BRAKING NEWS

রপ্তানিকারকদের ক্ষমতায়ন এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকে সহজতর করার লক্ষ্যে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রক

নয়াদিল্লি, ২১ সেপ্টেম্বর : বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিনে রপ্তানিকারকদের ক্ষমতায়ন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকে সহজতর করা এবং উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপে বাণিজ্য দপ্তর গুরুত্ব দিয়েছে ও সাফল্য অর্জন করেছে । এই সাফল্যের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হল:

১) ট্রেড কানেক্ট ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের ক্ষমতায়ন:

একটি বৃহৎ প্রেক্ষাপট যুক্ত ট্রেড কানেক্ট ই-প্ল্যাটফর্মের সূচনার মাধ্যমে  ৬ লক্ষেরও বেশি আমদানি-রপ্তানিকারক কোড (আইইসি) হোল্ডার, ১৮৫ জন ভারতীয় মিশন অফিসার এবং এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের ৬০০ জনেরও অধিক সদস্যকে বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএফটি), বাণিজ্য বিভাগের (ডিওসি) অফিস এবং ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই ডিজিটাল উদ্যোগের  মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) জন্য তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে, এর ফলে ব্যবসা করার স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ায় এবং আরও নিরবচ্ছিন্ন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রপ্তানি বাস্তুতন্ত্রের প্রচার ঘটছে।

২) অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এমএসএমই) রপ্তানিকারকদের জন্য বীমা সুরক্ষা বৃদ্ধি :

সরকার রপ্তানি ক্ষেত্রকে বিপুলভাবে চাঙ্গা করতে, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এমএসএমই) রপ্তানিকারকদের জন্য বর্ধিত বীমা নিশ্চিত করেছে, এতে কম খরচে ২০,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যেতে পারে। এই উদ্যোগ ভারতীয় রপ্তানিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে, যার ফলে প্রায় ১০,০০০ রপ্তানিকারক উপকৃত হবেন।

৩) স্ব-প্রত্যয়িত বৈদ্যুতিন ব্যাংক আদায় শংসাপত্র (ই. বি. আর. সি) -র সম্মতিদানের বোঝা হ্রাস:

স্ব-প্রত্যয়িত বৈদ্যুতিন ব্যাঙ্ক আদায় শংসাপত্র ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে রপ্তানিকারকদের জন্য সম্মতি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে ইলেকট্রনিক ব্যাঙ্ক রিয়েলাইজেশন সার্টিফিকেট (ই. বি. আর. সি) প্রতি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে খরচ হত, এই ব্যবস্থাটি এখন রপ্তানিকারকদের ১২৫ কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় দিচ্ছে  এবং সুবিধা ও রিফান্ড দাবি করার প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করেছে। এই কাগজবিহীন ব্যবস্থা চালু হবার ফলে সরকারের ডিজিটাল, পরিবেশ-বান্ধব অর্থনীতির যেমন প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি, প্রশাসনিক ও পরিবেশগত খরচ কমানোর বৃহত্তর লক্ষ্যের সঙ্গেও যুক্ত।

ইলেকট্রনিক ব্যাঙ্ক রিয়েলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইবিআরসি) এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সমন্বয়ের ব্যাপক উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে সময় হ্রাস করছে, যা রপ্তানিকারক এবং অংশীদারদের জন্য সহজতর হয়েছে। এই ব্যবস্থাটি ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এটি দক্ষতার সাথে উচ্চ পরিমাণের, কম খরচের লেনদেন পরিচালনা করে। ফলস্বরূপ, এটি তাদের আরও কার্যকরভাবে সুবিধা এবং ফেরত দাবি করতে সক্ষম করে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাদের বৃদ্ধি এবং অংশগ্রহণ বিশেষ মদত পাবে।

৪) ই-কমার্স এক্সপোর্ট হাব (ইসিএইচ): ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এসএমই) রপ্তানিকারকদের বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করছে:

ই-কমার্স এক্সপোর্ট হাব (ইসিএইচ)-এর সূচনার ফলে ভারতের আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স বাস্তুতন্ত্রে বিপ্লব ঘটতে চলেছে, যার সম্ভাব্য রপ্তানি মূল্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ই-কমার্স এক্সপোর্ট হাব (ই. সি. ই. এইচ) কারিগর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এস. এম. ই) এবং এক জেলা, এক পণ্য (ওডিওপি) উৎপাদকদের বিশ্ব বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে, খরচ হ্রাস করবে এবং লজিস্টিক সহজতর করবে।

এই কেন্দ্রগুলি পরিবহণ, সঞ্চয় এবং গুণগত মানের নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগকে বাড়িয়ে তুলবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাগুলিকে বিশ্ব-বাজার স্বরূপ ই-কমার্স এক্সপোর্ট হাব (ইসিএইচ)-এর সঙ্গে যুক্ত করা এই অঞ্চলগুলির ডিজিটাল রূপান্তর চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা ছোট শহরগুলিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক সুযোগের সুযোগ করে দেবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করবে।

৫) সরকারি ই-মার্কেট প্লাস পোর্টালে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের (এমএসএমই) জন্য লেনদেনের খরচ হ্রাস

সরকারি ই-মার্কেটপ্লেসে (জিইএম) অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের (এমএসএমই) বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে মূল্য নির্ধারণের স্ল্যাবগুলির সংখ্যা হ্রাস করা হয়েছে, যা বিক্রেতাদের বুঝতে এবং মেনে চলতে সহজ করে তুলেছে। ফি-তে নতুন ক্যাপটি উচ্চ-মূল্যের লেনদেনের জন্য আরও বেশি সাশ্রয় করার মতো সুবিধা দিচ্ছে। কারণ ১০ কোটি টাকার উপরে অর্ডারসমূহ এখন ৩ লক্ষ টাকার একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে, যা আগেকার নির্ধারিত ৭২.৫ লক্ষ টাকার লেনদেনের ফি থেকে অনেকখানি হ্রাস পেলো।

৬) দুবাইতে ভারত মার্ট:

বাণিজ্য দপ্তর একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়ে দুবাইতে ভারত মার্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করেছে। এই কেন্দ্র ভারতীয় অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে উপসাগরীয় সহযোগিতা পর্ষদের (জিসিসি) আফ্রিকান ও সিআইএস (কমনওয়েলথ দেশসমূহ) বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য রপ্তানির প্রবেশাধিকার দেবে, ফলে এই অঞ্চলগুলিতে ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।

৭) গণশুনানি ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে মানব মধ্যস্থতাকারীদের নির্মূল করা:

সরকার গণশুনানি শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাচ্ছন্দ্য আরও বাড়িয়েছে। তা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা মধ্যস্থতাকারীদের নির্মূল করে মসৃণ যোগাযোগকে সহজতর করবে এবং অংশীদার এবং বিভাগের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব করে তুলবে । এই ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বচ্ছ  প্রক্রিয়ার প্রবর্তন যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি  ব্যবসার সময় ও প্রচেষ্টা নেবার সময় সাশ্রয় হবে, যার ফলে কার্যালয় পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে ।

৮) জৈব নিয়ন্ত্রক- বাস্তুতন্ত্রকে মজবুত করা:

জৈব উৎপাদনের জন্য সংশোধিত জাতীয় কর্মসূচি (এনপিওপি) -র মাধ্যমে রফতানি সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ৫০০০ উৎপাদক গোষ্ঠীর প্রায় ২০ লক্ষ কৃষক উপকৃত হবেন । শংসাপত্রের মান উন্নত করার দিকে লক্ষ্য রাখার মাধ্যমে, জৈব রফতানি ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৯)  প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিক প্রোত্সাহন যোজনা (পিএমসিএসপিওয়াই:

এই উদ্যোগের আওতায় অসম ও পশ্চিমবঙ্গের ১২১০ টি চা বাগানের ১০ লক্ষেরও বেশি শ্রমিককে উন্নত স্বাস্থ্য পরিসেবা, শিক্ষা এবং বিশ্রামাগারের সুবিধা পাবেন। চা বাগানের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ।

10) ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি)/ইনফরমেশন টেকনোলজি এনেবলড সার্ভিসেস (আইটিইএস) বহির্ভুত সমস্ত স্পেশাল ইকোনমিক জোনে (এসইজেড) ইন্ডিয়ান কাস্টমস ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ গেটওয়ে (আইসিইজিএটিই)-এর সূচনা।:

এর ফলে,তাদের রপ্তানি পণ্যের উপর শুল্ক ও কর মুকুব (আর. ও. ডি. টি. ই. পি) প্রকল্পের আওতায় সুবিধা নিতে আবেদন করতে সক্ষম হবেন । এই পদক্ষেপটি ব্যবসা করার স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াবে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ইউনিটগুলিকে ২৪x৭ হেল্পডেস্ক এর সহায়তা প্রদান করবে এবং আরও বিরামবিহীন ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিশ্চিত করবে ।

এই পরিবর্তনমূলক পদক্ষেপসমূহ জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। বাণিজ্য দপ্তরের নিরন্তর প্রচেষ্টায় ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অত্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *