বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ই বিরোধীরা প্রতিবাদে ওয়াকউট করেছিলেন৷ যথারীতি আজ অধিবেশন শুরু হওয়ার পর স্মৃতিচারণ শেষে পনেরো মিনিটের বিরতির পর সভার পরবর্তী কার্যসূচি হিসেবে বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটির রিপোর্ট উত্থাপনের সময় বিরোধী সদস্য তপন চক্রবর্তী দাঁড়িয়ে কিছু বক্তব্য পেশ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন৷ উপাধ্যক্ষ রিপোর্ট পেশ করার আগেই তপনবাবু সরকারি বিরোধী অবস্থানে সোচ্চার হন এবং একের পর এক অভিযোগ এনে ট্রেজারি বেঞ্চকে বিঁধতে থাকেন৷ স্বাভাবিকভাবেই ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরাও তাতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন৷


তপনবাবুর অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত বিধানসভা অধিবেশনে জনস্বার্থে কথা বলার কোনও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না৷ এমন-কি, করোনা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনার কোনও সুযোগ নেই৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় কাজ, খাদ্য এবং অর্থনৈতিক সমস্যা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে গিয়ে ঠেকলেও কথা বলার কোনও উপায় মিলছে না৷ এমনই পরিস্থিতিতে বিধানসভায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ স্বৈরাচারী শাসনের পরিচয় দিচ্ছে বলে তিনি ত্রিপুরা সরকারকে নিশানা করেন৷

তপন চক্রবর্তীর বক্তব্য মাঝপথে থামিয়ে অধ্যক্ষ অধিবেশন পরিচালনায় অগ্রসর হন৷ তখন বিরোধী দলনেতা উঠে দাঁড়ান এবং সরকারকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষের সুরে বলেন, বিধানসভায় যেভাবে চোখ রাঙানি হচ্ছে, তা মোটেও ঠিক নয়৷ তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, বিরোধীদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না৷ সাক্ষীগোপাল হয়ে বসে থাকতে চাই না৷ তাঁর অভিযোগ, সারা ত্রিপুরায় শাসক দলের নেতা, বিধায়ক এমন-কি মুখ্যমন্ত্রী নানা সভা সমাবেশ করছেন৷ অথচ, করোনা ছড়ানোর দায় বিরোধীদের কাঁধে চাপানো হচ্ছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, এখন সাংবাদিকদেরও চোখ রাঙানি হচ্ছে৷


এদিন বিধানসভায় বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনার সাথে গলায় প্ল্যা-কার্ড ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ এতে তুমুল হই-হট্টগোল শুরু হয়ে যায়৷ বিরোধীদের সরকার বিরোধী স্লোগানের মধ্যেই ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরাও মেজাজ সামলাতে পারেননি৷ তাঁরাও বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে বিদ্রুপ করতে থাকেন৷ ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য রঞ্জিত দাস বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেন, ২৫ বছর ত্রিপুরাকে নরকে পৌঁছে দিয়েছে বামফ্রন্ট৷ এখন শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজ করে চলেছে৷ বিরোধী এবং ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যদের তীব্র বাদানুবাদে বিধানসভার অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল৷


এরই মধ্যে উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন সভায় বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটির রিপোর্ট পেশ করেন৷ ওই রিপোর্ট সভা কর্তৃক গৃহীত হয়ে যায়৷ এরই প্রতিবাদে বিরোধীরা বিধানসভা অধিবেশন ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যান৷ তাতে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য শঙ্কর রায় বিদ্রুপ করে বলেন, করোনা ইস্যুতে মুখ পুড়বে বুঝতে পেরে পালিয়ে যাওয়া উচিত মনে করেছেন বিরোধীরা৷