ভাল কাজের প্রশংসা ও মন্দ কাজের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ, সভ্য দুনিয়ায় তাহাই কাম্য৷ যেমন কেন্দ্রের ক্ষমতায় বসিয়াই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দিয়াছেন ‘আচ্ছে দিন আয়েগা’৷ আসলে, রাজনীতিওয়ালের মতিগতি ও আন্তরিকতা নিয়া জনমনে সংশয় সন্দেহ থাকিয়াই যায়৷ প্রধানমন্ত্রীর ‘আচ্ছে দিনের’ অর্থ কি তাহা অবশ্য ব্যাখ্যা করা হয় নাই সরকারীভাবে৷ দেশবাসী অভিজ্ঞতায় দেখিয়াছেন, কেন্দ্রে মোদির অভিষেকের পর দেশের পোড়াকপালই হইয়াই আছে৷ জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়াছে, দূর্নীতি ইত্যাদিও সমান তালে চলিয়াছে, আইন শৃঙ্খলা বিশেষ করিয়া দেশের নিরাপত্তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ আসিয়া দাঁড়াইয়াছে৷ পাঠানকোটে বায়ু সেনা কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়াছে৷ বিপুল সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়া বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর বিপুল আশার গুঁড়ে যেন বালি পড়িতেছে৷ এইসব হতাশার মাঝেও কোনও কোনও পদক্ষেপ আশার সঞ্চার করে৷ কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের মন্ত্রীরা রাজ্য সফর করিতেছেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ঘন ঘন রাজ্য সফর বিভিন্ন দপ্তরের কাজকর্ম সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার কারণে কাজে গতি আসিবে এবং প্রকল্প রূপায়নের জন্য চাপও বাড়িবে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র বরাদ্দ পাঠাইয়াই দায়িত্ব শেষ করে৷ ইহা কাম্য নহে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ঘন ঘন রাজ্য সফরের সার্থকতা আছে৷ প্রকল্প রূপায়নের মাধ্যমে ত্রিপুরা অনেক বেশী অগ্রগতির পথে যাইতে পারে৷ শুধু ত্রিপুরা নয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিভিন্ন রাজ্য সফর চালু রাখিয়া দেশকে আরও বেশী প্রগতির পথে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হইতে পারে৷ একথা ঠিক, রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ছড়াছড়ি৷
বেশ কয়েকটি প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার পুরস্কারও পাইয়াছে৷ দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ত্রিপুরায় সাফল্যের খতিয়ান অনেক বেশী উপরে৷ পার্শ্ববর্তী আসামের অবস্থা তো শোচনীয়৷ দূর্নীতি সেখানে তো প্রকাশ্যে চলে৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের লুটতরাজ হামেশাই চলে৷ লোম বাছিতে কম্বলই উজার হইয়া যাইবার অবস্থা৷ এইসব কারণে কেন্দ্র আসামে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ কাটছাঁট করিয়াছে৷ ইহাতে মুখ্যমন্ত্রী অগ্ণিশর্মা হইয়া কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করিয়াছেন৷ দিল্লীতে ধর্না পর্য্যন্ত দিতে হইয়াছে৷ অথচ এইরকম রাজ্যগুলি দুর্নীতির উপর ভাসিতেছে৷ লুটপাট সেখানে জলভাত৷ কিন্তু ত্রিপুরা সেই লুটপাট হইতে মুক্ত? না, এই রাজ্যেও লুটপাটের ঘটনার অভাব নাই৷ তবে অন্যান্য রাজ্যের মতো ব্যাপকতর নহে৷ ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ঘন ঘন সফর বিভিন্ন দিক দিয়াই তাৎপর্য্যপূর্ণ৷ পূর্বতন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের মন্ত্রীরা পারতপক্ষে রাজ্য সফরের উৎসাহ পাইতেন না৷ পূর্বতন এই সরকারের সঙ্গে সম্ভবত মৌলিক তফাৎ এইখানেই যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ঘন ঘন রাজ্য সফর৷ ইহাতে সফরের ব্যয় হইলেও সুদুর প্রসারী গুরুত্ব অনেকবেশী৷ ইংরেজী নববর্ষের প্রথম সপ্তাহেই একের পর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্য সফরে আসিয়াছেন৷ মোদি সরকারের ইহা একটি ইতিবাচক দিক৷ বিভিন্ন রাজ্য নিয়াই দেশ৷ দেশ তখনই শক্তিশালী হইবে যদি রাজ্যগুলি শক্তিশালী হয়৷ একের পর এক দূর্বল রাজ্য শক্তিশালী দেশ গড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়৷ আজ রাজ্যে রাজ্যে পৃথক রাজ্যের দাবী উঠিয়াছে৷ এই ত্রিপুরায়ও এই আওয়াজ হইতে মুক্ত নহে৷ যদি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে৷ পিছাইয়া পড়া মানুষের জন্য বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণ হয় তাহা হইলে পৃথক রাজ্যের দাবী উঠিলেও তাহার বিরোধীতাই করিবে৷ কথায় আছে ‘সুখে থাকিতে ভুতে কিলায়৷’ ত্রিপুরায় এই পৃথক রাজ্যের দাবীদারদের অবস্থা হইয়াছে তাই৷
পৃথক রাজ্যের দাবী নিয়া কংগ্রেস জোর রাজনীতি করিয়াছে৷ রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করিতেই পৃথক রাজ্যকে সমর্থন দেওয়া হয়৷ ত্রিপুরায় পৃথক রাজ্যের দাবীদাররা দিল্লীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়াছে৷ পৃথক রাজ্যের দাবীদাররাও ভাল করিয়া জানেন ত্রিপুরা ভাগ অসম্ভব৷ জানিয়া শুনিয়া বিষ পান করার অবস্থার মতো৷ উপজাতিদের নিয়া দল ভারী করিবার আর তো কোনও মওকা নাই৷ রাজনীতির যাঁতাকালে এই পোড়া দেশের আরও যে কত ক্ষতি হইবে তাহা বলা অসম্ভব৷ তবে, ইহা ঠিক, কেন্দ্রীয় সরকার হাত পা গুটাইয়া বসিয়া নাই৷ যাহারা এক ঢিলে দুই পাখী মারিতে চায়, যাহারা রাজনীতির স্বার্থে সর্বনাশা খেলায় মাতিতে পারে তাঁহাদের সম্পর্কে এখনই সতর্ক হওয়া অনেক বেশী জরুরী৷ কিন্তু দূর্ভাগ্যের এইখানেই যে, কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির রূপায়ণে আগ্রহী নহে৷ বরং দেখা যাইতেছে, কেন্দ্র ক্রমেই পিছনে হাটিতেছে৷ বহু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মাঠে মারা যাইতেছে৷ এইসব নানা ক্ষেত্রে, অসাফল্যই কেন্দ্রের সরকারের দায়িত্বশীলতার বিষয়টি প্রশ্ণের সামনে নিয়া দাঁড় করাইয়াছে তবু, কিছু কিছু ভাল কাজের জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার জনমনে রেখাপাত করিয়াছে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ঘন ঘন রাজ্য সফরে অনেক বেশী সার্থকতা আছে৷ তাহাকে অনুধান করিতে হইলে বাস্তব পরিস্থিতিকে নীরিক্ষণ করিতে হইবে৷