আগরতলা, ২৩ মার্চ (হি. স.) : ত্রিপুরা বিধানসভায় অধ্যক্ষ পদে বিজেপি বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেনকে প্রার্থী করেছে। আজ তিনি বিধানসভার সচিবের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে, বিরোধী দলের অধ্যক্ষ প্রার্থী কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়ও আজ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আগামীকাল সকাল ১১টা থেকে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। বর্তমানে ত্রিপুরা বিধানসভার ৫৯ জন সদস্য-সদস্যা ভোটাধিকার প্রয়োগ করার পর গণনা হবে। এদিনই ফলাফলের ঘোষণা দেওয়া হবে। শাসক দলের পক্ষে রতন লাল নাথ বিরোধীদের কাছেও বিশ্ববন্ধু সেনের জন্য ভোট চেয়েছেন। তিনি প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের জন্যও বিরোধীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। এদিকে, বিরোধীরা বিবেক ভোটের ডাক দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, তিপরা মথাকে সাথে নিয়ে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস অধ্যক্ষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়কে প্রার্থী করেছেন। আজ বিজেপি-আইপিএফটি জোট অধ্যক্ষ পদে প্রার্থীর ঘোষণা দিয়েছে। এ-বিষয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, বিজেপি জোটের অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হিসেবে বিশ্ববন্ধু সেনের নাম প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা প্রস্তাব করেছিলেন এবং তাতে অর্থ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় সমর্থন দিয়েছেন। দ্বিতীয় তিনি নিজেই প্রস্তাবক ছিলেন এবং জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা তাতে সমর্থন দিয়েছেন। তৃতীয় সমবায় মন্ত্রী শুক্লা চরণ নোয়াতিয়া প্রস্তাব করেছেন এবং বিধায়িকা কল্যাণী রায় তাতে সমর্থন দিয়েছেন।
রতন লাল নাথের দাবি, সংসদীয় রাজনীতিতে বিশ্ববন্ধু সেনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। ত্রিপুরার কল্যাণে শাসক ও বিরোধী উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রয়োজন রয়েছে। তাই তিনি বিরোধীদের কাছে অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলেন। অধ্যক্ষ পদে মনোনয়ন জমা দিয়ে বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন দাবি করেন, জয় সম্পর্কে তিনি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত।
এদিকে, আজ অধ্যক্ষ পদে বিরোধী প্রার্থী বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায় বিধানসভার সচিবের কাছে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ওই সময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন সিপিএম বিধায়ক জিতেন্দ্র চৌধুরী, কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা এবং বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। বিরোধী দলের অধ্যক্ষ প্রার্থী বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়ও জয় সম্পর্কে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু, প্রার্থীরা জয়ী হবেন সেই প্রত্যাশাই করেন। এদিন কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা দাবি করেন, বিরোধী দলের অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী জয়ী হবেন। এক্ষেত্রে তিনি বিবেক ভোটের ডাক দিয়েছেন। তাঁর কথায়, গণতন্ত্র শক্তিশালি করার জন্য বিরোধী দলের অধ্যক্ষ প্রার্থীর জয়ী হওয়া খুবই জরুরি।
একইভাবে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, মতাদর্শগত ফারাক থাকতেই পারে। কিন্তু, কেউ আমাদের রাজনৈতিক শত্রু নন। তাঁর দাবি, বিধানসভায় বিরোধীদের কণ্ঠ শক্তিশালি হলে গণতন্ত্র মজবুত হবে। এক্ষেত্রে রাজ্যের স্বার্থে সকলকে এগিয়ে এসে বিরোধী দলের প্রার্থীকে অধ্যক্ষ পদে নির্বাচনে জয়ী করা উচিত। কারণ, বিগত দিনে মানুষের সাথে অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হলেই কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর মতে, সেই পরিস্থিতি বদলাতে এবার অনেকেই বিবেকের টানে ভোট দেবেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, শাসক জোটের কাছে বিধায়ক ৩২ জন এবং বিরোধীরা সংখ্যায় ২৭ জন হওয়ায় অধ্যক্ষ পদে নির্বাচনে ফলাফল চমকে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
এদিকে, আগামীকাল ব্যালটের মাধ্যমে অধ্যক্ষ পদে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ত্রিপুরা বিধানসভার সচিব বি পি কর্মকার এ-বিষয়ে জানিয়েছেন, আগামীকাল সকাল ১১টায় বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট গ্রহণ শেষে গণনা এবং এরপরই ফলাফলের ঘোষণা দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, আগামীকাল দুপুর বারটার মধ্যে অধ্যক্ষ পদে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রাজ্যপাল সত্যদেও নারায়ণ আর্য ভাষণের মাধ্যমে বছরের প্রথম বিধানসভা অধিবেশনের সূচনা করবেন। সূত্রের দাবি, ২৪ থেকে ২৮ মার্চ তিনদিনের জন্য বিধানসভার অধিবেশন হবে। আগামীকালই অর্থ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় ভোট-অন-একাউন্ট পেশ করবেন। সূত্রের খবর, অধ্যক্ষ পদে নির্বাচন এবং উপাধ্যক্ষ ও মুখ্য সচেতক বাছাইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বিধায়ক দলের বৈঠক হবে।