BRAKING NEWS

টানা আট দিন পর দেখা রোদের, নদীতে কমছে জল, করিমগঞ্জে সামান্য উন্নতি বন্যা পরিস্থিতির

করিমগঞ্জ (অসম)২১ জুন (হি.স.) : টানা আট দিন পর, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেখা মিলেছে রোদের। ফলে করিমগঞ্জ জেলার প্রধান তিনটি নদী লঙ্গাই, কুশিয়ারা এবং সিংলার জল কমছে। তাই কিছুটা উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। তবে কিছু কিছু নতুন নতুন নিচু এলাকায় জল ঢুকছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বৃষ্টির জমা জল এবং বন্যায় জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয় জলমগ্ন হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার প্ৰতি লক্ষ্য রেখে গত ১৯ জু থেকে ২২ জুন পর্যন্ত জেলার সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছিলেন করিমগঞ্জের জেলাশাসক মৃদুলকুমার যাদব।

বন্যার দরুন সুপ্রাকান্দি এলাকার বহু মানুষ আজও জাতীয় সড়কে অস্থায়ী তাবু খাটিয়ে অবস্থান করছেন। তবে গতকাল বৃহস্পতি এবং আজ শুক্রবার, দুদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বানভাসিরা স্বগৃহে ফেরার কিছুটা আশার আলো দেখছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে এফএন রোডের প্রথম কিলোমিটার অংশ বন্যার জলে তলিয়ে গিয়েছিল। বিপজ্জনক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের সুরক্ষার খাতিরে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল পূর্ত দফতর। এছাড়া বাগুয়া সড়ক হয়ে বিএ সড়ক থেকে রুপসিবাড়ি কুচিরকোণা সড়ক এবং নয়াগ্রাম থেকে টিকরপাড়া সড়কে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

করিমগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন সুপ্রাকান্দি থেকে পোয়ামারা পর্যন্ত জাতীয় সড়কে সব ধরনের যানবাহনের চালককে গতি নিয়ন্ত্রণ করে চলাচল করতে আহ্বান জানিয়েছে।

উত্তর এবং দক্ষিণ করিমগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন সাংসদ কৃপানাথ মালাহ সহ জেলা বিজেপি নেরারা। বিভিন্ন শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন, সুপ্রাকান্দি জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থানকারী মানুষজনের মধ্যে ত্রিপল বণ্টন সহ অতিরিক্ত জেলাশাসক ধ্রুবজ্যোতি পাঠকের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন সাংসদ কৃপানাথ।

তাছাড়া শুক্রবার লঙ্গাই রেলস্টেশন সহ শহরের বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করে বন্যার্তদের খোঁজ নিয়েছেন জেলাশাসক মৃদুলকুমার যাদব। বানভাসিদের সেবায় পানীয় জল এবং রান্নাকৃত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের করিমগঞ্জ ডিভিশনের পক্ষ থেকে।

জেলা কংগ্রেস, বিজেপি যুবমোর্চা, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলি করা হচ্ছে।

গত ৪৮ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আজ শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত লঙ্গাই নদীর জলস্তর ২২.৪৪ মিটার, সিংলার ১৭,৫১৫ মিটার এবং কুশিয়ারা নদীর জলস্তর ১৫.৫৪ মিটার।

আসাম স্টেট ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এএসডিএমএ)-র বুলেটিনে জানানো হয়েছে, করিমগঞ্জ জেলার পাঁচটি রাজস্ব সার্কলের ২৭৯টি গ্রাম এখনও জলের তলায়। উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে সীমান্ত শহর, উত্তর এবং দক্ষিণ করিমগঞ্জের। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে ১,৩৯৮.‌০৫ হেক্টর চাষের জমি জলে ভাসছে।

প্রাপ্ত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রামকৃষ্ণনগর রাজস্ব সার্কলে ৫২,৫৬১, পাথারকান্দিতে ১৪,৭৪৩, বদরপুরে ৩৯,৫০২, নিলামবাজারে ৫৮,৪৩৩ এবং করিমগঞ্জ সদর রাজস্ব সার্কলে ৮৯,৩৮৩ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে, করিমগঞ্জ জেলায় বন্যার কবলে পড়েছেন ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬২২ জন। ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে যতাক্রমে পাথারকান্দিতে একটি, রামকৃষ্ণনগরে ১২টি, নিলামবাজারে ২০টি, বদরপুরে ১৩টি এবং করিমগঞ্জ সদর সার্কলের অধীনে ৩৪টি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট ৮০টি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছিল। আজ আরও পাঁচটি নিয়ে মোট ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা ৮৫। সব মিলিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১১ হাজার ৪৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪.৫৩৮, মহিলা ৩.৪৭৯, শিশু ৩.৪৪৩, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ১৭ এবং বিশেষভাবে সক্ষম দুজন। তাছাড়া জেলায় মোট রিলিফ সেন্টার রয়েছে ৪৯টি। ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম রয়েছে ১১টি।

বন্যায় প্রভাবিত মানুষজনকে ত্রাণ শিবিরে প্রশাসনের তরফ থেকে তিনদিনের জন্য থেকে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলি করা হয়েছে। পাশাপাশি সবকয়টি গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকায় সচিব মারফৎ ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুকে বাঁচাতে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে এসডিআরএফ।

জেলাশাসক মৃদুল যাদব জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া রয়েছে। বন্যাৰ্তদের সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের উদ্ধারকার্য, ত্রাণ শিবির খোলা, ত্রাণ সামগ্ৰী বণ্টন, মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান, পানীয় জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি করা হচ্ছে। দরকার হলে ত্ৰাণ শিবিরের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। জেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত ভাণ্ডার মজুত রয়েছে। পাশাপাশি রান্নার গ্যাস ও পেট্রোল-ডিজেলেরও পর্যাপ্ত পরিমণে মজুত রয়েছে, জানান জেলাশাসক মৃদুল যাদব। তিনি বলেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। শনবিল সহ নদী সংলগ্ন এলাকাগুলির মানুষজনকে সতর্ক থাকতে মাইকযোগে প্রচার করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *