মণিপুরে ভয়াবহ বন্যা: ৯৪৪ জনকে উদ্ধার, অব্যাহত রয়েছে সেনা ও অসম রাইফেলসের ত্রাণ তৎপরতা

ইম্ফল, ৩ জুন : মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকায় টানা তৃতীয় দিনে চলমান ‘অপারেশন জলরহাট-২’-এর আওতায় ভারতীয় সেনা ও অসম রাইফেলস একযোগে বন্যা ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ৯৪৪ জন অসহায় নাগরিককে নিরাপদে উদ্ধার করেছে।

অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে গত ৩১ মে থেকে ইম্ফলের নিম্নাঞ্চলসমূহে জলাবদ্ধতা এবং বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বহু এলাকা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী ও অসম রাইফেলসের যৌথ তৎপরতা দ্রুত গতি পায়।

ত্রাণ তৎপরতার অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ১,৫০০ টি খাবারের প্যাকেট ও ৪,০০০ বোতল বিশুদ্ধ পানীয় জল বিতরণ করা হয়েছে।

ওয়াংখেই অঙ্গম লাইকাই পুনর্বাসন শিবিরে একটি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প খোলা হয়, যেখানে ২৫০ জনেরও বেশি বাস্তুচ্যুত নাগরিককে প্রাথমিক চিকিৎসা, সংক্রমণ, পানিশূন্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি, স্যানিটেশন ও রোগ প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারও চালানো হয়।

ওয়াংখেই নিংথেম এলাকায়, এক ব্যক্তি গুরুতর পায়ের আঘাত নিয়ে সাহায্যের জন্য আহ্বান জানালে অসম রাইফেলসের মেডিক্যাল টিম পানিতে ডুবে থাকা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে পৌঁছে যান এবং সেখানেই সেলাই ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল করেন।

২ জুন মধ্যরাতে, হেইনগাং, ইম্ফল ইস্ট অঞ্চলে বাড়তে থাকা বন্যার জলে আটকে পড়া চারজন নাগরিক—একজন ৪০ বছরের ব্যক্তি, তাঁর কিশোর পুত্র, এক ৬০ বছরের মহিলা ও তাঁর নাতিকে—সেনাবাহিনী সফলভাবে উদ্ধার করে।

এর আগে, জেএনআইএমএস হাসপাতালের মেডিক্যাল ছাত্র ও স্টাফদের চরম জলাবদ্ধতার মধ্যে থেকে উদ্ধার করে মণিপুর ফায়ার সার্ভিস, এসডিআরএফ, এনডিআরএফ, সেনাবাহিনী ও অসম রাইফেলসের যৌথ দল।

প্রবল বৃষ্টিপাত ও কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও সেনা ও অসম রাইফেলসের সাহসী সদস্যরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ, চিকিৎসা ও সাহস জোগানোর কাজ করে চলেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা কবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সমস্ত বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

মণিপুরের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সেনা ও উদ্ধারকারী বাহিনীর তৎপরতা আবারও প্রমাণ করল—প্রকৃত দুর্যোগে দেশের সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তায় তারা সবসময় প্রস্তুত।