নিজস্ব প্রতিনিধি, চড়িলাম, ২৮ জুন: চিনির গাড়ি ধাক্কায় এখনো পর্যন্ত মৃত্যু হয় সাত জন, আহত ২১ জনের অধিক। এরপরেও বন্ধ নেই চিনির বাণিজ্য। বৃহস্পতিবার রাতে চিনি পাচারকারীদের গাড়ির চাপায় এক বাইক আরোহীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভে পরিণত হয় বিশালগড়ের চেলিখলা এলাকা। পুলিশ জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশের দুটি গাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নি সংযোগ হয়।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার রাতে বিশালগড় থানাধীন চিলিখলা এলাকায় দ্রুতগামী চিনি বোঝাই বোলেরো গাড়ির ধাক্কায় টিআর০৭ ০৫১৫০ নম্বরের বাইকে থাকা দুজন ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে বিশালগড় অগ্নিনির্বাপক দপ্তরের কর্মীরা আহত দুজনকে ঘটনাস্থল থেকে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাইক চালক বিষ্ণু লোধকে মৃত বলে ঘোষণা করে এবং ওপর সহযাত্রী বিজয় দাসকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জিবিপি হাসপাতালের রেফার করে দেয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় চেলিখলা এলাকায়। স্থানীয় উত্তেজিত জনতা রাস্তা অবরোধ করে টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় বিশালগড় মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পান্না লাল সেন, বিশালগড় থানার ওসি রানা চ্যাটার্জি সহ বিশাল পুলিশ টিএসআর এবং সিআরপিএফ বাহিনী। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাস্তা অবরোধ শুরু হলেও রাত প্রায় এগারোটা পর্যন্ত সড়কে অবরোধমুক্ত করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ।
পরে বিশালগড় থানার একটি জিপসি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটলে পরিস্থিতি অন্যরকম মোড় নেয়। পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ শুরু করলে অপর পাশ থেকে পুলিশের উপর ইট পাটকেল ছুড়া শুরু করে বিক্ষুব্ধ অবরোধকারীরা। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভের মোড় নেয়। অবরোধকারীরা পাল্টা ধাওয়া করে পুলিশকে।
স্থানীয়দের দাবরানি খেয়ে এসডিপিও এবং বিশালগড় থানার ওসি সহ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশালগড় থানার দুই দুটি গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে পুলিশ পাল্টা ধাওয়া করলে আগুনের হাত থেকে রেহাই পায় গাড়িগুলো।
ঘটনাস্থলে বিশালগড় থানার ওসির গাড়িও ভাঙচুর হয়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে সিপাহীজলা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব সূত্রধর। সিআরপিএফ জওয়ানরা পালটা ধাওয়া করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় বিশালগড়ের বিধায়ক সুশান্ত দেব। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিশালগড়ের চিনির কারবার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনায় যারা অভিযুক্ত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
শুক্রবার এই কান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাকেশ বর্মণ, ইউসুফ নবী, গোপাল বণিক,অভিজিৎ বর্মণ, দীপঙ্কর বর্মণ নামের পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পাঠানো হয় আদালতে। বিশালগড় থানায় ৪১/২০২৪ নাম্বার মামলায় ৩৪১,১৪১,১৪৮,১৪৯/,৭২৪/৪৩৫/৩৫৩/৩৩৩/৩০৭/১২০ (বি)৩৪ আইপিসি ধারায় লিপিবদ্ধ হয়। আদালত পাঁচজনকেই ৩রা জুলাই পর্যন্ত জেল কাস্টিটিতে পাঠায়।