BRAKING NEWS

বারাণসীতে পিএম কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের ১৭তম কিস্তিতে ২০,০০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ এবং স্ব-সহায়ক দলের ৩০ হাজারেরও বেশি মহিলাকে ‘কৃষি সখি’ হিসেবে শংসাপত্র প্রদান

এখন মনে হচ্ছে মা গঙ্গাও আমাকে দত্তক নিয়েছেন : প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি, ১৮ জুন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে দেশের প্রায় ৯.২৬ কোটি সুবিধাপ্রাপক কৃষককে পিএম কিষান সম্মান নিধি যোজনার ১৭তম কিস্তি হিসেবে ২০,০০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সহায়তা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রদান করলেন| অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্বসহায়ক দলের ৩০ হাজারেরও বেশি মহিলাকে ‘কৃষি সখি’ হিসেবে শংসাপত্র প্রদান করেন| সারা দেশের কৃষকদেরকে এই অনুষ্ঠানে প্রযুক্তির মাধ্যমে সারসরি যুক্ত করা হয়েছে|

কিষান সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রথম সফরে কাশীর জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। টানা তৃতীয়বারের মেয়াদের জন্য তাঁকে বেছে নেওয়ার জন্য তিনি তাঁদের ধন্যবাদ জানান। কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এখন মনে হচ্ছে মা গঙ্গাও আমাকে দত্তক নিয়েছেন এবং আমি কাশীর জন্য স্থানীয় মানুষ হয়ে উঠেছি|”

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, সদ্য সমাপ্ত অষ্টাদশ লোকসভার সাধারণ নির্বাচন বিশালতা, সক্ষমতা, ব্যাপকতা এবং বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ভারতের গণতন্ত্রের শিকড়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিল । এই নির্বাচনে ৬৪ কোটিরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের নির্বাচন অন্য কোথাও হয় না, যেখানে নাগরিকদের বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ দেখা যায়। সম্প্রতি ইতালিতে জি-৭ সম্মেলনে তাঁর সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে ভোটারদের সংখ্যা সমস্ত জি-৭ দেশের ভোটারদের তুলনায় দেড় গুণ বেশি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমস্ত সদস্য দেশের ভোটারদের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। প্রধানমন্ত্রী মোদী নির্বাচনে ৩১ কোটিরও বেশি মহিলা ভোটারদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি কোনো একটি দেশের হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ মহিলা ভোটারের সংখ্যা। তিনি আরও বলেন যে, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র জনসংখ্যার কাছাকাছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের গণতন্ত্রের শক্তি ও সৌন্দর্য সমগ্র বিশ্বকে শুধু আকর্ষণই করে না, বিশ্বের উপর প্রভাবও ফেলে|” গণতন্ত্রের উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য এবং একে ব্যাপকভাবে সফল করার জন্য বারাণসীর জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বারাণসীর জনগণ শুধুমাত্র একজন সাংসদকেই নয়, একজন প্রধানমন্ত্রীকেও নির্বাচিত করেছেন|”

এক নাগাড়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত সরকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচনী ফলাফলকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের গণতন্ত্রের মধ্যে এটি একটি বিরল কীর্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ধরনের হ্যাটট্রিক ভারতে ৬০ বছরেরও বেশি আগে ঘটেছিল”| প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের মতো দেশে যেখানে যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষা বেশি, সেখানে যদি ১০ বছরের শাসনের পর কোনও সরকার ক্ষমতায় পুনরায় ফিরে আসে, তাহলে তা বিশাল বিজয় এবং তা হয়েছে বিপুল আস্থাভোটের জন্য। আর আপনাদের এই আস্থা জ্ঞাপন আমার কাছে সবচেয়ে বড় মূলধন এবং দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তা আমাকে শক্তি জুগিয়ে চলে |” 

প্রধানমন্ত্রী উন্নত ভারতের প্রধান স্তম্ভ হিসাবে কৃষক, নারীশক্তি, যুবসমাজ এবং দরিদ্রদের প্রতি গুরুত্ব দানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং স্মরণ করেন যে, এজন্য এবার সরকার গঠনের পর সরকারের প্রথম সিদ্ধান্তটি ছিল কৃষক ও দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিএম আবাস যোজনা বা পিএম কিষাণ সম্মান নিধির আওতায় ৩ কোটি অতিরিক্ত পরিবারের বিষয়ে এই সিদ্ধান্তগুলি কোটি কোটি মানুষকে সহায়তা করবে।

প্রধানমন্ত্রী  অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত কৃষকদের এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন তাঁদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, কয়েক কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তিনি কৃষি সখী উদ্যোগকে ৩ কোটি ‘লাখপতি দিদি’ তৈরির দিকে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসাবে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উদ্যোগ সুবিধাপ্রাপ্ত মহিলাদের যেমন মর্যাদা দেবে তেমনি নিশ্চিত আয়ের উৎস পাওয়ার নিশ্চয়তা দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পিএম কিষান সম্মান নিধি বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্প হিসাবে পরিণত হয়েছে”। এর অধীনে কোটির অধিক কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখন পর্যন্ত ৩,২৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সাহায্য  পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র বারাণসীর কৃষক পরিবারদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে মোট  ৭০০ কোটি । প্রধানমন্ত্রী যোগ্য সুবিধাভোগীদের কাছে সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রশংসা করেন এবং বিকাশিত ভারত সংকল্প যাত্রার কর্মসূচিতকেও এর জন্য কৃতিত্ব দেন। কারণ এর মাধ্যমে ১ কোটিরও বেশি কৃষককে পিএম কিষাণ প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই যোজনায় কৃষকদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে নিয়ম-কানুন সরলীকরণ করা হয়েছে। শ্রী মোদী আরও বলেন, “উদ্দেশ্য ও বিশ্বাস সঠিক জায়গায় থাকলে কৃষক কল্যাণের সঙ্গে যুক্ত কাজ দ্রুত গতিতে হয় । করা সম্ভব হয়” ।

একবিংশ শতাব্দীতে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করতে কৃষি-বাস্তুতন্ত্রের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী ডাল ও তৈলবীজের ক্ষেত্রে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং আত্মনির্ভরতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বিশিষ্ট কৃষি রপ্তানিকারক হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই অঞ্চলের স্থানীয় পণ্যগুলি একটি বিশ্ব বাজার খুঁজে পাচ্ছে এবং প্রতিটি জেলায় ‘এক জেলা এক পণ্য প্রকল্প’ এবং রপ্তানি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিতে জিরো ডিফেক্ট-জিরো এফেক্ট মন্ত্রের উপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমার স্বপ্ন হল, সারা বিশ্বের প্রতিটি খাবার টেবিলে যাতে অন্তত একটি ভারতীয় খাদ্য থাকে । তিনি আরও বলেন, কিষাণ সমিতি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে বাজরা, ভেষজ পণ্য এবং প্রাকৃতিক চাষকে মদত দিতে একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক মহিলাদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে তাঁদের গুরুত্ব ও সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন এবং তাঁদের অবদান বাড়াতে কৃষির পরিধি সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, একই লক্ষ্যে কৃষি সখী কর্মসূচি ড্রোন দিদি কর্মসূচির মতোই একটি পদক্ষেপ। আশা কর্মী এবং ব্যাঙ্ক সখী হিসাবে মহিলাদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এখন কৃষি সখী হিসাবে তাঁদের সক্ষমতা দেখতে পাবে । প্রধানমন্ত্রী কৃষি সখী হিসাবে স্ব-সহায়তা গোষ্ঠীগুলিকে ৩০,০০০ এরও বেশি শংসাপত্র দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, বর্তমানে যে প্রকল্পটি ১১টি রাজ্যে চলছে তা সারা দেশের হাজার হাজার স্ব-সহায়তা গোষ্ঠীর সাথে সংযুক্ত হবে এবং ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *