সাইরাং রেলস্টেশনে প্রথমবার সরাসরি গাড়ির রেক, মিজোরামের যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত

নয়াদিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর :
এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে মিজোরামের সাইরাং রেলস্টেশন প্রথমবারের মতো সরাসরি আগত (ইনওয়ার্ড) অটোমোবাইল রেক পরিচালনা করল। গুয়াহাটির কাছে চাংসারি থেকে আসা ওই রেকে মোট ১১৯টি মারুতি গাড়ি পরিবহণ করা হয়।

রেল মন্ত্রকের রবিবার জারি করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই উদ্যোগের ফলে আইজলে গাড়ির প্রাপ্যতা বাড়বে, দীর্ঘ সড়কপথে পরিবহণের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং রাজ্যের অটোমোবাইল ক্ষেত্র—ডিলার, পরিষেবা প্রদানকারী ও গ্রাহক—সবাই উপকৃত হবেন। পাশাপাশি, এটি মিজোরামের পরিকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই সাফল্য দেশের সর্বত্র যোগাযোগ সম্প্রসারণ, আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

বাইরাবি–সাইরাং রেললাইন মিজোরামের জন্য একটি বড় পরিকাঠামোগত মাইলফলক। কঠিন ভৌগোলিক পরিবেশে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে নির্মিত এই ৫১.৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে রয়েছে ৪৫টি সুড়ঙ্গ। এই লাইনটি রাজ্যটির সঙ্গে দেশের বাকি অংশের কৌশলগত সংযোগ আরও মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই রেললাইনের উদ্বোধন করেন। ওইদিন তিনি আইজল (সাইরাং)–দিল্লি (আনন্দ বিহার টার্মিনাল) রাজধানী এক্সপ্রেস, আইজল (সাইরাং)–গুয়াহাটি মিজোরাম এক্সপ্রেস এবং আইজল (সাইরাং)–কলকাতা এক্সপ্রেসের যাত্রা সূচনা করেন। এর মাধ্যমে মিজোরাম সম্পূর্ণভাবে ভারতের জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়।

নতুন ট্রেন পরিষেবাগুলিতে যাত্রী সাড়া অত্যন্ত উৎসাহজনক। সাইরাং–আনন্দ বিহার টার্মিনাল রাজধানী এক্সপ্রেসে যাত্রী উপস্থিতি ১৪৭ শতাংশ, সাইরাং–গুয়াহাটি মিজোরাম এক্সপ্রেসে ১১৫ শতাংশ এবং সাইরাং–কলকাতা এক্সপ্রেসে ১৩৯ শতাংশে পৌঁছেছে। যাত্রীরা এই ট্রেনগুলিকে সুবিধাজনক, সাশ্রয়ী ও সময় বাঁচানো বলে মনে করছেন। এর ফলে বড় শহর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যাতায়াত যেমন সহজ হয়েছে, তেমনই পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে শিক্ষা ও চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগও বেড়েছে।

বাইরাবি–সাইরাং লাইনে মালবাহী পরিষেবা উদ্বোধনের পরপরই শুরু হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম মালগাড়িতে অসম থেকে আইজলে ২১টি সিমেন্ট ওয়াগন আনা হয়। এরপর থেকে এই পথে সিমেন্ট, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, বালি ও পাথরের চিপসসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণ করা হচ্ছে।

এছাড়াও, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ সাইরাং থেকে প্রথম পার্সেল বুকিং করা হয়, যখন অ্যান্থুরিয়াম ফুল পার্সেল ভ্যানে করে (সাইরাং–আনন্দ বিহার টার্মিনাল রাজধানী এক্সপ্রেস) দিল্লিতে পাঠানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ১৭টি রেক পরিচালিত হয়েছে।

এই সব অগ্রগতি প্রমাণ করে যে বাইরাবি–সাইরাং রেললাইন দ্রুতই একটি নির্ভরযোগ্য লজিস্টিক করিডরে পরিণত হচ্ছে, যা পরিবহণ খরচ কমানোর পাশাপাশি মিজোরামের অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

Leave a Reply