BRAKING NEWS

সোমবার করিমগঞ্জে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে আশা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

করিমগঞ্জ (অসম) ১১ মার্চ (হি.স.) : করিমগঞ্জ জেলার আশা কর্মীদের নিরলস সেবা ও নিরন্তন প্রয়াসকে সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান করতে এবং তাদের উৎসাহিত করতে করিমগঞ্জের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য অভিযান ও জেলা স্বাস্থ্য সমিতির উদ্যোগে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা গ্রন্থাগার ভবনে জেলার ১২০৭ জন আশা কর্মীদেরকে নিয়ে “আশা সম্মেলন ২০২৪” অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, উদ্বোধনী সঙ্গীত ও প্রয়াত তিনজন আশা কর্মী রুবি বালা নাথ, বীণাবালা দেবী এবং মনি বেগমকে মঞ্চে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে এদিনের কার্যসূচির সূচনা করা হয়। এতে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন করিমগঞ্জের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব।

স্বাগত ভাষণ দেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ডিস্ট্রিক্ট মিডিয়া এক্সপার্ট সুমন চৌধুরী। তিনি বলেন তৃণমূল স্তরে সমাজের শেষ ব্যক্তিকে যারা নিঃস্বার্থভাবে অবিরত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেন তারা হচ্ছেন আশা কর্মী। আশা কর্মীরা প্রতিটি পরিবারে সদ্য বিবাহিত যুগলের পঞ্জীকরন, গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব পর্যন্ত প্রতিটি দায়িত্ব সঠিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে প্রসূতি মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমেছে। পাশাপাশি মাতৃ ও শিশুর টিকাকরণ, পুষ্টির তদারকি, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি এবং অসংক্রমিত অসুখ ডাইবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে আশা কর্মীরা সজাগতা অভিযানসহ সরাসরি কাজ করে যাচ্ছেন। তাই তাদের সেবা অপরিসীম বলে তিনি বর্ণনা করেন। মুখ্য অতিথির ভাষণে জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব বলেন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের তৃণমূল স্তরে সর্বদা উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়না, ওইসব স্থানে আশা কর্মীরা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানসহ সজাগতা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। যা খুবই প্রশংসনীয় এবং সম্মানের বিষয়। তাই প্রতিবছর আশা কর্মীদের সম্মান প্রদান করতে এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন করা হয় বলে জানান। এতে তিনি আশা কর্মীদের আগামী দিনগুলিতে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে আরও কিছু সংযোজন হচ্ছে, যার জন্য তাদের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করতে পরামর্শ দেন। পাশাপাশি আশা কর্মীদের যেকোন সমস্যা এবং তাদের কল্যাণে বিভিন্ন অনুদান সম্পর্কে অবগত হতে ও সুবিধা গ্রহন করতে আহ্বান জানান। এর জন্য প্রশাসনিক স্তরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে প্রশাসন থেকে আশা কর্মীদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। অন্যান্য অতিথির আসনে অতিরিক্ত মুখ্য চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. মতিন্দ্র সূত্রধর আশাদের দৃশ্যত চালিকা শক্তি ও রাস্তার প্রদীপ হিসেবে বর্ণনা করেন। আশাদের জন্য করিমগঞ্জ জেলা ইমিউনাইজেশনে এগিয়ে রয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি তিনি আশা কর্মীদের সেবা অপরিসীম বলে বর্ণনা করেন। এতে স্বাস্থ্য যুগ্ম সঞ্চালক ডা. রাজীব বরুয়া তার ভাষণে বলেন রাজ্যের মধ্যে করিমগঞ্জ জেলার আশা কর্মীদের জন্য জেলার স্বাস্থ্যসেবা প্রদর্শন একটি উচ্চ স্থানে রয়েছে। তিনি জানান আশা কর্মীদের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ পরিলক্ষিত করেছেন, এ প্রসঙ্গে কুষ্ঠ সনাক্তকরণে আশা কর্মীদের সক্রিয় ও নিরলস প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত মিনার্ভা দেবী আরামবাম আশা কর্মীদের নিরন্তর কাজের জন্য আয়ুষ্মান কার্ড বিতরণে করিমগঞ্জ জেলা রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বলে জানান। এতে তিনি কোভিড, বন্যা, নির্বাচন, ইমুনাইজেশন, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি অভিযান ইত্যাদির মত কার্যক্রমে আশা কর্মীদের সক্রিয় সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি প্রসঙ্গত আশা কর্মীদের একজন দক্ষ আধিকারিক থেকেও বেশি কাজ করার ক্ষমতা থাকা হিসেবে বর্ণনা করেন। এতে তিনি আশা কর্মীদের যেকোন সমস্যার সমাধানে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান। এদিনের সম্মেলনে আশা কর্মীদের উৎসাহিত করতে তিনটি প্যারামিটারের ভিত্তিতে জেলার প্রতিটি ব্লক পিএইচসি থেকে শ্রেষ্ঠ কাজের নিরিখে তিনজন আশা কর্মী এবং একজন সুপারভাইজারকে মানপত্র ও ট্রফি দিয়ে সম্মান জানানো হয। এতে গিরিশগঞ্জ ব্লক পিএইচসির অধীনে আশা কর্মী শরিফা বেগম, রত্না বেগম ও ছায়া বেগম যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং আশা সুপারভাইজার সাথী দাসকে পুরস্কার তুলে দিয়ে সম্মান জানানো হয়। পাশাপাশি, কচুয়াদাম ব্লক পিএইচসির অধীনে তাপসী দাস, হুসনা বেগম ও পেয়ারা বেগমকে এবং সুপারভাইজার অলকনন্দা নাথকে অনুরূপভাবে পুরস্কৃত করা হয়। এদিকে নিলাম বাজার ব্লক পিএইচসি অধীনে কল্পনা দাস, মঞ্জুনাথ ও জিবুন্নেসা এবং সুপারভাইজার ফেরদৌসী বেগম চৌধুরীকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুরূপভাবে পাথারকান্দি ব্লক পিএইচসির অধীনে আশা কর্মী সরিতা কানু, সামিনা বিবি ও বীণা গুনা এবং সুপারভাইজার জাহিদা বেগমকে পুরস্কৃত করা হয়। এদিকে রামকৃষ্ণ নগর ব্লক পিএইচসির অধীনে রিংকুরানি দাস, আমিনা বিবি ও আসমা বেগম এবং সুপারভাইজার শিল্পী দেবনাথকে পুরস্কৃত করা হয়।

এছাড়া করিমগঞ্জ শহরাঞ্চলের অধীনে আশা কর্মী অনিমা দাস, শিল্পী পাল এবং দীপা রানী দাসকে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে জেলা আয়ুক্ত সহ উপস্থিত অতিথিরা আশা কর্মী ও সুপারভাইজারদের হাতে এই সম্মান তুলে দেন। এদিনের সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালের অধীক্ষক ডা. লিপি দেব, ডিআইও ডা. বি কে সরকার, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশনের ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার হানিফ মোহাম্মদ কৌসর আলম, ব্লক পিএইচসিগুলির এসডিএম অ্যান্ড এইচও, ব্লক প্রোগ্রাম কর্ডিনেটর, আশা সুপারভাইজার ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সারাদিনব্যাপী কার্যসূচিতে আশা কর্মীরা সঙ্গীত, নৃত্য ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও পরিবেশন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *