BRAKING NEWS

রবিবারের ঝড়ে গোটা রাজ্যে মোট ৭৯২টি বসতঘর ক্ষতির সম্মুখীন, মৃত্যু ২ জনের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ মার্চ:  রবিবার সকালে আচমকা ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। বিভিন্ন মহকুমায় বাড়ি ঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। ঝড়ের দাপটে নিজেদের বসতভিটা হারিয়েছেন অনেকেই। বিভিন্ন জেলায় এই সংখ্যা বিভিন্ন রকম। এদিকে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে এদিন মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। গত এক মাসের পাওয়া তথ্যে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা মোট ৬ জন।

রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তরফে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে গোটা রাজ্যে মোট ৭৯২টি ঘর রবিবার সকালে এই প্রাকৃতিক তাণ্ডবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৬২ টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫৯ টি ঘর অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৫৭১টি ঘরের কিছু অংশ ঝড়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ছোট বড় বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির বিক্ষিপ্ত ঘটনা উঠে এসেছে গোটা রাজ্য থেকেই। 

উদয়পুরে এদিনের ঝড়ে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে দুই ব্যক্তির। মৃতরা হলেন, – মাখন দাস(৫৯), কাঁকড়াবন, শ্যামল দেবনাথ(৪৮), দক্ষিণ রাজনগর।

সিপাহিজলা জেলায় এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবথেকে বেশি। এই জেলার বিশালগড় মহকুমায় রবিবারের সকালের ঝড় – তুফানের জেরে এই ক্ষতির পরিমাণ গোটা রাজ্যে সবচেয়ে বেশি। এই মহকুমার মোট ৩৫৫ টি ঘর ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে অত্যধিক ক্ষতি হয়েছে ৬০টি ঘর, আংশিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ২৬০ টি ঘর, বাকি ৩৫টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে এই ঝড়ের তাণ্ডবে। 

জম্পুইজলা মহকুমা মোট ২৩ টি ঘর ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১৪ টি ঘর অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বাকি ৯ টি ঘরের কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোনামুড়া মহকুমায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ১৪ টি যার মধ্যে ৫ টি ঘরে ক্ষতির পরিমাণ বেশি এবং বাকি ৯টি ঘর কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ঊনকোটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ১৪ টি। কুমারঘাট মহকুমায় মোট ১৩ টি ঘর এ দিনের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি ঘরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৈলাসহর মহকুমায় এই সংখ্যা একটি। উত্তর জেলায় ঝড়ের তান্ডবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। 

এ দিনের ঝড় বৃষ্টির ফলে ধলাই জেলার বিভিন্ন মহকুমাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধলাই জেলার গন্ডাছড়া মহকুমার মোট ২৭টি ঘর এ দিনের ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ক্ষতি হয়েছে তিনটে ঘর এবং বাকি ২৪টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্যে জানা গেছে। 

একইভাবে লংতরাইভেলি এবং কমলপুর মহকুমায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা যথাক্রমে ১৪ এবং ৮৩। লংতরাইভেলি মহকুমায় অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুটি বসত বাড়ি এবং বাকি ১২ টি বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। 

অন্যদিকে কমলপুর মহকুমায় মোট ৮৩ টি  ঘরের মধ্যে অত্যধিক ক্ষতি হয়েছে ৩২ টি ঘরের, বাকি ৫১ টি ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। 

পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়া মোটা ১৮টি ঘর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার মধ্যে একটি ঘরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বাকি ১৭ টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিম জেলা মোট তিনটি ঘর এদিনের ঝড় বৃষ্টিতে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোহনপুরে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১১৭ টি ঘর, অধিকাংশ ৩৪ টি ঘরের এবং ২৫ টি ঘর সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

খোয়াই জেলাতেও এই ঝড়ের প্রভাব নেহাত কম নয়। হয় জেলার তেলিয়ামুড়া  মহকুমায় ভারী বৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ২৮ টি। যার মধ্যে একটি ঘরের অধিকাংশ জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাকি ২৭ টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তেলিয়ামুড়ার আর ডি  ব্লকের অন্তর্গত দুর্গাধন পাড়া স্কুলে একটি শরনার্থী ক্যাম্প খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ২৩ জন গণ আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। যাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলা রয়েছেন।

খোয়াইয়ে ঝড় তুফানের জেরে পাঁচটি ঘরের মধ্যে একটি ঘর অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত এবং বাকি চারটি ঘরও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোমতী জেলার করবুকে মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা দশটি। যার মধ্যে ছটি ঘরের প্রায় অধিকাংশই ভেঙে গেছে বাকি চারটি ঘরের কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অমরপুর মহকুমায় এই সংখ্যা ১৪। যার মধ্যে ১৩টি ঘরের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি বাকি একটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে। 

দক্ষিণ ত্রিপুরার শান্তির বাজারে রবিবারের ঝড় বৃষ্টির জেরে আটটি ঘরের অধিকাংশই ক্ষতির সম্মুখীন বলে খবর মিলেছে। রাজ্যজুড়ে ৬১৬ টি পরিবারের রবিবারের এই ঝড়ের তাণ্ডবে মাথায় হাত। নিজেদের প্রায় সর্বস্বই হারিয়েছেন ৩৭টি পরিবার। যদিও সরকার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। 

এদিকে রাজ্য সরকার দ্বারা প্রদত্ত তথ্যে জানা গেছে ২৩মার্চ ২০২৪ থেকে ৩১মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত  বজ্রাঘাতে ধলাই জেলায় মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের তথ্যের নিরিখে ঝড় বৃষ্টি এবং তুফানের জেরে মোট ১০১টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যে। ৪২৯ টি ঘর অধিকাংশ ক্ষতির সম্মুখীন। ৬৪৩৩টি ঘর শিলাবৃষ্টি,বজ্রপাত, ঝড় বৃষ্টির জেরে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে এখনো পর্যন্ত ১৭৫৩ টি পরিবারকে সাহায্য প্রদান করেছে রাজ্য সরকার। মোট ৭১ লক্ষ ৫১৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে বিভিন্ন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ জনগণকে।

যার মধ্যে এখনো পর্যন্ত ধলাই জেলায় ৬০ হাজার টাকা, উনকোটি জেলায় ১.৩২ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ১ লক্ষ টাকা, সিপাহীজলা জেলায় ৬৭.৪৯৫ লক্ষ টাকা, এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ১.১০ লক্ষ টাকা সাহায্য প্রদান করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *