নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ এপ্রিল৷৷ দরীদ্র রাজ্যে সবাইকে সব কিছু ভাগ করে নিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে কর্মচারীরা বাদ যান কি করে৷ এই যুক্তি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহার সাফ কথা, ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ৪০০০ কোটি টাকার কাজ পাওয়া গেলে রাজ্য সরকার সেই পথেই হাঁটবে৷ তাতে বহুবিধ প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে৷ ফলে, কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়৷ তবে, বাজেটে কর্মচারীদের জন্য যে ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে পে এন্ড পেনশন রিভিশন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আরও টাকার প্রয়োজন হলে ভেবে দেখা হবে৷ কিন্তু, সাধ্যের বাইরে গিয়ে কিছুই করা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী৷
পে এন্ড পেনশন রিভিশন কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী সরকার কর্মচারী এবং পেনশনার্সদের বেতন ভাতা পুনর্বিন্যাস করা হোক দাবি জানিয়েছে ত্রিপুরা মহাকরণ কর্মচারী সমিতি৷ এই মর্মে মুখ্যসচিবের কাছে বৃহস্পতিবার ডেপুটেশন দিয়েছে সমিতি৷ রাজ্য সরকার দাবি না মানলে সমিতি বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছে৷
এবিষয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্র কুমার সিনহা জানান, ২০০৯ সালে পে রিভিউ কমিটি গঠন করে রাজ্য সরকার সরকারী কর্মচারী ও পেনশনার্সদের সাথে বঞ্চনা করেছে৷ এবার পে এন্ড পেনশন রিভিশন কমিটি গঠন করে আবারও কর্মচারী এবং পেনশনার্সদের আঘাত করা হয়েছে৷ তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, রাজ্যের উন্নয়নের সাথে কর্মচারীদের স্বার্থকে মিলিয়ে দিয়ে রাজ্য সরকার বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে৷ পে এন্ড পেনশন কমিটি যে প্রশ্ণমালার ভিত্তিতে মতামত জানাতে বলেছে, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে কর্মচারীদের বেতন ভাতা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি রাজ্যের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে করতে হবে৷ উন্নয়ন ব্যাহত করে কর্মচারীদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব নয়, রাজ্য সরকারের এই মনোভাবের তীব্র বিরোধীতা করেছে সমিতি৷
সমিতির দাবি, পে এন্ড পেনশন কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন ভাতা পুনর্বিন্যাস করতে হবে৷ তবে, ন্যুনতম বেতনের ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রাইস ইন্ডেক্সের বিষয়টি মাথায় রেখে সপ্তম বেতন কমিশন যেখানে সুপারিশ করেছে ১৮০০০ টাকা, তার বদলে রাজ্যের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তা করতে হবে ২০০০০ টাকা৷
সমিতির বক্তব্য, পে এন্ড পেনশন কমিটির সুপারিশ অনুসারে বেতন ভাতা পুনর্বিন্যাস হলে বকেয়া ৩৭ শতাংশ ডি এ অনাদায়ী থেকে যাবে৷ তাছাড়া গত পে রিভিউ কমিটি সুপারিশে রাজ্যের সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনার্স মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হয়েছে৷
সমিতির ক্ষোভ, কর্মচারী এবং পেনশনার্সদের জন্য বরাদ্দ অর্থ রাজ্য সরকার অন্য খাতে খরচ করছে৷ প্ল্যান খাতে বরাদ্দ বছরের পর বছর অব্যায়িত থেকে যাচ্ছে৷ গত কয়েক বছরে বাজেটে কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে না পেরে ১২০০ কোটি টাকা দিল্লি ফেরত চলে গেছে৷ এবছরও একই অবস্থা৷ ৭০০ কোটি টাকার উপর কর্মচারীদের বরাদ্দ খাতে অব্যায়িত থাকা সত্বেও বাজেটে কর্মচারীদের পাওনা মিটিয়ে দিতে মাত্র ৬০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে৷ সমিতির স্পষ্ট বক্তব্য, রাজ্যের সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনার্সদের দাবি অনুযায়ী পাওনা মিটিয়ে ৬০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা রাজ্য সরকার ব্যবস্থা করবে৷ কারণ, ত্রয়োদশ কিংবা চতুর্দশ অর্থ কমিশনের বঞ্চনার কথা বলে রাজ্যের কর্মচারী ও পেনশনার্সদের ঠকানো এবার মেনে নেওয়া হবে না৷ সমিতি এদিন হুশিয়ারী দিয়ে বলেছে, দাবি পূরণ না হলে রাজ্য সরকার বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা হবে৷
এবিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ৯০ঃ১০ অনুপাতে কাজ করতে হয়৷ ফলে, রাজ্যকে প্রকল্পের মোট অর্থের ১০ শতাংশ বহন করতে হয়৷ কিন্তু, যদি এই ১০ শতাংশ অর্থ রাজ্য বহন না করে তাহলে সেই প্রকল্প মিলবে না৷ তাতে রাজ্যের উন্নয়ন ব্যাহত হবে৷ রাজ্যের নিজস্ব আয় যেখানে কম, সেখানে নন-প্ল্যান খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অর্থ থেকেই সেই টাকার ব্যবস্থা করতে হয়৷ ফলে, উন্নয়ন কাজ চালু রাখতে গিয়ে কর্মচারীদের দাবী মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ অর্থমন্ত্রী এদিন এক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, গত বাজেটে ৬০০০ কোটি টাকা কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল বেতন এবং পেনশনের জন্য৷ সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে গেলে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত ৮৪০ কোটি টাকা৷ রাজ্যের কোষাগারের যা অবস্থা তাতে ঐ টাকা বহন করার মতো ক্ষমতা নেই৷ কারণ, করের বোঝা রাজ্যবাসীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে নয় সরকার৷ ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ভ্যাট সংগ্রহ হয়েছিল ১০৪২ কোটি টাকা৷ ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে তা কমে সংগ্রহ হয়েছে ১০২১ কোটি টাকা৷ কারণ, লোয়ারপোয়ায় রাস্তার বেহাল দশা এবং অধিকাংশ নিত্যপণ্য সামগ্রী রেলে করে আসছে, তাই ২০১৬-২৭ অর্থবর্ষে ৪০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক কম ঢুকেছে রাজ্যে৷ স্বাভাবিকভাবেই কর বাবদ সংগ্রহ কমেছে৷ রাজ্যের নিজস্ব আয় যথেষ্ট পরিমানে হলে তখন কর্মচারীদের দাবী মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা যেত, জানান অর্থমন্ত্রী৷
2017-04-21

