হাফলং(অসম), ২৪ মে(হি. স.) : প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিপর্যস্ত ডিমা হাসাও জেলা সদর হাফলঙে মঙ্গলবার ঝটিকা সফরে করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ বায়ু সেনার হেলিকপ্টারে তিনি হাফলং এসে সোজা চলে যান ধ্বসের ফলে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হাফলং-লঙ্কা সংযোগী সড়কে সরকারি বাগান এলাকায়। তারপর সেখান থেকে তিনি লোয়ার হাফলং হাইস্কুল ও নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করেন এবং গৃহহারাদের সঙ্গে মত বিনিময় সেরেছেন। সেই সঙ্গে তিনি হাফলঙের পার্শ্ববর্তী হোকাইপুঞ্জি গ্রামে ভূমি ধ্বসে নিহত তিন জনের পরিবারের খোঁজ নেন এবং সরকারী সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়া ডিমা হাসাও জেলাকে সব ধরণের সাহায্য প্রদান করবে। তিনি জানান, আগামী ২৭ মে কেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রতিনিধি দল ডিমা হাসাও জেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের কাছে এক প্রতিবেদন দাখিল করবে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং ভারী বর্ষণে ভূমিধসে যে বৃহৎ ক্ষতি হয়েছে তা সারিয়ে তুলতে সব ধরনের সাহায্য করবেন।
তাঁর দাবি, আগামী দুই একদিনের মধ্যে রাজ্য সরকার জেলার বিধ্বস্ত সড়ক গুলি মেরামতি করে তোলার জন্য অর্থ বরাদ্দ করবে এবং বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা এসে সব কিছু খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, বন্যায় জলসিঞ্চন বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের প্রকল্প গুলি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। তাই এগুলি পুনরায় সচল করে তুলতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারী বর্ষণে জেলার সড়ক পথ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক স্থানেই পুনরায় সড়ক নির্মান করার চিন্তা বেড়ে গেছে। ওইসব জায়গায় সড়ক নির্মান প্রায় অসম্ভব হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে অসমের এই পাহাড়ি জেলাকে যে ভাবে তৈরি করা হয়েছিল তা শেষ হয়ে গেছে। তাই এবার পাহাড়ি জেলাকে পুনঃ নির্মান করতে সব ব্যবস্থাই গ্রহন করবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দল ডিমা হাসাও জেলা সফর করে গিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পরে পাহাড়ি জেলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রয়োজনীয় অর্থের মঞ্জুরী দেবে রাজ্য সরকার। তিনি জানান, বর্তমানে যেভাবে বায়ু সেনার হেলিকপ্টারে খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে বায়ু সেনার হেলিকপ্টার দিয়ে পেট্রল ডিজেল সহ খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হবে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা হাফলং আবর্ত ভবনে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য, লোক নির্মান বিভাগ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ, জলসিঞ্চন বিভাগ সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করে তুলতে সড়ক গুলি মেরামত করে তোলা বা আগের জায়গা থেকে অ্যালাইনম্যান্ট বদল করে সড়ক নির্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সহ অনান্য দিক গুলির পর্যালোচনা করে বলেন, লোয়ার হাফলং হাইস্কুল ও নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় শিবিরে যে ১৪৯ গৃহহারা মানুষ রয়েছেন তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও ঘর নির্মানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করতে জেলাশাসক নাজরিন আহমেদকে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব জিষ্ণু বরুয়া, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব সমীর কুমার সিনহা, উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসা, পার্বত্য পরিষদের চেয়ারপার্সন রানু লাংথাসা, বিধায়ক নন্দিতা গার্লোসা, জেলাশাসক নাজরিন আহমেদ ও পুলিশসুপার জয়ন্ত সিং প্রমুখ।