BRAKING NEWS

আয়ুষ্মান ভারত হল সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচি: জে পি নাড্ডা

নয়াদিল্লি, ২১ সেপ্টেম্বর : কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জগৎ প্রকাশ নাড্ড বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রধান সাফল্যগুলি নিয়ে  শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও গণপতরাও যাদব এবং অনুপ্রিয়া সিং প্যাটেলও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১০০ দিনে বিভিন্ন মন্ত্রক মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে সর্বত্র স্বাস্থ্য পরিষেবাকে উন্নত ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বেশ কয়েকটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ১০০ দিনে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্পে অর্জিত কিছু সাফল্য নিম্নরূপঃ

আয়ুষ্মান ভারত পিএম-জেএওয়াইঃ

শ্রী নাড্ডা বলেন, আয়ুষ্মান ভারত পিএমজেএওয়াই প্রকল্পকে সম্প্রসারিত করার মাধ্যম এখন এর অন্তর্ভুক্ত হবেন এখন  উপার্জন নির্বিশেষে ৭০ বছর ও তদূর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকরও, এর ফলে ৪.৫ কোটি পরিবারের প্রায় ৬ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। শ্রী নাড্ডা জানান, সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির এই বর্ধিত প্রকল্প চলতি বছরের অক্টোবর থেকে বাস্তবায়িত হবে।

ইউ-উইন পোর্টালঃ

জে পি নাড্ডা জানান, ইউ-উইন পোর্টাল তৈরী করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, যার মধ্য দিয়ে সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির আওতায় জন্ম থেকে ১৭ বছর বয়সী বাচ্চা ও গর্ভবতী মহিলাদের সম্পূর্ণ টিকাদান পরিষেবাগুলির রেকর্ড সম্পূর্ণ ডিজিট্যাল উপায়ে রাখা করা হবে।  ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নাগরিক-কেন্দ্রিক পরিষেবাগুলির মধ্যে রয়েছে ইউ-উইন ওয়েব-পোর্টাল বা ইউ-উইন নাগরিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার মাধ্যমে ‘যে কোনও সময় অ্যাক্সেস’ এবং ‘যে কোনও জায়গায়’ টিকা পরিষেবা, নাগরিকদের দ্বারা স্ব-নিবন্ধন, স্বয়ংক্রিয় এসএমএস সতর্কতা, সার্বজনীন কিউআর-ভিত্তিক ই-টিকা শংসাপত্র এবং নিজের জন্য আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য অ্যাকাউন্ট (আভা) আইডি এবং বাচ্চাদের জন্য চাইল্ড আভা পরিচয়পত্র তৈরি করার সুবিধা। এই পোর্টালের সুবিধা নেওয়া যাবে হিন্দি সহ ১১টি আঞ্চলিক ভাষায়।

তিনি বলেন, ‘সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির আওতায় গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের জন্ম থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত সম্পূর্ণ টিকাদান রেকর্ডের জন্য টিকাদান পরিষেবাগুলির সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনের জন্য ইউ-উইন পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। ২০২৪-এর ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬.৪৬ কোটি সুবিধাভোগী এই পোর্টালে নথিভুক্ত হয়েছে, ১.০৪ কোটি টিকাকরণ পর্ব সম্পন্ন হয়েছে এবং ২৩.০৬ কোটি টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে।

নতুন যক্ষ্মা চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং মেড-ইন-ইন্ডিয়া যক্ষ্মা নির্ণয়ঃ

জাতীয় যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচির (এনটিইপি) অধীনে এখন স্বল্পমেয়াদী এবং অধিকতর কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি এখন হাতের কাছে এসে গিয়েছে, এর মাধ্যমে যক্ষ্মা রজার চিকিৎসার সময়কাল ৯-১২ মাস থেকে কমিয়ে ৬ মাস করতে সহায়তা করবে। এটি আইসিএমআর এর  স্বাস্থ্য প্রযুক্তি মূল্যায়ন (এইচটিএ) থেকে বৈধতা পেয়েছে । শ্রী নাড্ডা জানান যে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আগামী বছরের গোড়ার দিকে এই নতুন ব্যবস্থা চালু করার জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে পরামর্শ করে স্বাস্থ্য পেশাদারদের প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত উপকরণের জন্য একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করছে। তিনি বলেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি সারা দেশে প্রায় ৭৫০০০ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি (ডিআর টিবি) রোগীর চিকিৎসার সময়কাল হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বি. এইচ. আই. এস. এম, ‘ভীষ্ম’ কিউব স্থাপনঃ

