BRAKING NEWS

পুনর্বাসনের দাবিতে ইসিএলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিক্ষোভ ক্ষতিগ্রস্তদের

দুর্গাপুর, ২০ অক্টোবর (হি.স.) : প্রতিশ্রুতি সার। মেলেনি পুনর্বাসন। অস্থায়ী শিবিরে দিন কাটছে ধস কবলিত দুর্গতদের। দাবি জানিয়েও জোটেনি পুনরবাসন। আর তাই কয়লা উত্তোলক সংস্থার বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা চলাকালীন মাঠে ঢুকে অভিনব বিক্ষোভ দেখালেন দুর্গত পরিবারেরা। ঘটনাকে ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা সুষ্টি হয় খেলার মাঠে। বৃহস্পতিবার এমনই নজিরবীহিন ঘটনাটি ঘটেছে লাউদোহার ইসিএলের ঝাঁঝরা এরিয়ার ক্ষুদিরাম বসু ক্রীড়াঙ্গন মাঠে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট খনি গর্ভে বিস্ফোরণের ফলে ঝাঁঝরা কেলিয়ারি সংলগ্ন শীর্ষা গ্রামে ফাটল দেখা দেয় একাধিক বাড়ীতে। যেকোন সময় ভেঙে পড়ার তীব্র আশঙ্কা বলে দাবি দুর্গতদের। ধস আতঙ্কে ঘর ছাড়া হয় কয়েকটি পরিবার। বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় খনি কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি তাদের অন্যত্র ক্যাম্প করে বসবাসের ব্যবস্থা করে। সংস্থার পক্ষ থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাবু করে ১৮ পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে সরব হয় বাসিন্দারা। রাজ্য সরকারের পাট্টা দেওয়া জমিতে তারা ঘর বাড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। শিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতরা জানান,” শিবিরে সংস্থার পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার দেওয়া হত। কিন্তু রান্না করা খাবার পাঠানো বন্ধ করে দেয় সংস্থা। পরিবর্তে তাদের দেওয়া হচ্ছে চাল, ডাল, আলু, তেল। কিন্তু জ্বালানি না দেওয়াই তারা রান্না করতে পারছে না। শিবিরে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে।” বাসিন্দারা আরও জানান,” খনি সংস্থা তাদের দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পুনরবাসন না দিয়ে দ্রুত কিভাবে কোথায় আশ্রয় নেব। রাজ্য সরকারের দেওয়া পাট্টার সরকারি কাগজ রয়েছে। তাই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সংস্থাকে করতে হবে, তা না হলে তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে যাবো না। গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শ্রমিক সংগঠন ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে ঝাঁঝরা এরিয়া অফিসে কর্তৃপক্ষের একটি বৈঠক হয়। তাতে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, অস্থায়ী শিবিরে থাকা পরিবারগুলিকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয় সংস্থা বলে অভিযোগ। দুর্গত পরিবারেরা জানান,” ২৬ সেপ্টেম্বর ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে ঝাঁঝরা এরিয়া অফিসে চূড়ান্ত বৈঠক হয়। সংস্থার পক্ষ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় দ্রুত পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৪ টি নতুন বাড়ি, একটি মন্দির ও অতিরিক্ত চারটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো পুনর্বাসনের কাজ এখনও শুরু হয়নি।” বৃহস্পতিবার হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঝাঁঝরা এরিয়ার অফিসের বিপরীতে সংস্থার নিজস্ব খেলার মাঠ ক্ষুদিরাম বসু ক্রীড়াঙ্গনে হাজির হয় দুর্গত পরিবারেরা। সেখানে ইসিএলের বাৎসরিক ক্রিড়া চলছিল। খেলাতে অংশ নিয়েছে সংস্থার চৌদ্দটি এরিয়ার খেলোয়াড়েরা। উপস্থিত ছিলেন সংস্থার একাধিক শীর্ষ আধিকারিকরাও । আচমকাই মাঠের মধ্যে পুনর্বাসনের দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে ঢুকে পড়েন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারেরা। বিক্ষোভকারীদের দলে ছিলেন বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। আচমকা এহেন ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েন সংস্থার আধিকারিকেরা। বিক্ষোভকারীরা মাঠের মাঝে বসে পুনর্বাসনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। ফলে মাঝ পথে ব্যাহত হয় খেলা। বাধ্য হয়ে ঝাঁঝরা এরিয়া অফিসের আধিকারিকেরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি। বৈঠক শেষে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় আপাতত শিবিরে থাকা পরিবার গুলোর জন্য পুনরায় রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। কালীপুজোর পর পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখা হবে।
কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেয় ক্ষতিগ্রস্তরা। এবং পুনরায় খেলা শুরু হয়।
যদিও এবিষয়ে ইসিএল কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে চায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *