BRAKING NEWS

সরকারি অফিস থেকে জাল নোট বিতরণের গুরুতর অভিযোগ গ্রামবাসীর, আটক পোস্টমাস্টার

নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ১০ মে: এবারে সরকারি অফিস থেকে জাল পাঁচশো টাকার নোট সাধারণ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে বলে গ্রামবাসীরা প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেন। তাও আবার খোদ পোস্ট অফিস থেকে পোস্টমাস্টার সেই জাল টাকার নোট সাধারণ মানুষের কাছে বিলি করছেন, এমনি অভিযোগ গ্রামবাসীদের।

এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টারকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। যদিও অভিযুক্ত পোস্টমাস্টার এব্যাপারে সঠিক কোনো মন্তব্য করেননি। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গ্রামে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনা কৈলাসহরের সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। কৈলাসহর থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে।

কৈলাসহরের সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পাশে অবস্থিত ভদ্রপল্লী শাখা ডাকঘর অফিস। এই ভদ্রপল্লী শাখা ডাকঘর অফিসে পোস্টমাস্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা সুজন মন্ডল। গ্রামবাসীরা জানান যে, ইদানীংকালে সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর জাল টাকার নোট পাওয়া যাচ্ছে। এই জাল টাকার নোট পাওয়ার খবর গোটা সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চাউর হতেই কিছু সংখ্যক গ্রামবাসীরা নিজেরা সতর্ক হয়ে গিয়ে নিজেদের মতো করে তদন্ত করতে মাঠে নামেন।

গ্রামবাসীরা জানান, ভদ্রপল্লী শাখা ডাকঘর অফিস থেকে প্রতিদিন গ্রামের সাধারণ মানুষেরা নিজেদের একাউন্টে জমানো টাকা থেকে নিজেদের প্রয়োজনে টাকা তুলতে ভদ্রপল্লী শাখা ডাকঘর অফিসে আসেন। সাধারণ মানুষেরা নিজেদের একাউন্ট থেকে টাকা নেবার সময় পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডল জাল টাকার নোট দিয়ে দিচ্ছেন বলে গ্রামবাসীরা প্রকাশ্যেই অভিযোগ জানান।

ইদানীং কালে প্রায় প্রতিদিন ভদ্রপল্লি শাখা ডাকঘর অফিস থেকে যেসব গ্রাহকেরা নিজেদের একাউন্ট থেকে টাকা তুলছেন তাদের সবাইকে অরিজিনাল টাকার সাথে জাল টাকার নোট পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডল দিয়ে দিচ্ছেন বলে গ্রামবাসীরা জানান। গ্রামবাসীরা আরও জানান যে, গতকাল নয় মে বৃহস্পতিবার ভদ্রপল্লী শাখা ডাকঘর অফিস থেকে গ্রামের এক মহিলা নিজের একাউন্ট থেকে টাকা তোলার সময় অরিজিনাল টাকার সাথে জাল একটি পাঁচশো টাকার নোট দিয়েছেন। এবং দশ মে শুক্রবার দুপুরে গ্রামের এক যুবক ভদ্রপল্লী শাখা ডাকঘর অফিস থেকে পাঁচ হাজার দুইশো টাকা নিজের একাউন্ট থেকে তোলার সময় এই যুবককে একটি দুইশো টাকার নোট এবং দশটি পাঁচশো টাকার নোট দিয়েছিলো পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডল।

এই দশটি পাঁচশো টাকার নোট এবং একটি দুইশো টাকার নোট নিয়ে যুবকটি ভটের বাজারের এক দোকানে জিনিস ক্রয় করার সময় দেখা যায় দশটি পাঁচশো টাকার নোটের মধ্যে একটি জাল পাঁচশো টাকার নোট ছিলো । এরপর এই যুবকটি পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডলের কাছে এসে জাল নোটটি পাল্টে দেবার কথা বলার পর পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডল নাকি যুবকের সাথে অশ্লীল আচরণ করেন বলে গ্রামবাসীরা জানান।

যদিও পরবর্তী সময়ে গ্রামবাসীদের চাপে পড়ে জাল পাঁচশো টাকার নোটের পরিবর্তে আসল পাঁচশো টাকার নোট পাল্টে দিয়েছেন বলেও গ্রামবাসীরা জানান। এই ঘটনায় শুক্রবার দিনভর সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস প্রাঙ্গণে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করেছে। পরবর্তী সময়ে গ্রামবাসীরা কৈলাসহর থানায় খবর দেওয়ার পর কৈলাসহর থানার পুলিশ অফিসার মতিলাল মালাকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ এবং টি.এস.আর বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও সেই সময় ঊনকোটি জেলার জেলাসদর কৈলাসহরের মূখ্য ডাকঘরের এক মহিলা আধিকারিক ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীদের সাথে সাবলীল কথা বলায় উপস্থিত গ্রামবাসীরা মহিলা আধিকারিকের উপর উত্তেজিত হয়ে মহিলা আধিকারিককে ঘরের ভিতরে রেখে তালাবন্ধী করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

পরবর্তী সময়ে পুলিশ অফিসার মতিলাল মালাকারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী অভিযুক্ত পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডলকে কৈলাসহর থানায় নিয়ে আসে। অভিযুক্ত পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডলের সাথে মূখ্য ডাকঘরের মহিলা আধিকারিকও জাল নোটের কারবারের সাথে জড়িত বলে উপস্থিত গ্রামবাসীরা জানান। 

এব্যাপারে অভিযুক্ত পোস্টমাস্টার সুজন মন্ডলকে জিজ্ঞেস করলে সুজন মন্ডল জানান যে, কেউ অভিযোগ করলেই কি অভিযুক্ত হয়ে গেলাম নাকি?  এই কথা বলে সুজন মন্ডল নিজেকে সাংবাদিকদের সামনে থেকে সরিয়ে নেন। তিনি মুখ খুলতে নারাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *