অগ্ণিদগ্দ হয়ে ও ফাঁসিতে পৃথক স্থানে তিন মহিলাসহ চারজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ জুন৷৷ রাজ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ কোথাও পারিবারিক বিবাদ, কিংবা পণের জন্য নির্যাতনে৷ আবার কখনো রোগ যন্ত্রণায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন৷ চবিবশ ঘন্টার মধ্যে রাজ্যের চারটি স্থানে দুই মহিলা ও দুই পুরুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে৷
অগ্ণিদগ্দ হয়ে প্রাণ হারালেন এক গৃহবধূ৷ যদিও ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি মৃতার পরিবারের লোকজনের৷ ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে অমরপুরের ডালাক গ্রামে৷ মৃতার নাম অঙ্কিতা মন্ডল৷ বয়স উনিশ৷ স্বামীর নাম ক্ষিতিশ সাহা৷ অভিযোগ পণের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে অঙ্কিতা৷ সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় বছর আগে অঙ্কিতা ও ক্ষিতিশের বিয়ে হয়েছিল৷ বিয়ের পর থেকেই অঙ্কিতার উপর পণের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হত৷ বেশ কয়েকবার এনিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে৷ কিন্তু, কোন ভাবেই নির্যাতন বন্ধ হয়নি অঙ্কিতার উপর৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যারাতে আচমকা অঙ্কিতা অগ্ণিদগ্দ হয়৷ প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে কোনওরকমে উদ্ধার করে অঙ্কিতাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সেখানে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি৷ অগ্ণিদগ্দ অঙ্কিতার মৃত্যু হয়৷ এদিকে, মৃতার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছন অঙ্কিতার শ্বশুর বাড়ির লোকজন পণের জন্য নির্যাতন চালিয়ে পরিকল্পিত ভাবে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে৷ তারপর তারা আত্মহত্যার গল্প রটনা করছে৷ এই বিষয়ে বীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে৷ পুলিশ মামলা নিলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি অভিযুক্তদের৷ এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য বিরাজ করছে৷ প্রতিবেশীদের বক্তব্য প্রায়ই ক্ষিতিশের বাড়িতে ঝামেলা হত৷ চিৎকার চেচামেচি শুনা যেত৷ গৃহবধূ অঙ্কিতাকে মারধরও করা হত৷ এলাকাবাসীরও আশঙ্কা অঙ্কিতাতে অগ্ণিদগ্দ করে হত্যা করা হয়েছে৷
এদিকে, ভাড়া বাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার৷ ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে শহরের রামনগর তিন নম্বর রোডে৷ এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে ঘটনাকে কেন্দ্র করে৷ সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, রামনগর তিন নম্বর রোডের বাসিন্দা জুয়েল দাসের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন মনিকা ধর নামে এক মহিলা৷ যুবতী বয়সের এই মহিলা শহরের একটি বেসরকারী সংস্থায় কাজ করতেন৷ স্বামীর সাথে বনাবনি না থাকায় কোর্টে বিবাহবিচ্ছেদেরও মামলা চলছে৷ তাই স্বামীর ঘর ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন মনিকা৷ বুধবার সকালে বাড়ির মালিক দেখতে পান মনিকার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ৷ দীর্ঘসময় ডাকাডাকি করেও তার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন ঘরের ভিতরে সিলিংয়ের সাথে ফাঁসিতে ঝুলে রয়েছে মনিকা ধরের মৃতদেহ৷ সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিষয়টি আশেপাশের লোকজনকে জানান৷ খবর দেওয়া হয় থানায়৷ পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ এই ব্যাপারে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে৷ ময়না তদন্তের পর পুলিশ মৃতদেহটি নিকটাত্মীয়দের হাতে তুলে দিয়েছে৷ যুবতী মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে৷
অন্যদিকে, রোগ যন্ত্রণায় অসহ্য হয়ে আত্মহত্যা করলেন পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধা৷ নিজ বাড়িতেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রাণিরবাজার পূর্ব চাম্পামুড়া গাছপাড়ার বাসিন্দা সুপ্রিয়া দাস(৫৫)৷ জানা গেছে, আগেও একবার তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন৷
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি মাথায় যন্ত্রনায় ভুগছিলেন৷ বহু চিকিৎসা করানো হলেও রোগমুক্ত হতে পারেননি৷ সম্প্রতি তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন৷ বুধবার সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নিজ ঘরেই তিনি গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন৷ দমকল বাহিনী এবং রাণিরবাজার থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে জি বি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়েছে৷
এদিকে, পারিবারিক অশান্তির জের এক ব্যাক্তি ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন৷ জানা গেছে, আগরতলায় ভট্টপুকুর কালিটিলার বাসিন্দা নন্দন দাস(৪৫) ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন৷ তিনি পুর নিগমের কর্মী ছিলেন৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছয় বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল৷ তাদের একটি চার বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে৷ ১ বছর ধরে স্ত্রী পারমিতা দাসের সাথে মতবিরোধ দেখা দেয় তার৷ তিনি অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন এই সন্দেহ ছিল তার স্ত্রীর৷ এনিয়েই পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে অশান্তি চলছিল৷ মঙ্গলবার রাতেও স্ত্রীর সাথে তার প্রচন্ড ঝগড়া হয়৷ এরপর তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান৷ আজ সকালে কালিটিলায় জঙ্গলে প্রাতঃভ্রমনকারীরা গাছে তার দেহ ঝুলে থাকতে দেখেন৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় এ ডি নগর থানায়৷ পুলিশ এসে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে জি বি হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে৷ এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