ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন বিচারপতি বি.আর. গবাই

নয়াদিল্লি, ১৪ মে : বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গবাই আজ দেশের ৫২তম প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) হিসেবে শপথ নিলেন। এই শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি ভারতের ইতিহাসে প্রথম বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং তফসিলি জাতি থেকে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক পদে অধিষ্ঠিত হলেন।

এই অভিষেক শুধুমাত্র ঐতিহাসিক নয়, বরং এটি ভারতের বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত অন্তর্ভুক্তির মূল্যবোধ ও সংবিধানিক ন্যায়নীতির প্রতীকও বটে।

বিচারপতি গবাই আগামী ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এখন থেকে শুধু তাঁর রায় নয়, বরং বিচার বিভাগে তাঁর অবদান এবং উত্তরাধিকার নিয়েও নজর থাকবে গোটা দেশের।

সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত অবস্থায় বিচারপতি গবাই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বেঞ্চে অংশ নিয়েছেন, যেগুলি বিভিন্ন গঠনমূলক আদেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বুলডোজার নীতি নিয়ে কঠোর অবস্থান এবং অনৈতিক ধ্বংস অভিযান রোধে নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ।

তিনি যে সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্য ছিলেন, তা বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। তাতে রয়েছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলকে বৈধ ঘোষণা, নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প খারিজ, ২০১৬ সালের নোট বাতিলকে সমর্থন।

বিচারপতি গবাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আম আদমি পার্টির নেতা তথা তদানিন্তন দিল্লীর মন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে মানি লন্ডারিং মামলায় জামিন দেন— যা পরবর্তীকালে একই মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিনের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। তিনি সেই বেঞ্চেরও নেতৃত্ব দেন যেটি রাহুল গান্ধীর ‘মোদি’ পদবী সংক্রান্ত মানহানির মামলার সাজা স্থগিত করে এবং নাগরিক অধিকার কর্মী তিস্তা অতুল সেটালভাদকে গোধরা দাঙ্গা-সংক্রান্ত মামলায় নিয়মিত জামিন প্রদান করে।

১৯৬০ সালের ২৪ নভেম্বর অমরাবতীতে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি গবাই। ১৯৮৫ সালের ১৬ মার্চ বার কাউন্সিলে যোগদান করেন।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বম্বে হাইকোর্টে স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করেন। পরে মূলত নাগপুর বেঞ্চে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। তিনি নাগপুর ও অমরাবতী মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং অমরাবতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল ছিলেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত নাগপুর বেঞ্চে অ্যাসিস্ট্যান্ট গভার্নমেন্ট প্লিডার ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের ১৭ জানুয়ারি গভার্নমেন্ট প্লিডার এবং পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান।

২০০৩ সালের ১৪ নভেম্বর বম্বে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০০৫ সালের ১২ নভেম্বর স্থায়ী বিচারপতি হন। এরপর মুম্বই, নাগপুর, আওরঙ্গাবাদ ও পানাজির বেঞ্চে নানা ধরনের মামলার শুনানি করেছেন।

২০১৯ সালের ২৪ মে তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে উন্নীত হন।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট অনুসারে, গত ছয় বছরে বিচারপতি গবাই প্রায় ৭০০ টি বেঞ্চে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে সংবিধানিক ও প্রশাসনিক আইন, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা, বাণিজ্যিক বিবাদ, সালিশি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও পরিবেশ আইনসহ নানা বিষয়ে রায় প্রদান করেছেন।

এই দায়িত্বভার গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি শুধু নতুন অধ্যায় শুরু করলেন না, বরং ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্তও স্থাপন করলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *