নতুন দিল্লি, ৩১ জুলাই : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ৬টি ভারতীয় কোম্পানিও রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের কারণে আরোপ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ভারতীয় কোম্পানিগুলি, ইরান থেকে তেল, পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানি শাসনব্যবস্থা এই আয়ের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন করে এবং নিজের জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, “ইরানি শাসনব্যবস্থা তার স্থিতিশীলতাহীন কার্যক্রম সমর্থন করতে এই অর্থ ব্যবহার করছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা ইরানী শাসনব্যবস্থার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করা এবং তাদের জনগণের প্রতি দমননীতি বন্ধ করতে চেষ্টা করছি।”
এবারের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার মধ্যে ৬টি ভারতীয় কোম্পানির নাম উঠে এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির অভিযোগ রয়েছে। এই ছয়টি কোম্পানি হলো: আলকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড, জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড, রামনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পারসিস্টেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড এবং কঞ্চন পলিমার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬টি ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে ইরান থেকে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করার অভিযোগ তুলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে। প্রথমত, আলকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যেহেতু তারা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮৪ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে। গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড ইরান থেকে ৫১ মিলিয়ন ডলারের মিথানলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করেছে, যা ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঘটেছে। আর জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৯ মিলিয়ন ডলারের টোলুইনসহ অন্যান্য ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে। অপরদিকে, রামনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি ২২ মিলিয়ন ডলারের মিথানল এবং টোলুইন আমদানি করেছে। পারসিস্টেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড ১৪ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে, যা উবিই-ভিত্তিক বাব আল বারশা কমোডিটি ট্রেডিং কোম্পানি থেকে এসেছে। শেষমেশ, কঞ্চন পলিমার্স ১.৩ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, বিশেষ করে পলিইথিলিন, আমদানি করেছে। এই সব কোম্পানি ইরান থেকে পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এসব কোম্পানির সমস্ত সম্পত্তি এবং স্বার্থ ব্লক করা হয়েছে। এর মানে হল যে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বা সেখানে থাকা কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এই কোম্পানিগুলির সঙ্গে কোন লেনদেন করতে চায়, তবে তা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হবে। এ ছাড়া, যদি কোনো মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেন করে, তাহলে সেটাও আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে যে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মূল উদ্দেশ্য হল শাস্তি দেয়া নয়, বরং ইরানি শাসনব্যবস্থার আচরণে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য, ইরানকে তার অস্থিতিশীল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ করা।
এই নিষেধাজ্ঞা ইরান থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি হলেও, ইরানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সংকুচিত হতে পারে। একইসাথে, এর ফলে ভারতীয় পেট্রোকেমিক্যাল খাতও বিপর্যস্ত হতে পারে, কারণ এই কোম্পানিগুলি ইরানি পণ্যগুলি সস্তায় আমদানি করত।
এছাড়াও, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে, কারণ এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ভারতীয় কোম্পানিগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে, যারা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনে জড়িত।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলির লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে ইরানকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করা। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির বিরুদ্ধে এক ধরনের কৌশলিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য এটি একটি সতর্ক সংকেত, যা তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করতে পারে।

