ত্রিপুরা : সন্ত্রাস নিয়ে বিধানসভায় সিপিএম ও কংগ্রেসকে তুলোধুনা পরিষদীয় মন্ত্রীর

আগরতলা, ২৭ মার্চ (হি. স.) : ত্রিপুরা বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাবের আলোচনায় পরিষদীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথ আজ সিপিএম এবং কংগ্রেসকে তুলোধুনা করেছেন। সন্ত্রাস নিয়ে সিপিএম বিধানসভায় আলোচনার জন্য চাপ দিচ্ছে। তাই, সুযোগ পেয়েই তিনি বাম আমলের সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাঁর কটাক্ষ, ত্রিপুরায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী সন্ত্রাসের রাজনীতি আমদানি করেছিলেন। তাতে, তত্কালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব ঘি ঢেলেছেন। তাঁর দাবি, ২৫ বছরের বাম আমলের সন্ত্রাসের তুলনায় ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের সুফল মানুষ টের পাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের উপর আলোচনা আজ শুরু হয়েছে। গত ২৪ মার্চ ত্রয়োদশ বিধানসভার প্রথম অধিবেশনে রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য বক্তব্য রেখেছিলেন। বিধানসভা অধিবেশনের আজ দ্বিতীয় দিনে পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ, বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা সহ সরকার এবং বিরোধী পক্ষের ২৩ জন বিধায়ক আলোচনায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ বিধানসভা অধিবেশনে ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ। আজ আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী বলেন, সবকা সাথ সবকা বিকাশ নীতি নিয়ে ত্রিপুরা সরকার কাজ করছে। বর্তমান সরকার ত্রিপুরাকে একটি মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে। সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সাথে তিনি যোগ করেন, মডেল স্টেট মানে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা, স্বনির্ভর ত্রিপুরা। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে সবার সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।
তাঁর কথায়, স্বামীজীর ভাবধারাকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার এগিয়ে চলেছে। সবার উন্নয়ন এই সরকারের মূল লক্ষ্য। গত পাঁচ বছর মূলত এই লক্ষ্যেই বিজেপি-আইপিএফটি সরকার কাজ করেছে। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য এসেছে। একইসাথে তিনি সন্ত্রাস নিয়ে সিপিএমকে রীতিমতো তুলোধুনা করে ছেড়েছেন। তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হল, তাঁর একের পর এক তোপ মুখ বুঝে হজম করেছেন সিপিএমের বিধায়করা।
এদিন তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বিধানসভা নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। হাজার হাজার বিরোধী কর্মীর রক্তে ত্রিপুরা লাল হয়েছে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বামেদের বিঁধেছেন। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ২০১৮ সালে রাতারাতি জামা পাল্টে বিজেপি সেজে সিপিএম কর্মীদের উপর হামলা করেছেন স্বার্থান্বেষী মহল। ঠিক একইভাবে ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের পর উস্কানির পরিণাম ভুগতে হচ্ছে বিরোধী কর্মীদের। তাঁর দাবি, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগেই ক্ষমতা দখলের পর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তবুও বাম আমলে সন্ত্রাসের ধারেকাছেও ঘটনা ঘটেনি, জোর গলায় দাবি করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা রাজ্যপালের ভাষণে কিছু সংশোধনীর দাবি জানিয়ে এডিসি এলাকার উন্নয়নে রাজ্য সরকারকে আরও ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। সিপিএম বিধায়ক জিতেন্দ্র চৌধুরী ভিলেজ কমিটির নির্বাচনের জন্য সওয়াল করেন। তাঁর বক্তব্য, ভিলেজ কমিটির নির্বাচন যথা সময়ে না হওয়ায় অর্থ কমিশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। এদিকে, কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহাও রেলের ডাবল লাইন এবং ইংরেজি মাধ্যম কলেজের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। সাথে তিনি রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ নিয়েও সোচ্চার হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, রাহুল গান্ধী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। একথায় আপত্তি জানিয়ে তপশীলি কল্যাণ মন্ত্রী সুধাংশু দাস নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝানোর দাবি জানান। অবশ্য বীরজিৎ বাবু জবাবে বিশেষ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
প্রস্তাবের সমর্থনে আলোচনা করেন ট্রেজারি বেঞ্চের বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব, বিধায়ক কিশোর বর্মণ, বিধায়ক স্বপ্না দাস পাল ও বিধায়ক রঞ্জিত দাস। তাছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন তিপরা মথা পার্টির বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা, বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা, বিধায়ক বিশ্বজিৎ কলই, বিধায়ক স্বপ্না দেববর্মা ও বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা। সিপিআই(এম) দলের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন, বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস, বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন, বিধায়ক রামু দাস, বিধায়ক সুদীপ সরকার ও বিধায়ক নয়ন সরকার। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিধায়ক বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়ও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।