নয়াদিল্লি, ৫ জুলাই: ভারতের সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করতে কেন্দ্র সরকার দেশের সমস্ত দুই-চাকার যানবাহনের চালকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা শুধুমাত্র ভারতীয় মানক ব্যুরো-এর মান্যতা প্রাপ্ত হেলমেট ব্যবহার করেন। ভোক্তা বিষয়ক দপ্তর এবং বিআইএস এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, সুরক্ষার মান বজায় রাখতে বিআইএস-সার্টিফায়েড আইএসআই-মার্ক হেলমেট ব্যবহার করা অপরিহার্য।
সরকার জানিয়েছে, বাজারে ব্যাপক হারে নিম্নমানের এবং অনুমোদনহীন হেলমেট ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। ২০২১ সাল থেকে মান নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা কার্যকর রয়েছে, যার আওতায় সমস্ত দুই-চাকার চালক ও আরোহীদের জন্য IS 4151:2015 মানদণ্ড অনুযায়ী বিআইএস অনুমোদিত হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক।
বর্তমানে দেশে ১৭৬টি বৈধ লাইসেন্সধারী হেলমেট প্রস্তুতকারক রয়েছেন। তবে, বাজারে ও রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া বহু হেলমেটে বিআইএস অনুমোদনের কোনও চিহ্ন নেই। এই প্রেক্ষিতে, সরকার কড়া পদক্ষেপ ও নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে।
ভোক্তা বিষয়ক দপ্তর এবং বিআইএস বিভিন্ন রাজ্যে নিয়মিতভাবে তল্লাশি অভিযান ও নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০টিরও বেশি সার্চ ও সিজার অভিযান চালিয়ে ৫০০-রও বেশি হেলমেট পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে দিল্লির নয়টি প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে ২,৫০০টি অবৈধ হেলমেট জব্দ করা হয়েছে, যাদের লাইসেন্স ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে বা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
তাছাড়া দিল্লি ও আশপাশের ১৭টি খুচরো বিক্রয়কেন্দ্র এবং রাস্তার ধারের দোকান থেকেও আরও ৫০০টির বেশি নিম্নমানের হেলমেট জব্দ হয়েছে। বর্তমানে এসব মামলায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
চলমান অভিযানে গতি আনতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরদের চিঠি লিখে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা এই উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং বাজার থেকে নিম্নমানের হেলমেট সরিয়ে ফেলেন। সেই সঙ্গে এই অভিযানকে সড়ক নিরাপত্তা প্রচারের সঙ্গে একীভূত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বিআইএস-এর আঞ্চলিক শাখাগুলোকে জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি-এনসিআর-এ ইতিমধ্যেই ইতিবাচক ফলাফল দেখা গেছে এবং অন্যান্য রাজ্যেও অভিযান শুরু হয়েছে।
চেন্নাই বিআইএস শাখা এ বছরের গোড়ার দিকে একটি সড়ক প্রচার অভিযান ও হেলমেট বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করে, যেখানে আইএসআই-মার্ক হেলমেট বিতরণ এবং ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতায় সচেতনতা বাড়ানোর কাজ হয়।
সরকার এই প্রচার সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া ও এনজিও-দের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ‘মানক মিত্র’ নামে স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বাধ্যতামূলক মানদণ্ড ও নিরাপদ পণ্যের বিষয়ে সচেতন করছেন।
ভোক্তারা যেন সহজেই যাচাই করতে পারেন কোন হেলমেট প্রস্তুতকারক বিআইএস লাইসেন্সধারী, সেই লক্ষ্যে বিআইএস তাদের ‘বিআইএস কেয়ার অ্যাপ’-এ একটি নতুন ফিচার যুক্ত করেছে। এখান থেকে প্রস্তুতকারকের তথ্য দেখা ও অভিযোগ দায়ের করা যায়।
ভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা চাই সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারের কারণে বহু অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানি ঘটছে, যা আমরা কঠোরভাবে আটকাতে চাই।”
সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং নাগরিকদের সঠিক ও মানসম্পন্ন সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারে উৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।