পূর্ব বর্ধমান, ২৪ জানুয়ারি (হি.স.) : পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সম্ভাবনায় কার্যত ইতি টানলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বুধবার তিনি জানালেন, বাংলায় আইএনডিআই জোটের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তৃণমূল কংগ্রেসের। একাই লড়াই করবে তৃণমূল৷
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে যে আইএনডিআই জোট তৈরি হয়, সেই জোটে শরিক দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে বারবার রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নাম৷ কারণ, জোটের দুই শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূল এখানে যুযুধান দুইপক্ষ৷ কোনও কোনও মহল থেকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই দলের মধ্যে আলোচনা চলছে বলেও দাবি করা হচ্ছিল।
মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আমাদের (কংগ্রেস-তৃণমূলের) যে আসন বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া রয়েছে, তা চলছে। তার ফলাফল আসবে। ওই বিষয়ে আমি এখানে কোনও মন্তব্য করব না।’’ কিন্তু প্রায় এক নিঃশ্বাসে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘মমতাজির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ও দলের সম্পর্ক (রিস্তা) খুবই ভাল। হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রকম (বিতর্ক) হয়। আমাদের কেউ কিছু বলে দেন। ওঁদের কেউ কিছু বলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে সব এতে (আসন বোঝাপড়ায়) বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’’
তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার সরাসরি জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমার কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমার প্রস্তাব প্রথম দিনেই প্রত্যাখ্যান করেছে! আমার সঙ্গে কারও কোনও আলোচনা হয়নি। অ্যাবসোলিউটলি মিথ্যা কথা!’’
বুধবার বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে যাওয়ার আগে মমতাকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মমতা জানিয়ে দেন, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। সেখানেই না-থেমে তিনি বলেন, ‘‘এই যে আমাদের রাজ্যে আসছে, আমাকে তো এক বারও বলেনি!’’
মমতা বলতে চেয়েছেন রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র কথা। অসম থেকে রাহুল তাঁর যাত্রা নিয়ে বৃহস্পতিবারেই কোচবিহার দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করবেন। তার এক দিন আগে মমতার কথায় স্পষ্ট যে, ‘ইন্ডিয়া’র শরিক হিসেবে তৃণমূল ওই যাত্রায় অংশ নেবে না। এখন দেখার, এর পরে সিপিএম ওই যাত্রার অংশীদার হয় কি না।
মমতার বুধবারের মন্তব্যে এ-ও স্পষ্ট যে, তিনি ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে কংগ্রেসকে এক দিকে এবং অন্য আঞ্চলিক দলগুলিকে এক দিকে রাখছেন। মমতার কথায়, ‘‘আমরা আঞ্চলিক দলগুলো ভোটের পরে কী সিদ্ধান্ত নেব, তা ভোটের পরেই ঠিক করব। আমি তো ওদের (কংগ্রেসকে) বলেছিলাম ৩০০ আসনে লড়তে। বাকিটা আমরা সকলে মিলে লড়তাম।”
সোমবার রাহুলের বক্তব্যের পরে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট নিয়ে খানিকটা ‘ইতিবাচক’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেছিলেন। কিন্তু বুধবার মমতার বক্তব্যের পরে স্পষ্ট যে, পশ্চিমবঙ্গে কোনও জোট বা আসন সমঝোতা হচ্ছে না। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনেই প্রার্থী দিতে চলেছে তৃণমূল।