BRAKING NEWS

CBI : বাংলাকে রাজ্যভাষার স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে ফের সরব প্রদীপ, দাবি বরাকে অবৈধ সিন্ডিক্যাটের সিবিআই তদন্ত

শিলচর (অসম), ২৫ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : বাংলাকে রাজ্যভাষার স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে ফের সরব হয়েছেন প্রদীপ দত্তরায়। পাশাপাশি বরাক উপত্যকায় চলমান অবৈধ সিন্ডিক্যাটের সিবিআই তদন্তের দাবিও তুলেছে তাঁর দল। আজ শুক্রবার শিলচর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ)-এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এবং হৃষীকেশ দে বাংলা ভাষা, কর্মসংস্থাপন, সিন্ডিক্যাটরাজ ইত্যাদি সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদীপ দত্তরায় অসমে বাংলাকে এবার রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে বঙ্গভাষী সর্বস্তরের জনতাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সম্প্রতি তাঁকে গ্রেফতার এবং কারাগারে প্রেরণ প্রসঙ্গে প্রদীপ বলেন, ভাষা আইনের অপব্যবহার করার প্রতিবাদ করেছিলেন মাত্র। তাই চক্রান্ত করে সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছিল। তবে এর জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন বা প্রতিবাদহীন বরাকের সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়। ফলে তাঁরা পুনরায় অধিকার আদায়ে প্রতিবাদমুখি হচ্ছেন।

প্রদীপ দত্তরায় বলেন, অনেকদিন ধরে তাঁরা বাংলাকে অসমের রাজ্য ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডেও বাংলাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যদি কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে, যদি অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি প্রভৃতি বহিঃরাষ্ট্রে বাংলাভাষা স্বীকৃতি পেতে পারে, তা-হলে অসমের এক কোটি জনসংখ্যার একটি জনগোষ্ঠীর ভাষা এই রাজ্যে কেন স্বীকৃতি পাবে না? তিনি রাজ্যের সর্বস্তরের জনগণকে এই দাবির ভিত্তিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিডিএফ-এর মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, বরাকের কর্মপ্রার্থীদের শোচনীয় অবস্থা ও বেকার সমস্যা সম্পর্কে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাজ্য শাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এক লক্ষ পদে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগেও তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে ৬০ হাজার প্রার্থীর নিয়োগ-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে। জয়দীপ বলেন, যদি তা সত্য হয় তবে বরাক উপত্যকা থেকে কতজনকে এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা সরকার জনসমক্ষে প্রকাশ করুক। তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিপুল সংখ্যক পদে নিয়োগ করা হবে। তাঁর দাবি, বরাকের যত পদ রয়েছে তাতে স্থানীয় প্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে। অন্যথা চাকরির না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের ভাতা দিতে হবে সরকারকে।

জয়দীপ বলেন, বছরে দুই কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন তিনি বলছেন চাকরি দেওয়ার দায় সরকারের নয়। যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। সম্প্রতি চাকরি-মেলা করতে গিয়ে রাজ্যের কর্মপ্রার্থীদের অপমান করেছে এই সরকার। তাই তাঁরা চুপচাপ বসে থাকবেন না। এভাবে চললে বরাকের সমস্ত শিক্ষিত বেকারকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান জয়দীপ ভট্টাচার্য।

বিডিএফ-এর মিডিয়া সেলের আরেক আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, গোটা অসমের মধ্যে একমাত্র বরাক উপত্যকায় সিন্ডিক্যাটের রমরমা। কয়লা, বালু, পাথর, সুপারি, পোস্ত, কী নেই সিন্ডিক্যাটরাজের কবলে! তিনি বলেন, বিডিএফ অনেক আগে থেকেই এ ব্যাপারে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে। ইদানীং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি অবৈধ সিন্ডিক্যাট-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত এবং কাছাড়ের পুলিশ সুপার রমণদীপ কৌরও বলেছেন, তাঁরা এর শেষ দেখে ছাড়বেন। হৃষীকেশ বলেন, আমরা তাঁদের বক্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু কয়লা ও সুপারি সিন্ডিক্যাটের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁরা চুনোপুঁটি। বরাকের মানুষ জানেন, এ সবের সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়াল কারা। হৃষীকেশ বলেন, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব এতদিন জেল খাটার পরও সম্প্রতি আবার দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের সাজা পেয়েছেন। তাই সদিচ্ছা থাকলে সবকিছু সম্ভব।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের দাবি, বরাক উপত্যকাকে সিন্ডিক্যাট-মুক্ত করতে হলে এর পিছনে যে-সব রাঘব বোয়াল আছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় তাঁরা ধরে নেবেন, সাম্প্রতিককালে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে সবই লোক-দেখানো। সরকার যদি তা না পারে তবে এই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তুলেছে বিডিএফ। তবেই প্রকৃত দোষীদের শনাক্তকরণ সম্ভব, বলেন হৃষীকেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *