BRAKING NEWS

চিকিৎসা পরিষেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন রাজ্যে, কিডনি প্রতিস্থাপন সফল 

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ জুলাই:  রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবার ইতিহাসে এক মাইল ফলক আজকের দিন। প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন হল রাজ্যে সোমবার। ৬৫ বছর পুরনো জিবিপি হাসপাতালের ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। সোমবার সফলভাবে  কিডনি প্রতিস্থাপনের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ডাঃ শংকর চক্রবর্তী। উত্তর পূর্বাঞ্চলে তৃতীয় রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা কিডনি প্রতিস্থাপনে সাফল্য পেয়েছে।

বিস্তারিত বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, আজ মায়ের কিডনি ছেলের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। রামনগরের বাসিন্দা,  মুন্না সাহা সূত্রধরের ছেলে শুভম সূত্রধর(২০) কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এদিনের এই কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, কিডনি প্রতিস্থাপন কর্মসূচি সম্পর্কে গত প্রায় এক বছর ধরে হাসপাতালের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে এক কমিটি গঠন করে এই কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ২১ তারিখ প্রথম এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ২৩ আগস্ট প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর ডঃ সঞ্জীব দেববর্মা। সেই কমিটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা একটি প্রোটকল তৈরি করে ৪ জানুয়ারি ২০২৪ কমিটির কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তী সমস্যায় প্রটোকল মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহার নিকট পাঠানো হয়। জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন প্রদান করেন। মেডিকেল সুপার ডাঃ শংকর চক্রবর্তী আরও উল্লেখ করেন, এ ধরনের অপারেশনের জন্য যেকোনো হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে এই প্রতিস্থাপন করতে হয়। সেই অনুযায়ী সিজা হাসপাতালের সাথে মৌ স্বাক্ষরিত হয়। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর আজ পর্যায়ক্রমে এই সফলতা এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, এদিন যার কিডনির প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সেই মা ও ছেলে মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসক মন্ডলীকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জানান। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে থাকা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিজা ফাউন্ডেশন এর সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এই কিডনি প্রতিস্থাপনের যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়। তড়িঘড়ি সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিছু পরীক্ষা ত্রিপুরাতে হয় না সেগুলি বহিরাজ্য থেকেও করানো হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। আর তারপরেই আজকের দিনটি নির্ধারণ করা হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য।

তিনি আরো জানিয়েছেন, এই রোগীর আয়ুষ্মান কার্ড ছিল। যার ফলে এই কিডনি প্রতিস্থাপনের যাবতীয় খরচ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি মনিপুর থেকে যে সিজা ফাউন্ডেশন এর টিমকে আনা হয়েছে তাদেরও যাবতীয় খরচ ত্রিপুরা সরকার বহন করেছে। যদিও সিজা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কোন ধরনের ফি দাবি করেননি।

এদিনের এই কিডনি প্রতিস্থাপনে সিজা হাসপাতালের তরফে ছিলেন টিম প্রধান নেফ্রোলজিস্ট ডাঃ ডুলিভার্ড, ডঃ সমরেন্দ্র, ড: কেনিডি, ডা: মহারমম মেহেলে, ডা: দীনেশ, ডক্টর রুপু, নার্সিং অফিসার রেমাপুকম, প্রেম কুমার সিং, সগ্রাম রিফাস্প, টেকনিশিয়ান ইনোবিসি এবং নরেশ।

এদিকে প্রতিস্থাপনে রাজ্যের পক্ষে টিমে ছিলেন ইউরোলজিস্ট ডাঃ বিজিত লোধ, নিউরোলজিস্ট ডাঃ মুকুট দেবনাথ, নেফ্রলজিস্ট ডাঃ মানষ গোপ, নেফ্রলজিস্ট ডাঃ সমরেশ পাল, এনেস্থশিওলজিস্ট ডাঃ তপন দেববর্মা, ডাঃ ভাস্কর মজুমদার, ডাঃ অনুপম চক্রবর্তী, নার্সিং অফিসার দীপ্তনু সূত্রধর, ঈশান দেব, সুমিতা সিংহ, প্রসেনজিৎ মহাজন, নবজিৎ ত্রিপুরা। এছাড়াও সম্পূর্ণ সুপারভাইজারের দায়িত্বে ছিলেন নার্সিং অফিসার হিমাদ্রি কর, তপতী চক্রবর্তী।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপনই নয়, লিভার প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রথম সফল কিডনি প্রতিস্থাপনে রাজ্যের অন্যান্য রোগীরাও রাজ্যেই কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এগিয়ে আসবেন। এই উদ্যোগ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *