BRAKING NEWS

Northeast Frontier Railway : রেলপথ আরও সম্প্রসারণে ত্রিপুরার অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতির প্রয়াস নেওয়া হয়েছে : উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে

আগরতলা, ৪ জুন (হি. স.) : ত্রিপুরায় রেলপথ আরও সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে রাজ্যের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতির প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। তাতে, পর্যটন ক্ষেত্রেও উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জন সংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে জানিয়েছেন, ত্রিপুরার আগরতলা ও বাংলাদেশের আখাউরার মধ্যে ৯৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ কিমি দীর্ঘ নতুন রেলওয়ে লাইন প্রকল্পটি খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণ হবে। বাংলাদেশের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য বিলোনিয়া-চিটাগাং ২.৯ কিমি, কৈলাসশহর হয়ে পেচারথল থেকে ধর্মনগর পর্যন্ত ৪৫ কিমি এবং ধর্মনগর থেকে পেচারথল, বিলোনিয়া হয়ে কমলপুর-খোয়াই থেকে আগরতলা পর্যন্ত ১৭০ কিমি নতুন বিজি লাইনের জন্য সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলি একবার সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ত্রিপুরার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে উন্নতি ঘটবে। পাশাপাশি পর্যটন ক্ষেত্রেও উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। 

তিনি জানান, উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের পক্ষ থেকে ত্রিপুরায় বিদ্যমান রেলওয়ে পরিবহণ ব্যবস্থা ও পর্যটন বৃদ্ধি ও সংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পরিকাঠামোমূলক বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ দিয়ে এবং পূর্বে অসম ও মিজোরাম দিয়ে ঘেরা ত্রিপুরা হলো উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম দ্রুত বিকশিত একটি রাজ্য। রেলওয়ে ভারতীয় অর্থনীতির মুখ্য জীবনরেখা হওয়ায় স্থলবেষ্টিত ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য রেলওয়ে পরিকাঠামোগুলি গুরুত্বপূর্ণ।    

তাঁর কথায়, ২০১৪-২২ সময়সীমায় রেলওয়ে ক্ষেত্রে ত্রিপুরা মুখ্য উন্নয়নমূলক কাজ প্রত্যক্ষ করেছে। ২০১৪-২২-এ ত্রিপুরার সমগ্র রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ব্রডগজ নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, এর ফলে ত্রিপুরায় সমস্ত মিটার গজ রেলওয়ে লাইন লুপ্ত করা হয়েছে। সংযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে ত্রিপুরায় আগরতলা-উদয়পুর, উদয়পুর-গর্জি, গর্জি-শান্তিরবাজার, বিলোনিয়া-সাব্রুমের মতো বিভিন্ন সেকশন ব্রড গজ লাইনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৪-২২ সময়সীমায় ত্রিপুরায় ১১৫ কিমি নতুন ব্রডগজ লাইন চালু করা হয়েছে।

তাঁর দাবি, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই বহু প্রতীক্ষিত আগরতলা-আনন্দ বিহার ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসের সূচনার দ্বারা ভারতের ব্রডগজ মানচিত্রের একটি স্থান সংরক্ষিত করতে সক্ষম হয় ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত তেজস টাইপ এসি স্লিপার কোচ সহ ভারতীয় রেলওয়ের প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেস ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আগরতলা থেকে চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এটি সফল চলাচলের এক বছর সম্পূর্ণ করেছে। এছাড়াও আগরতলা থেকে সেকেন্দ্রাবাদ ও বাঙ্গালোর পর্যন্ত ট্রেন চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা ও মণিপুর সংযোগী প্রথম ট্রেন তথা অসম হয়ে আগরতলা-জিরিবামের মধ্যে জনশতাব্দী এক্সপ্রেসেরও যাত্রা শুরু হয়েছে।     

তাঁর বক্তব্য, ২০১৬ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ত্রিপুরায় ভয়াবহ ভূমিধসের ফলে সড়ক সংযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। সেই সময় ত্রিপুরায় সড়ক বিচ্ছিন্নতার জন্য ইন্ধন সরবরাহের অভাব ঘটেছিল। তখন ফ্ল্যাট-ওয়াগন গুডস ট্রেনের উপর ইন্ধন বোঝাই ট্রাক পরিবহণের জন্য রোল অন-রোল অফ পরিষেবার দ্বারা ত্রিপুরাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছিল উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে (এনএফআর)। রেলওয়ের পদক্ষেপে এমন ধরনের ট্রেন ভাঙ্গা (অসম) থেকে ত্রিপুরার চুরাইবাড়ি পৌঁছায়।

সাথে তিনি যোগ করেন, অসমের সাথে ত্রিপুরা সংযোগী সড়কের দুর্দশার জন্য ত্রিপুরায় পণ্যদ্রব্যের সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল, ফলে ত্রিপুরায় তীব্র অভাব দেখা দেয়। রেলওয়ের এই সহায়তার ফলে ত্রিপুরা ইন্ধনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।         

তাঁর দাবি, ২০১৪-২২ সময়সীমায় এনএফআর-এর পক্ষ থেকে ত্রিপুরার স্টেশন ও ট্রেনগুলিতে একাধিক নতুন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪-২২ সালে ০৫টি ফুট ওভার ব্রিজ, ১২৮টি বায়ো-টয়লেট, ২০টি ওয়াইফাই ত্রিপুরার বিভিন্ন স্টেশনে প্রদান করা হয়েছে। যাত্রীদের জন্য উন্নত সুবিধা প্রদান করতে লিফট ও এসকেলেটর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রেলওয়ে সম্পত্তি ও যাত্রীদের সুরক্ষা বৃদ্ধি করতে ২০১৪-২২ সালে ০২টি ট্রেনে আধুনিক সুবিধা সহ দ্রুত গতির এলএইচবি কোচ চালু করা হয়েছে। এবং ১২টি স্টেশনে ১২০টি সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম প্রদান করা হয়েছে। যান্ত্রিক কোচ পরিষ্কারকরণ, হেভি ডিউটি স্ক্রাবার মেশিন, অন বোর্ড হাউজ কিপিং স্টাফ (ওবিএইচএস)-এর দ্বারা ট্রেন পরিষ্কারকরণ হলো স্বচ্ছতা উদ্যোগের একটি অংশ।

তাঁর কথায়, ২০১৪-২২ সালে এনএফআর-এর গো-গ্রিন মিশনের অংশ হিসেবে ত্রিপুরার সমস্ত স্টেশনে ১০০ শতাংশ এলইডি লাইট প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোমূলক ও দীর্ঘদিনের অসম্পূর্ণ কাজগুলি লকডাউনের সময় সম্পূর্ণ করা হয়েছে এবং আগরতলায় ৩৫টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালানো হয়, যেগুলির দ্বারা প্রায় ১৭ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে তাদের নিজের রাজ্য ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *