নয়াদিল্লি, ২৬ ডিসেম্বর (হি.স.): যে বয়সে বাকিরা আদো-আদো গলায় কথা বলে, যে বয়সে বাচ্চাদের সঙ্গী হয় খেলনা কিংবা কার্টুন দেখা, সেই বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ফিডে রেটিং পেয়ে গিয়েছে অনীশ। কলকাতার কৈখালির বিস্ময় বালক দাবাড়ু অনীশ সরকার। আগামী প্রজাতন্ত্র দিবসে চার বছর বয়স হবে অনীশের। ঠিক তার এক মাস আগেই অনীশের ঝুলিতে এলো প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি ভবনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমী কৃতিত্বের জন্য ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৭ জন শিশুকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার প্রদান করেন। ১৭ জনের মধ্যে ৭ জন ছেলে ও ১০ জন মেয়ে। এই অনুষ্ঠানে সর্বকনিষ্ঠ পুরস্কার বিজয়ী হলেন কলকাতার মাস্টার অনীশ সরকার। যখন শিশুরা প্লে স্কুল এবং নার্সারি ক্লাসে থাকে। মাস্টার অনীশ বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ব র্যাঙ্কিং দাবা খেলোয়াড় হয়েছেন।
এই পুরস্কার নিতে দিনকয়েক আগেই অভিভাবক-সহ অনীশ কলকাতা থেকে যাত্রা করেছিল দেশের জাতীয় রাজধানী দিল্লির উদ্দেশে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির থেকে এলো স্বীকৃতি। পুরস্কার প্রাপ্তির পর ছোট্ট অনীশের আলাদা কোনও অভিব্যক্তি না থাকলেও উচ্ছ্বসিত বিস্ময় বালকের মা। প্রায় ১৬১১ কিলোমিটার দূরে দিল্লি থেকে ফোনে হিন্দুস্থান সমাচারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি একইভাবে আনন্দিত এবং চিন্তিত। এত অল্প বয়সে এই পুরস্কার তাঁদের কল্পনার অতীত। আবার খেলায় এই ধারাবাহিকতা অনীশ রাখতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
যখন অনীশের বয়স ২ বছর ৮ মাস, সেইসময়েই দাবার প্রতি ঝোঁক দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন অনীশের বাবা-মা। যত দিন গেছে দাবার প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে অনীশের। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কলকাতার চক্রবেড়িয়ায় গ্র্যান্ড মাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়ার দাবা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনীশকে ভর্তি করে দেন তাঁরা। কৈখালি থেকে চক্রবেড়িয়া, যাতায়াত মিলিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টার ধকল সে এই বয়সেই সয়ে নেয় হাসি মুখে।
সপ্তাহে তিনদিন (বুধবার, শুক্রবার ও শনিবার) দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে অনীশের প্রশিক্ষণ। মাঝে কয়েকবার কিছুক্ষণের বিরতি মিলিয়ে সাকুল্যে ১ ঘন্টার বিশ্রাম। সপ্তাহে তিনদিন প্রায় ৭ ঘন্টা ধরে একভাবে চৌষট্টি খোপের সামনে বসে থাকতে এতটুকু বিরক্ত হয় না অনীশ। বরং, বিরতিতে তার দাবার বোর্ড ছেড়ে আসতেই ইচ্ছা হয়না। তার মা বলেন, পড়াশোনা, আঁকা, দাবা সবকিছুকেই অনীশ খেলার মতো করে ভাবে। তাই ক্লান্তি আসে না ছোট্ট অনীশের।
উল্লেখ্য, ৩ বছর ৮ মাস বয়সেই বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলে বাংলার খুদে দাবাড়ু। অনীশ সরকার জায়গা করে নেয় ইতিহাসের পাতায়। কনিষ্ঠতম দাবাড়ু হিসাবে ফিডে রেটিং পায় বাংলার খুদে অনীশ। ভেঙে দেয় তেজস তিওয়ারির রেকর্ড। এন্টালির সেন্ট জেমস স্কুলের পড়ুয়া অনীশ। সবচেয়ে কম বয়সে ফিডে রেটিং অর্জন করে দাবার দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে এই খুদে। দাবার বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ফিডে রেটিং অর্জন করতে হলে কোনও ফিডে রেটিং প্রাপ্ত দাবাড়ুকে হারিয়ে এক পয়েন্ট পেতে হবে। তার জন্য সর্বোচ্চ ২৬ মাস সময় দেওয়া হবে, পাঁচজন দাবাড়ুর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ দেওয়া হবে। অক্টোবর মাসে তিনজনের বিরুদ্ধে খেলেই সেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছে অনীশ।
অনীশের মা জানিয়েছেন, তিনি গৃহবধূ, আর অনীশের বাবা পেশায় শিক্ষক। তবে পুত্রের কীর্তিতে সংবাদমাধ্যমে নিজেদের নাম প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে চাননি তাঁরা।