BRAKING NEWS

নির্বাচনী আচরণ বিধি ও প্রায়োগিক দিক

সংসদের অষ্টাদশতম নির্বাচনের নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির তৎপরতা যথারীতি শুরু হয়ে গেছে। নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার মাধ্যমে জনগনেশের আশীর্বাদ চায় সব দল। এটি পরম্পরা। আর সমগ্র ভোট প্রক্রিয়াকে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে সাধারণ ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই বিষয়গুলি দেখার দায় পালন করবেন নির্বাচন কমিশন- এটাও আমাদের দেশের রীতি বা প্রথা। সবাই জানি ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশন মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট চালু করে থাকে। মানে নির্বাচনী আচরন বিধি। যিনি বা যে দলগুলি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে তাঁদের জন্য এই নির্বাচনী আচরন বিধিতে বিভিন্ন গুরুত্বিপূর্ণ নির্দেশিকা দেওয়া আছে। নির্বাচন কমিশন এই আচরন বিধির ভূমিকায় উল্লেখ করে যে, রাজনৈতিক দলগুলি মোটামুটিভাবে এই সমস্ত বিধিই মেনে চলে এসেছে এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তা নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করেছে| কমিশন এও বলেছে যে, এই আচরণ বিধি চালুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনের সময় সমস্ত দল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সামনে সুযোগ-সুবিধার পাওয়ার ক্ষেত্রে অভিন্ন উপস্থিত করা।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে কেরল বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রথমবার আদর্শ আচরণবিধি গৃহীত হয়েছিল। ১৯৬২ সালে, তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে, নির্বাচন কমিশন এই কোডটি সমস্ত স্বীকৃত রাজনৈতিক দল এবং রাজ্য সরকারগুলির পাঠায়, এবং এব্যাপারে সহমত তৈরির জন্য রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির সাথে এনিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দেয়। রাজনৈতিক দলগুলি ওই সাধারণ নির্বাচনেই, ১ম বারের মতো, এম সি সি-র বিধানগুলি গ্রহণ করে এবং পালন করে| ১৯৯১ সালে নির্বাচনর প্রাক্কালে কমিশন কোডটিকে আরো সংহত কর এবং সেই সময় থেকে কমিশন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য এম সি সি-র বিধান অক্ষরে অক্ষরে কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করে আসছে।

আচরণ বিধির মূল কেন্দ্র বিন্দু হলো- সরকার পক্ষকে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার থেকে বিরত রাখা এবং পাশাপাশি বিরোধী দল বা প্রার্থীর জন্যও এইসব বিধিনিষেধ কার্যকর করা। অর্থ, উপঢৌকন, ডোল নিয়ে বা পেশীশক্তি বা ভয় প্রদর্শন করে যাতে কেউ ভোট প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য প্রার্থীদের গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রন বা নজরদারিও এই মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট বা আচরণবিধি চালুর একটি উদ্দেশ্য। যে কোনও দল বা নাগরিক যদি মনে করেন ভোটের জন্য আদর্শ আচরণ বিধি ভাঙ্গা হচ্ছে তাহলে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। সেই অনুযায়ী তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। দলগুলির পক্ষে কমিশনের দফতরে গিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো সম্ভব হলেও সাধারণ নাগরিকদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কমিশন অনলাইনে অভিযোগ জানানোর জন্য মোবাইল অ্যাপ চালু করে রেখেছে।
অষ্টাদশ নির্বাচন এর প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের জন্য ভোটের প্রচার চলছে। এরই মধ্যে সারা দেশ থেকেই নির্বাচন কমিশনে নানান অভিযোগ জমা পড়ছে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের। নির্বাচন কমিশনের এই সংক্রান্ত সর্বশেষ যে বিবৃতি পাওয়া যায় , তাতে জানা গেল অনলাইন অভিযোগ জানানোর যে মোবাইল অ্যাপ C- Vigil তাতে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মোট ৭৯ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্য সিংহ ভাগ অভিযোগের নিষ্পত্তি করাও হয়ে গেছে। অভিযোগ জমা পড়ার এক্শো মিনিটের মধ্যে ৮৯ শতাংশ অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। সর্বমোট ৯৯ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।

