নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর/কমলপুর/চুড়াইবাড়ি, ৪ জুন৷৷ ঝড়-বৃষ্টির তান্ডবে রাজ্যের তিন জেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ ধলাই, উত্তর ও ঊনকোটি জেলা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে৷ টিলার মাটি ধসে পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷ রাস্তায় ধস পড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে৷ বিদ্যুৎ পরিষেবা মারাত্মক ভাবে ব্যহত হয়েছে৷ নিষ্প্রদীপ বহু এলাকা৷ ঘন্টায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ কিমি বেগে ঝড় বয়ে যায় ঐ তিন জেলায়৷ বহু কৃষি জমির ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে৷ বহু গ্রাম জলে প্লাবিত হয়েছে৷ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে শুধুমাত্র কৈলাসহ মহকুমাতেই ২৫০ পরিবারকে৷ তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই সহস্রাধিক পরিবার৷ দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য নামানো হয়েছে বোট৷
আজ ভোর থেকে প্রবল বর্ষণে মহকুমার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে৷ ইতিমধ্যেই পাঁচটি ত্রাণ শিবিরে ২৩০ পরিবারের ১১৫০ জন আশ্রয় নিয়েছেন৷ অতিবর্ষণে মহকুমার গৌরনগর ব্লকের ফুলবাড়ীকান্দি পঞ্চায়েতের বরখলায় মাটির ওয়ালের ঘর ধবসে পড়ে ইয়ামির আলী (৩১) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ প্রশাসন থেকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া প্রতি পরিবার পিছু ১৫০ টাকা করে তাৎক্ষণিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে৷ প্রবল বর্ষণে শহর পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকও প্লাবিত হয়েছে৷ মহকুমার রাঙ্গাউটিল লাটিয়াপুরা, খাওড়াবিল, সুলতানপুর, কামারকান্দি, মইনপুর, নূরপুর, ফুলবাড়ী কান্দি, পাখিরবাদা, ইছবপুর, বলেহর, দুর্গানগর, কিনাইচর, আকতাপাড়া সহ কৈলাসহর পুর এলাকার সবকটি (১৫টি) ওয়ার্ডই প্লাবিত হয়ে পড়েছে৷ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তরা ছাড়াও আরো ৫০০ পরিবারের প্রায় ২০০০ এর উপরের লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ত্রাণ শিবিরে বলে মহকুমা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে ৷ জেলা শাসক প্রমথ রঞ্জন ভট্টাচার্য বন্যা প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন৷ তাছাড়াও মহকুমা শাসক সুব্রত চৌধুরী ও কৈলাসহর পুর পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনীষ সাহা প্লাবিত এলাকা ঘুরেে দেখেছেন ও বন্যার্তদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ ইতিমধ্যে প্লাবিত এলাকায় ১০টি নৌকা নামানো হয়েছে৷ মনু নদীর জল বিপদ সীমার উপর বইছে৷ মহকুমা প্রশাসনের তরফে এব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে৷
কমলপুরের লাম্বুছড়ার ভূমি ধসে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে৷ রাতভর চেষ্টা করে উদ্ধারকারী দল মাটি চাপা পড়া মা ও তার দুই মেয়ে কে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে৷ কমলপুর থানাধীন লাম্বুছড়ার শনিবার বেশী রাতে এই ঘটনাটি ঘটে৷ ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, একটি অনুচ্চ টিলা ভূমির নিচে সমতল জমিতে রতি দেববর্মার ঘর ছিল৷ মাটির দেওয়ালে ঘর মোটামুটিভাবে মজবুতই ছিল৷ কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে টিলার ফাটল ধরে৷ কিন্তু তা এমন ভাবে ভেঙ্গে পরতে ভাবেনি পরিবারের লোকজন৷ শনিবার টানা ঝড় বৃষ্টিতে বাড়ি থেকে বের হওয়া পরিবারের লোকজনদের অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ রাতে সকলে একসঙ্গে বসে খাওয়ার খাচ্ছিল কিন্তু আচমকাই ধস পড়ে তাদের বাড়ির উপর৷ বাড়ির কর্তা খাওয়া দাওয়া সেরে হাত ধুতে যাচ্ছিলেন৷ ফলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান৷ কিন্তু ঘরের ভেতরের থাকা তার স্ত্রী এবং দুই কন্যা মাটিতে চাপা পড়ে যায়৷ গৃহকর্তা মাটি চাপা না পরলেও গুরুতর ভাবে জখম হয়েছেন৷ তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পুলিশ জানিয়েছে, বাকিদের উদ্ধার করতে টিএসআরের জওয়ানরা দ্রুত কাজ শুরু করে৷ কিন্তু জেলা মাটি স্তুূপ হয়ে থাকায় মৃতদেহ বের করে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে৷ চাপা পড়ার দেহ গুলি অধিকাংশই থেতলে গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ পরিবারের কর্তার চিকিৎসা চলছে৷ দীর্ঘক্ষণ সংজ্ঞাহীন থাকার পর তার জ্ঞান ফিরেছে৷ তবে তাকে এখনও বলা হয়নি যে তার পরিবারের সব শেষ৷
প্রলবল বর্ষণে ধর্মনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ বহু মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে৷ গোটা ধর্মনগর শহর জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷ এদিকে, রাজ্যে আরও কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া বিভাগ থেকে৷
2017-06-05

