ভারতীয় রেলের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো, ‘অমৃত ভারত স্টেশন’-এর ভার্চুয়ালি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী- এনএফ রেলের অধীনস্থ তালিকায় অসমের ৩২, ত্রিপুরার তিন, একটি করে নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গে ১৬, বিহারে তিন সহ ৫৬টি স্টেশন

গুয়াহাটি, ৬ আগস্ট (হি.স.) : ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ প্রকল্পের অধীনে দেশের ৫০৮-এর সঙ্গে অসমের ৩২, ত্রিপুরার তিন, একটি করে নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গে ১৬টি, বিহারে তিনটি সহ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের অন্তর্গত ৫৬টি স্টেশনকে পুনঃবিকাশের জন্য ভার্চুয়ালি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ রবিবার সকাল ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই সব রেলস্টেশনকে পুনঃবিকাশের মাধ্যমে ‘অমৃত ভারত স্টেশন’-এ রূপান্তরিত করার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘অমৃত ভারত স্টেশন’গুলির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রকল্পের সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃত কালের শুরুতে ভারত উন্নত হওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। নতুন শক্তি, নতুন অনুপ্রেরণা এবং নতুন সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং এই চেতনায় ভারতীয় রেলের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে আজ।
জোরের সঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের রেলওয়ে পরিকাঠামোকে নতুন রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বলেন, ভারতের প্ৰায় ১,৩০৯টি প্ৰধান রেলওয়ে স্টেশন এখন ‘অমৃত ভারত রেলস্টেশন’ হিসেবে উন্নীত হবে। এর মধ্যে আজ থেকে ৫০৮টি ‘অমৃত ভারত স্টেশন’-এর পুনঃবিকাশের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই ৫০৮টি স্টেশনকে পুনঃবিকশিত করতে প্ৰায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। প্রতিটি ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ হয়ে উঠবে সংশ্লিষ্ট শহরের আধুনিক আকাঙ্ক্ষা, প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক। এই প্রকল্প যাত্রীদের সুবিধা, গতিশীলতা এবং আশপাশ অঞ্চলের সঙ্গে বিরামহীন একীকরণের উন্নতিকে অগ্রাধিকার দেবে। এর লক্ষ্য, রেল যাত্রা শুধু সহজলভ্য নয় আনন্দদায়ক করা।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পগুলি পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা হবে। দক্ষ বাস্তবায়ন এবং যাত্রীদের জন্য বাস্তব সুবিধা নিশ্চিত করবে অমৃত ভারত প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক রেলস্টেশনগুলো পর্যটন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করবে। সরকার ‘ওয়ান স্টেশন ওয়ান প্রোডাক্ট’ প্রকল্পও চালু করেছে যা জেলার ব্র্যান্ডিং সহ শ্রমিক ও উদ্যোগীদের উপকার করবে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তাবিত অমৃত ভারত স্টেশনের মাধ্যমে রেল যাত্রীদের উন্নত পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি রেল স্টেশনগুলিকে উন্নতমানের ও অত্যাধুনিক করে গড়ে তোলা হবে।
প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, নেতিবাচক রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে আমরা উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে ইতিবাচক রাজনীতির পথে এগোচ্ছি। বলেন, ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে গোটা দেশ এখন বলছে দুর্নীতি, পরিবারবাদ, তুষ্টিকরণকে ভারত ছাড়তে হবে।’
অসমে ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ প্রকল্পের অধীনে আজকের ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গুয়াহাটি সংলগ্ন নারেঙ্গি রেলস্টেশনে উপস্থিত ছিলেন অসমের রাজ্যপাল গোলাপচাঁদ কাটারিয়া, মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা, সাংসদ পবিত্র মার্ঘেরিটা। এছাড়া নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল লা গণেশন ও মুখ্যমন্ত্রী নেইফিও রিও ডিমাপুরে, ত্রিপুরার রাজ্যপাল সত্যদেও নারায়ণ আর্য, মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক উদয়পুরে এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল ফাগু চৌহান ও মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সংমা উপস্থিত ছিলেন মেন্দিপথারে। এছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সাংসদ, স্থানীয় বিধায়ক ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলিতে উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, উত্তরপূর্ব সীমান্ত (এনএফ) রেলওয়ের অধীন ৫৬টি স্টেশনের মধ্যে অসমের ৩২টি, ত্রিপুরায় তিনটি, পশ্চিমবঙ্গে ১৬টি (পশ্চিমবঙ্গে অন্য ডিভিশনের মোট ৩৭), বিহারের তিনটি এবং নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে একটি করে স্টেশন অমৃত ভারত প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এনএফ রেলের অধীনস্থ এই ৫৬টি স্টেশনের পুনঃবিকাশের জন্য ব্যবহার করা হবে ১,৯৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান স্টেশন যথাক্রমে অসমের নারেঙ্গি (৩৩.২৩ কোটি), লামডিং রেলওয়ে স্টেশন (৪০ কোটি টাকা), কাছাড় জেলার অরুণাচল (২৯.২ কোটি টাকা), নিউ করিমগঞ্জ (৩০ কোটি), (৩৩.৮২ কোটি), নিউ হাফলং (৩৫ কোটি), লংকা (৩০.১ কোটি), হোজাই (৩০.১৯ কোটি), জাগিরোড (৩১.১৮ কোটি), চাপরমুখ (৩১.৮৭ কোটি), ডিফু (৩২ কোটি টাকা), ধুবড়ি (৩৮.৫ কোটি টাকা), সরুপাথার (৩১ কোটি টাকা), ডিব্রুগড়, শিবসাগর টাউন প্রভৃতি।
এছাড়া ত্রিপুরার কুমারঘাট (৩০.২৪ কোটি), ধর্মনগর (৩২.৬ কোটি) ও উদয়পুর (৩৩.৮২ কোটি); নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর এবং মেঘালয়ের মেন্দিপাথার; পশ্চিমবঙ্গের নিউ আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি রোড, হাসিমারা; বিহারের কিষাণগঞ্জ, ঠাকুরগঞ্জ, বারসোই জংশনও রয়েছে এনএফ রেলওয়ের অধীনস্থ ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ প্রকল্পের তালিকায়।