বিবরনে জানা যায় ৭৩ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৫৮ হাজার ৫০০ টি অভিযোগ রয়েছে বে আইনিভাবে পোস্টার, হোর্ডিং সাঁটানো নিয়ে, ১৪০০ এর মতন অভিযোগে বলা হয়েছে, টাকাকড়ি, উপঢৌকন, নেশাদ্রব্য দিয়ে ভোটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টার। ৫৩৫ টি অভিযোগে বলা হয়েছে অস্ত্র দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শনের। এর বাইরে এক হাজারের কিছু বেশি অভিযোগে বলা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে দেওয়াল লেখন ও নির্ধারিত সময়ের পরেও প্রচার চালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে। নির্বাচন কমিশন দেশের ভোটারদের প্রতি সচেতনতামূলক আহ্বান জানিয়ে বলেছে, কোথাও অনৈতিক কার্যকলাপ দেখামাত্র তাঁরা যেন নির্দ্বিধায় এই অ্যাপ এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেন।

কমিশন সুষ্ঠূ এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য কিছু বিষয়কে এমসিসি-তে অবশ্য পালণীয় বলে চিহ্নিত করেছে|ভোট প্রচারের সময়ে প্রতিপক্ষের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে আলোচনার বিষয়বস্তু সীমাবদ্ধ থাকবে প্রতিপক্ষ দলের নীতি ও কর্মসূচি, অতীতের রেকর্ড ও কার্যকলাপের ওপর। প্রচারে জাতপাত, সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ টেনে এনে ভোট চাওয়া যাবে না। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপরীক্ষিত কোনও অভিযোগ তোলা যাবে না, ভোটারকে উপঢৌকন বা ডোল প্রদান বা হুমকি প্রদর্শন করা যাবে না। কারো মতামতের প্রতিবাদ জানাতে বাড়ির সামনে বিক্ষোভ বা ধর্না দেওয়া বেআইনি ধরা হবে। কোনও দল কোথাও কখনো সভা করতে চাইলে পুলিশকে আগাম জানাতে হবে যাতে পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে। মিছিল, শোভাযাত্রার ক্ষেতের দুই বা ততোধিক দল যাতে মুখোমুখি না হয় বা সংঘর্ষ না ঘটে সেজন্য আয়োজকেরা আগাম অনুমতি নেবেন।শোভাযাত্রা ও মিছিলে প্রতিপক্ষের কুশপুতুল বহন বা পোড়ানো যাবে না।

ভোটের দিনে ভোট কেন্দ্রে সব দলের প্রতিনিধি যারা উপস্থিত থাকবে তাঁদের সঙ্গে পরিচয়পত্র অবশ্যই থাকবে তবে সেই পরিচয়পত্রে দলের নাম, প্রার্থীর নাম বা প্রতীক থাকবে না। নির্বাচন বিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনে পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করবে। প্রয়োজনে বা দরকারে ভোট প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে তাঁদের কাছে নিজেদের অভিযোগ জানাবেন।

ক্ষমতাসীন দলের জন্য বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে মডেল কোড অফ কন্ডাক্টে। কোনও মন্ত্রী কোনভাবেই তার সরকারি সফরের সঙ্গে নির্বাচনী কার্যকলাপ একসঙ্গে জুড়তে পারবেন না। সরকারি টাকায় কোনও দল ভোটের জন্য বিজ্ঞাপন, প্রচারণা করতে পারবে না। মন্ত্রী বা সরকারি কোনও কতৃপক্ষ এই সময়ে কোনও আর্থিক মঞ্জুরি, রাস্তা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না। অন্য দলগুলিও এই সময়ে সরকারি পরিসর বা বিশ্রামাগার ব্যবহার করতে পারবে, এই সব সম্পত্তিত্তে সরকার পক্ষের একতরফা দখলদারি থাকবে না। শুধুমাত্র মন্ত্রী নন,এই সময়ে শাসকদলের কোন চেয়ারম্যান, মেম্বারএর কথাবার্তা, গতিবিধি, খরচপাতিতেও আইইনানুসারে লাগাম দিতে আচরনবিধি কার্যকর করে রেখেছে নির্বাচন কমিশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *