আগরতলা, ১৪ মার্চ (হি. স.) : আবারো চাকুরীর দাবিতে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা মহাকরণ অভিযানে গেছেন। তাঁদের ওই অভিযানকে ঘিরে রাজধানী আগরতলায় সার্কিট হাউস থেকে সচিবালয় পর্যন্ত এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। এদিন দুইটি স্থানে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে গেছেন। শেষে পুলিশি বাধায় সচিবালয়ের মূল ফটকের বাইরে রাস্তায় ধর্ণায় বসে পড়েন তাঁরা। দীর্ঘ সময় রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখার পরিণামে পথ চলতি মানুষ ভোগান্তির শিকার হন। যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। তাই, পুলিশ একাধিকবার বুঝিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষে টেনেহিচড়ে নিয়ে গাড়িতে তুলেন। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়া মাধুরী মজুমদার জানিয়েছেন, শতাধিক আন্দোলনকারীকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদিকে, একাংশ চাকুরিচ্যুত শিক্ষক এখনো সার্কিট হাউসের সামনে ধর্ণায় বসে রয়েছেন। তাঁদের সাফ কথা, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা না বলে বাড়ি ফিরবেন না।
প্রসঙ্গত, বাম আমলে নিয়োগ নীতি উপেক্ষা করে বেআইনিভাবে শিক্ষক পদে চাকুরী দেওয়ার ফলে আদালত ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল করে দিয়েছিল। ২০১৪ সালে ত্রিপুরা হাই কোর্ট ওই রায় ঘোষণার পর থেকে একাধিকবার আদালতে মামলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ওই মামলা গড়িয়েছে। কিন্ত, সুপ্রিম কোর্টও ত্রিপুরা হাই কোর্টের রায় বহাল রেখেছে। ত্রিপুরা সরকার তাঁদের এডহক ভিত্তিতে নিয়োগের অনুমতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ওই নিয়োগের জন্য ত্রিপুরা সরকারকে অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে, ২০২০ সালের ৩১ মার্চ তাঁরা স্থায়ীভাবে চাকুরী হারানোর পর থেকে লাগাতর আন্দোলন জারি রেখেছেন।
আজ তাঁরা চাকুরীর দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আর্জি নিয়ে মহাকরণ অভিযানে নামেন। স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান থেকে তাঁদের মিছিল শুরু হয়। প্রথমে সার্কিট হাউসে পুলিশ তাঁদের বাধা দেন। কিন্ত, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তাঁরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হন। পুনরায় তাঁদের আটকানোর চেষ্টা হলেও, সেই দফাতেও পুলিশি বাধা অতিক্রম করে তাঁরা এগিয়ে যান। শেষে সচিবালয়ের মূল ফটকের সামনে এসে তাঁরা এগুতে পারেননি। তাই, তাঁরা সেখানেই রাস্তায় ধর্ণায় বসে পড়েন।
তাঁদের বক্তব্য, চাকুরীর স্থায়ী সমাধান চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের একাধিকবার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্ত, মুখ্যমন্ত্রী দেখা করতে চাইছেন না। ফলে, আন্দোলনের পথে হাঁটা ছাড়া অন্য রাস্তা খোলা নেই।
তাঁদের অভিযোগ, চাকুরীর স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন তার খেলাপ করছে ত্রিপুরা সরকার। তাই, আজ আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুলিশি বর্বরতায় দুই শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন। একজনকে পুলিশ লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে এবং অপরজন শিক্ষিকা পুলিশের মারে অজ্ঞান হয়ে গেছেন।
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়া মাধুরী মজুমদার জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের সচিবালয়ের সামনে থেকে উঠে যাবার জন্য অনেক অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্ত, তাঁরা পুলিশের আবেদনে সাড়া দেননি। তাই, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার প্রশ্নে তাঁদের বাধ্য হয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রায় শতাধিক আন্দোলনকারীকে এদিন গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে, একাংশ আন্দোলনকারি সার্কিট হাউসের সামনে এখনো ধর্ণায় বসে রয়েছেন। তাঁদের সাফ কথা, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা না বলে বাড়ি ফিরে যাবেন না।