ভীষ্ম (বিএইচআইএসএম)কিউব হল বহনযোগ্য এবং দ্রুত-স্থাপনযোগ্য এক মোডিওলার চিকিৎসা সুবিধা যা দুর্যোগ/জনস্বাস্থ্যমূলক জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে জরুরিকালীন জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সক্ষম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই কিউবগুলি জরুরি পরিস্থিতিতে ট্রমা, রক্তপাত, পোড়া, হার ভেঙে যাওয়া ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ধরণের প্রায় ২০০ টি কেস সামাল দিতে সক্ষম। প্রথম পর্যায়ে, দুর্যোগ/স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দ্রুত মোতায়েনের জন্য ২৫টি এইমস এবং জাতীয় গুরুত্বের প্রতিষ্ঠানগুলিতে (আইএনআই) ‘ভীষ্ম’  কিউব স্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে, রাজ্যগুলিও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তা স্থাপন করতে পারে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ইউক্রেন সফরের সময় ভারত ইউক্রেনকে চারটি ভীষ্ম কিউব উপহার দিয়েছে।

ড্রোন পরিষেবার ব্যবহারঃ

দুর্গম এবং উচ্চ পাহাড়ি অঞ্চলে চিকিৎসা সরঞ্জাম, সামগ্রী এবং নমুনার ব্যয় সাশ্রয়কারী, দ্রুত ও নিরাপদ সরবরাহের সুবিধা দেবে ড্রোন পরিষেবা । ড্রোন পরিষেবার জন্য ১৫টি এইমস/আইএনআই/এনই প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। ১২টি প্রতিষ্ঠানে ড্রোন পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। শ্রী নাড্ডা বলেন, ড্রোনগুলি ওষুধ, টিকা, রক্ত, ডায়াগনস্টিক নমুনা এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী ওষুধপত্র দুর্গম জায়গায় দ্রুত ও নিরাপদে পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে।

চিকিৎসা শিক্ষাঃ

মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধিঃ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল কলেজ এবং এমবিবিএস ও পিজি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে, এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জুড়বেন অধিক সংখক চিকিৎসক।

মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২০২৩-২৪ সালে ছিল ৭০৬, তা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৭৬৬ হয়েছে, যা ৮.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ৩৮৭ যা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৭৬৬, যা ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি। এই সময়ের মধ্যে ৩৭৯টি নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে এবং বর্তমানে দেশে ৭৬৬টি (সরকারি: ৪২৩, বেসরকারি: ৩৪৩) মেডিকেল কলেজ রয়েছে।

এমবিবিএস-এ আসন বৃদ্ধিঃ

এমবিবিএসের আসন বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.৩০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ সালে যে আসন সংখ্যা ছিল ১,০৮,৯৪০, তা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৫,৮১২। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে দেশে মেডিকেল আসন সংখ্যা ছিল ৫১,৩৪৮, যা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে বেড়ে হয়েছে ১,১৫,৮১২ অর্থাৎ আসন বৃদ্ধি হয়েছে ৬৪,৪৬৪, প্রায় ১২৫ শতাংশ।

স্নাতকোত্তর (পিজি) আসন বৃদ্ধিঃ

পিজি মেডিকেল আসন সংখ্যা ২০২৩-২৪ সালের ৬৯,০২৪ থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ সালে হয়েছে ৭৩,১১১, যা ৫.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি। ২০১৩-১৪ সালে ৩১,১৮৫ টি আসন থেকে ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৭৩,১১১ এ উন্নীত হয়েছে অর্থাৎ গত ১০ বছরে, পিজি আসনের সংখ্যা বেড়েছে ৩৯৪৬০ টি অর্থাৎ ১২৭% বৃদ্ধি হয়েছে।

জাতীয় মেডিকেল রেজিস্টারের কার্যক্রমঃ

ন্যাশনাল মেডিকেল রেজিস্টার (এন. এম. আর) হল ভারতের সমস্ত অ্যালোপ্যাথিক (এম. বি. বি. এস) নিবন্ধিত চিকিৎসকদের জন্য একটি বিস্তৃত তথ্যভাণ্ডার। এনএমআর ডাক্তারদের আধার আইডির সঙ্গে যুক্ত, ফলে তা ডাক্তারের ব্যক্তিগত পরিচিতির সত্যতা নিশ্চিত করে।

আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির-সাব সেন্টারের ভার্চুয়াল ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স স্ট্যান্ডার্ডস (এনকিউএএস) মূল্যায়নঃ এনকিউএএস হল জেলা হাসপাতাল, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির-নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির-উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান নিশ্চিত ও উন্নত করার জন্য পরিকল্পিত মানগুলির একটি সেট।

শ্রী নাড্ডা বলেন, ২০২৪ এর ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত ১৩,৭৮২টি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র এনকিউএএস এর শংসা প্রত্যয়িত হয়েছে। ২০২৪ সালের ১এপ্রিল থেকে মোট ৫৭৮৪টি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে এনকিউএএস প্রত্যয়িত করা হয়েছে, যেখানে প্রথম ১০০ দিনে ৩১৩৪টি কেন্দ্র(২৭৩৪টি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির-উপকেন্দ্র সহ) সকল স্তরে এনকিউএএস প্রত্যয়িত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *