BRAKING NEWS

রাজ্যের যুবক যুবতীদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশে ত্রিপুরা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ নভেম্বর৷৷ রাজ্যের জাতি জনজাতি অংশের যুবক যুবতীদের অনেকের মধ্যেই সাংস্ক’তিক প্রতিভা রয়েছে৷ প্রতিভা বিকশিত করার জন্য উপযুক্ত ম’ প্রয়োজন৷ ত্রিপুরা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট তাদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকশিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে৷ আজ সন্ধ্যায় নজরুল কলাক্ষেত্রে ত্রিপুরা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন৷ কলকাতার সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় এই প্রথম রাজ্যে ফিল্ম ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করলো৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, তথ্য ও সংস্ক’তি মন্ত্রী সুুশান্ত চৌধুরী, আগরতলার মেয়র দীপক মজমদার, বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা ফিরদৌস আহমেদ ও এসআরএফটিআই, কলকাতার অধিকর্তা হিমাংশু শেখর কাথুয়া৷ এই ইনস্টিটিউটে নি অ্যাকটিং, ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট এবং নিউজ রিপোর্টিং, অ্যানকরিং, নিউজ রুম অটোমেশন এই ৪টি কোর্স রয়েছে৷ এই ইনস্টিটিউটে এবছর ৪৭ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে৷
ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, আমরা কোনোদিন ভাবিনি আমাদের রাজ্যে ফিল্ম ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে৷ রাজ্য সরকারের চেষ্টায় তা বাস্তব রূপ পেয়েছে৷ প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, সুুরকার শচীন দেববর্মণ এবং রাহুল দেববর্মণের কথাও আলোচনায় তুলে ধরেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই গান, বাজনা, সাংস্কৃতিক চিন্তা ভাবনা লুকিয়ে আছে৷ তাকে বিকশিত করতে হয়৷ উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকলে প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয় না৷ তিনি বলেন, এই ইনস্টিটিউটের জয়যাত্রা ছাত্রছাত্রীদের উপর যেমন নির্ভর করবে, তেমনি শিক্ষক শিক্ষিকারাও তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন এই ইনস্টিটিউট ভবিষ্যতে সুুনাম অর্জন করবে৷
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধার ঘাটতি নেই৷ কিন্তু হীরার মূল্য যেমন অধিক রূপ দিলেই বোঝা যায় তেমনি মেধার জন্যও চাই প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন৷ তবেই তার মূল্য বাড়ে৷ আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ফিল্ম জগৎ তথা বলিউডের সঙ্গে ত্রিপুরার বহু আগে থেকেই সম্পর্ক রয়েছে এস ডি বর্মণদের কারণে৷ এখন ত্রিপুরা ফিল্ম অ্যাণ্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট স্থাপনের ফলে এতোদিন যে ঘাটতি ছিল ফিল্ম সংক্রান্ত মেধাকে কাজে লাগানোর তাও পূরণ হবে৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংস্কৃতিমনষ্ক চিন্তাধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, আর চলচ্চিত্র হচ্ছে এক শক্তিশালী মাধ্যম এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য৷ তিনি এই নতুন প্রতিষ্ঠান একদিন ত্রিপুরায় এক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান রূপে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷ কেননা ত্রিপুরাতে সাংস্ক’তিক বিকাশের মূল ভিত রয়েছে, এখানকার জনজাতি ও মিশ্র সংস্ক’তির উজ্জল ঐতিহ্য রয়েছে৷ এখন টিএফটিআই স্থাপিত হওয়ার কারণে একদিন ত্রিপুরা ও ফিল্ম জগতে বড় নাম করবে৷ তিনি টিএফটিআই-এ ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য কামনা করেন এই উদ্যোগের সাথে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান৷
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুুশান্ত চৌধুরী এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে সমৃদ্ধ সংস্ক’তি রয়েছে৷ এই রাজ্যের প্রাক’তিক সৌন্দর্য অতুলনীয়৷ এই ফিল্ম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে আরও বেশি করে তুলে ধরা সম্ভব হবে৷ রাজ্যের যুবক-যুবতীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিতেও এই ফিল্ম ইনস্টিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে৷ রাজ্যের যুবক-যুবতীদের মধ্যে যে মেধা রয়েছে এই ফিল্ম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে তারা দেশবাসীর কাছে তা তুলে ধরতে সক্ষম হবে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন সুুন্দর সাবলীলভাবে এই ইনস্টিটিউটটি এগিয়ে যাবে৷ আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজমদার বলেন, আজকের দিনটি রাজ্যবাসীর কাছে ঐতিহাসিক দিন৷ শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বহুদিনের প্রত্যাশা আজ পূরণ হলো৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন রাজ্যের বিভিন্ন সাংস্ক’তিক ব্যক্তিত্ব তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারবেন৷ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী৷
কলকাতার এসআরএফটিআই’এর অধিকর্তা হিমাংশু শেখর কাথুয়া বলেন, ত্রিপুরা সরকারের চলচ্চিত্র সংক্রান্ত এক সুুদূরপ্রসারী ভিশন রয়েছে৷ টিএফটিআই হচ্ছে সেই লক্ষ্যে এক সূচনা মাত্র৷ কলকাতাস্থিত এসআরএফটিআই চলচ্চিত্র জগতে ইতিমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে এবং বিভিন্ন কোর্স সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছে৷ ত্রিপুরাতেও এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের দরকার ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্ক’তিক মেধায় ভরপুর এই রাজ্যের মেধাবী ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণের জন্য৷ তিনি জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এখানে ক্লাস শুরু হবে৷ এসআরএফটি সেজন্য শর্ট কোর্সের ডিজাইন করেছে৷ ভবিষ্যতে ডিপ্লোমা এমনকি স্নাতকোত্তরের মতো দীর্ঘ মেয়াদি কোর্স চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে৷ বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা ফিরদৌস আহমেদ বলেন, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে৷ সেকথা উল্লেখ করে ত্রিপুরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, আজকের এই ঐতিহাসিক মুহর্তের সাক্ষী হতে পারার জন্য৷ শীঘই ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করার কথাও বলেন তিনি৷ তাছাড়া ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েররাও এখানে এসে ফিল্ম বিষয়ক পড়াশুনার সুুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন৷ সর্বশেষে তিনি বলেন, আগামীদিনে টিএফটিআই-এর বিকাশে যখনই দরকার পড়বে তিনি তার সাধ্যমত সহযোগিতা করবেন৷
অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্রিপুরা ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউট গঠনের বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়৷ তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী সুুশান্ত চৌধুরী এবং সচিব পি কে চক্রবর্তী অতিথিগণকে মারক উপহার প্রদান করেন৷ এই ইনস্টিটিউটে ৪টি স্বল্পমেয়াদি কোর্স এখন পড়ানো শুরু করা হবে৷ পড়ার ৯০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার বহন করবে৷ দশ শতাংশ অর্থ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *