BRAKING NEWS

বড়জোড়া মিতালি সংঘের থিম “বৃদ্ধাশ্রম” দাগ কেটেছে জনমানসে

বাঁকুড়া, ২০ অক্টোবর (হি. স.) এবারের দুর্গাপূজায় বড়জোড়া মিতালি সংঘের বৃদ্ধাশ্রম থিম গভীর দাগ কেটেছে জনমানসে।

“খোকা তোর বাবার শরীরটা কেমন করছে” – কান্না জোড়ানো মেয়েলি কন্ঠস্বর কানে আসার পরমূহুর্তেই পুরুষ কন্ঠে নিদান “হাসপাতালে নিয়ে চল!” মহিলা বলে উঠলেন ডাক্তার ৭২ ঘন্টা সময় দিয়ে দিয়েছে।” তা আমি কি করব, বলছি তো টাকা পাঠাচ্ছি – পুরুষ কন্ঠের এই সংলাপ পুজোর মন্ডপের সামনে আসতেই শোনা যাবে। অডিওতে টেলিফোনিক এই সংলাপ শুনে হয়ত দর্শক চমকে উঠবেন গঙ্গাজলঘাটি থানার দুর্লভপুর মিতালী সংঘের মন্ডপে এসে। এই পুজো কমিটির সভাপতি বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ । ছোটো বেলা থেকেই এই ক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের মধ্যেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। তাই পুজোর কদিন তিনি মন্ডপ ছেড়ে কোথাও যাবেন না জানিয়ে সৌমিত্র খাঁ বলেন, আমাদের এই এলাকায় তখন সর্বজনীন দুর্গোৎসব ছিল না। অথচ মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মত পূর্ব ভারতের সর্ব বৃহৎ কারখানা এই দুর্লভপুরের বুকেই গড়ে উঠেছে।
এলাকাবাসীর দাবি মত মিতালী সংঘের অন্যতম সদস্য অমিয় খাঁ, সাধন মুখার্জি, জহর গোস্বামী, সজল চট্টরাজরা সর্বজনীন দুর্গা পুজো করার উদ্যোগ নেন। ১৯৯৫ সালে প্রথম বর্ষেই আকর্ষণীয় পুজো শুরু করে মিতালী সংঘ। গোটা উত্তর বাঁকুড়া ভেঙে জনস্রোত নেমে আসে সে সময়। তারপর থেকে বিরাট উৎসাহ নিয়ে এলাকায় বিগ বাজেটের পুজোয় ভিন্ন ধরনের থিমের উপহার দিচ্ছেন বলে জানান সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ।

এবারের পুজোর থিম বৃদ্ধাশ্রম। শিল্পী উৎপল দাস তার কর্মশালা ‘ওয়ান টাচ ইভেন্ট’ এর কর্মীদের নিয়ে অপূর্ব দক্ষতায় বর্তমান প্রজন্মের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন ও বৃদ্ধাশ্রমে তাদের বৃদ্ধ বাবা মা কি দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে জীবনের শেষ দিনটির দিকে এগিয়ে চলেছেন তার কাহিনী বিন্যাস করছেন।
মন্ডপের সামনে আসতেই অডিওতে মা ছেলের কথোপকথন শুনে থমকে দাঁড়াতেই হবে। তারপর সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই বিশাল ফাঁকা জায়গা সেখানে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা গল্পে মশগুল। বোঝা যাচ্ছে তাদের ছেলে মেয়েরা সবাই প্রবাসী। বাড়িতে বুড়ো বুড়ি। তাই পড়শীদের কাছে ছেলে বৌমার গল্প শোনাচ্ছেন একে অপরকে। এখানেও অডিও তরঙ্গ শোনা যাবে কার ছেলে মা বাবাকে কত শ্রদ্ধা করেন, বছর বছর কত উপহার পাঠান ইত্যাদি। অথচ সবই যে মিথ্যে তাও বোঝা যায় ভাষ্যকারদের কন্ঠে। এখান থেকে দর্শক দ্বিতীয় দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখতে পাবেন বৃদ্ধাশ্রম। সেখানে কামরায় কামরায় রয়েছেন বুড়ো বুড়িরা। উল্টো দিকে তাদেরই ছেলে মেয়েরা কেউ ভিন দেশে তো কেউ ভিন রাজ্যে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে রঙিন স্বপ্নে বিভোর। সেখানেও অডিও ভাষ্য শোনা যাবে নানা মর্মাহত সংলাপ। এরপর তৃতীয় দরজায় গিয়ে গাছ গাছালিতে ভরা সবুজ মাঠ। সেখানে বাবা মা তাদের সন্তানকে কিভাবে মানুষ করছেন তার চিত্রলিপি ফুটিয়েছেন শিল্পী উৎপল দাস তার নিপুনতায়। এই কাহিনী শুনতে শুনতে যাবেন মাতৃ দর্শনে। সেখানে অডিওতে শোনা যাবে ‘প্রাতিমা’তে ঈশ্বর না খুঁজে, প্রতি’মা যে বাড়িতে রয়েছেন তিনিই দুর্গা।

মিতালী সংঘের অন্যতম কর্ণধার অমিয় খাঁ জানান, আমাদের মন্ডপে প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দর্শকদের মনোরঞ্জন এর জন্য নানান প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *