বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের আটক ইস্যুতে স্থগিতাদেশে অস্বীকার, আদেশ দিলে বিপর্যয় হতে পারে, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট : বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে আটকের অভিযোগে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে। আদালত জানিয়েছে, তৎক্ষণাৎ কোনও নির্দেশ দিলে “গুরুতর পরিণতি” হতে পারে। বিশেষত তাদের ক্ষেত্রে, যারা সত্যিই **সীমান্ত পেরিয়ে বেআইনিভাবে এসেছে।

বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং জয়মাল্য বাগচী-র বেঞ্চ বলেন, যেসব রাজ্যে অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট রাজ্যে তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই করতে পারে। কিন্তু এই তদন্ত চলাকালীন সময়েই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আমরা যদি এখনই কোনও আদেশ দিই, তবে সেটির প্রভাব বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের উপরও পড়বে। আইন অনুযায়ী, তাদের বিতাড়ন প্রয়োজন। আদালত আরও বলে, যদি কেউ বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হয়ে আসে এবং আপনি তাকে আটক না করেন, তাহলে তো সে গায়েব হয়ে যাবে। তাই এখনই আটক বন্ধের নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়।

আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকে দায়ের করা এই মামলায় দাবি করা হয়েছে, বাংলা ভাষায় কথা বলেন বা বাংলা ভাষায় পরিচয়পত্র বহন করেন, এমন মানুষদের শুধুমাত্র সেই কারণেই আটক করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে এই হয়রানি চলছে। অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তদন্ত, এমনকি নির্যাতনের অভিযোগও এসেছে। তিনি আদালতের কাছে অনুরোধ জানান, অন্তত একটি অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়ে আটক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিক আদালত। ভূষণ বলেন, তদন্তে আমার কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু আটক যেন না করা হয়।

আদালতের পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই বিষয়ে এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করা দরকার, যাতে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি না হয়। আদালত কেন্দ্র এবং নয়টি রাজ্য ওড়িশা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা ও পশ্চিমবঙ্গ—এর কাছে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চেয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য মামলাটি তালিকাভুক্ত করা হবে।

এই ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছে। তাদের দাবি, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাভাষী মানুষদের লক্ষ্য করছে। এদিকে, কলকাতা পুলিশ রাজ্যের বাইরে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে, যারা এই ধরনের হয়রানি ও পরিচয় যাচাইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন।