নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ জানুয়ারী৷৷ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক কার্যকরী সভাপতি প্রবীণ তোগারিয়ার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্যে বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দেওয়া চেষ্টা চলছে বলে সুর চড়িয়েছে ডান-বাম উভয় দল৷ তাদের মতে রাজ্যের শান্তি সম্প্রীতি ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার লক্ষ্যেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা উষ্কানী এবং প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন৷ তোগারিয়ার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম৷
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মন বলেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগারিয়া ত্রিপুরায় এসে যে সমস্ত কথাবার্তা বলেছেন তাতে বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দেওয়ারই অঙ্গ৷ পাশাপাশি তোগারিয়ার বিরুদ্ধে রাজ্যে উষ্কানীমূলক মন্তব্য করার অপরাধে শীঘ্রই সুয়োমুটো মামলা করার দাবী জানিয়েছেন শ্রী বর্মন৷ এদিকে, এক প্রেস বিবৃতিতে সিপিএম কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের সহযোগী এবং আরএসএসের অন্যতম শাখা সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগারিয়া আগরতলা, জিরানীয়া, সাতনালা ইত্যাদি স্থানে তীব্র উষ্কানীমুলক এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষমূলক যে বক্তব্য রেখেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে৷
এদিন, সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মন তোগারিয়াকে নিয়ে রাজ্য সরকারের নরম মনোভাবের কটাক্ষ করেছেন৷ তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সেই রাজ্যে প্রবীণ তোগারিয়ার সভা কোথাও করতে দেননি৷ কিন্তু, ত্রিপুরায় এসে উষ্কানীমূলক মন্তব্য করলেও রাজ্য সরকার শ্রী তোগারিয়ার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা আইনী ব্যবস্থা নেয়নি৷ বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করে বলেন, বিজেপি এন্ড কোং এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করার জন্যই প্রবীণ তোগারিয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার আইনী ব্যবস্থা নেয়নি৷ আগামীদিনে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম অবনতি ঘটলে তার দায় রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে বলে জানান বিরোধী দলনেতা৷ এই প্রসঙ্গে যুক্তি দিয়ে বলেন, রাজ্য সরকারের নীরবতার কারণেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা উষ্কানীমূলক বক্তব্য রাখতে পেরেছেন৷
এদিকে, সিপিএমের বক্তব্য কুখ্যাত আরএসএসের অন্যতম প্রচারক নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি দেশের একতা এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ নস্যাৎ করার জন্য একের পর এক উষ্কানী ও প্ররোচনামূলক কার্যকলাপ চালিয়ে দেশে অস্থীর পরিবেশ সৃষ্টি করছে৷ বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মনে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে৷ প্রেস বিবৃতিতে একথা জানানোর পাশাপাশি সিপিএম দাবী করেছে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধবংসের অন্যতম আসামী প্রবীণ তোগারিয়ার মুসলীম সংখ্যালঘু বিদ্বেষী বক্তব্য এবং হিংসাত্মক উষ্কানী একই লক্ষ্যে পরিচালিত৷ সিপিএমের আরও দাবী ত্রিপুরার জনগণ একতা, সম্প্রীতি রক্ষা করে স্বাভাবিক উন্নয়নের পথে সারা দেশের সামনে একটি উজ্জল নজীর সৃষ্টি করেছেন৷ রাজ্যের শান্তি সম্প্রীতি ও স্থিতিশীল পরিবেশ বিঘ্নিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা উষ্কানী ও প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন৷ সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী আরএসএস ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলির উষ্কানী ও প্ররোচনার বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকতে এবং সম্প্রীতি বিনষ্টের যে কোন ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্র প্রিয় রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
এদিন, বিরোধী দলনেতা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার দেশকে কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ দেশে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে৷ যাতে হিন্দু মুসলীমদের মধ্যে একতায় চিড় ধরানো সম্ভব হয়৷ মুসলীমদের দেশ থেকে তাড়ানোর যে ডাক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা দিয়েছেন সেক্ষেত্রে ভাবতে হবে বাংলাদেশেও এগার শতাংশের কাছাকাছি হিন্দু রয়েছেন৷ এপাড়ে মুসলীমদের বিরুদ্ধে কোন বিদ্বেষ বা আক্রোশের প্রতিক্রিয়া ওপাড়ে হিন্দুদের উপর প্রতিফলিত হতে পারে৷ কারণ, বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু৷ বিরোধী দলনেতা এদিন দাবী করে বলেন, ভারতীয় সংবিধান সব ধর্মের মানুষকে সমান অধিকার দিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা যে উষ্কানীমূলক বক্তব্য রেখেছেন তা তীব্র ও নিন্দা জানায় কংগ্রেস৷ পাশাপাশি তিনি এরাজ্যের মুসলীম সম্প্রদায়ের জনগণকে অভয় দিয়ে বলেছেন ত্রিপুরায় সব ধর্মের মানুষ সুরক্ষিত আছেন এবং এখানে পরস্পর ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ধর্মীয় ভাবাবেগে শ্রদ্ধা জানান৷
2016-01-29