BRAKING NEWS

Congress : নেতার অভাব, ভূপেন বরার জ্যাম্বো প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে ব্রাত্য হাইলাকান্দি

হাইলাকান্দি (অসম), ২৫ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : নেতার অভাব। ভূপেন বরার ‘জ্যাম্বো’ কমিটিতে স্থান পেলো না হাইলাকান্দি! স্থম্ভিত তথা হতাশ জেলা সভাপতির ফোন প্রদেশের শীর্ষ নেতাকে।

বিহপুরিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক ভূপেন কুমার বরার হাতে বিগত মাস কয়েক আগে অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতির রাশ ধরিয়ে দিয়েছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে আরও তিনজন কার্যনির্বাহী সভাপতি নিয়োগ করেন এপিসিসি-তে। তাঁরা হলেন, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, রাণা গোস্বামী ও জাকির হোসেন সিকদার। এপিসিসি-র সভাপতির কার্যভার সমঝে নিলেও ভূপেন কুমার বরা পুরো টিম ঘোষণা করেননি, অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেননি নানা কারণে। শেষমেষ পুর নির্বাচনের প্রাক্কালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর অনুমোদনের ভিত্তিতে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল এপিসিসি-র নয়া পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছেন। বলা বাহুল্য, রাজ্যের প্রায় প্রতিটি প্রান্তের দলীয় নেতাদের নয়া কমিটিতে স্থান দিয়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এক নয়া বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন হাইকমান্ড। ফলে কার্যত জ্যাম্বো কমিটি গঠন করে সবাইকে খুশি করেছেন সভাপতি ভূপেন বরা। তাঁর জ্যাম্বো প্রদেশ কমিটিতে ১৭ জন উপ-সভাপতি, ৩২ জন সাধারণ সম্পাদক, ২৬ জন যুগ্ম-সম্পাদক, ৬৪ জন সম্পাদক, সিনিয়র মুখপাত্র ১৩ জন এবং ২৭ জন মুখপাত্র স্থান পেয়েছেন। এছাড়া, কার্যনির্বাহী সদস্য পদে রাখা হয়েছে ৫৯ জনকে।

বরাক উপত্যকার কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলার প্রবীণ নেতারা স্থান পেয়েছেন ভূপেনের জ্যাম্বো কমিটিতে। কাছাড় জেলা থেকে উপ-সভাপতি হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং, শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটির প্রাক্তন সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদার এবং খাদি ও গ্রামোদ্যোগ বোর্ডের প্রাক্তন ডিরেক্টর শরিফুজ্জামান লস্কর। কাছাড় জেলা থেকে এপিসিসি-র নয়া সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন কমরুল ইসলাম চৌধুরী। করিমগঞ্জ জেলা থেকে তাপস পুরকায়স্থ ও আমিনুর রশিদ চৌধুরী উপ-সভাপতির মতো গুরু দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে হাইলাকান্দি জেলাকে জ্যাম্বো কমিটি থেকে ব্রাত্য রাখা হয়েছে। প্রদেশ কমিটিতে স্থান পাওয়ার মতো এই জেলায় নেতা থাকলেও কাউকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

অবশ্য, বর্তমানে হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে এ কথা অস্বীকার করার কোনও অবকাশ নেই। আর এমন কথা পক্ষান্তরে স্বীকারও করেছেন দলের একাংশ শীর্ষ নেতারা। নেতার অভাব দেখা দিয়েছে বিগত প্রায় তিন বছর থেকে। একে একে সব শীর্ষ নেতাদের দল ত্যাগের পর থেকেই। দলের অভিভাবক, প্রভাবশালী নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় দল ছেড়েছেন গত প্রায় বছর তিনেক আগে। পরবর্তীতে প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল রায়। পরে পর্যায়ক্রমে জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি আনাম উদ্দিন লস্কর, জেলা পরিষদের প্রাক্তন উপ-সভাপতি জাকির হোসেন লস্কর (বর্তমান হাইলাকান্দির বিধায়ক), এপিসিসি-র সদস্য অধ্যাপক হিলাল উদ্দিন লস্কর, এপিসিসি-র প্রাক্তন সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন বড়ভুইয়াঁ প্রমুখ। এছাড়া এক সময় এই দলের শীর্ষ নেতা ছিলেন সুজাম উদ্দিন লস্কর, হাজি নিজাম উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। বর্তমানে এই দুই নেতা এআইইউডিএফ দলে এবং বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন কাটলিছড়া ও আলগাপুর থেকে। তাছাড়া আরও অনেক দলীয় নেতা কংগ্রেস ছেড়েছেন। অনেকে আবার ইহলোকে পাড়ি দিয়েছেন। গত কয় বছরে প্রায় ডজনখানেক প্রবীণ-নবীণ নেতা কংগ্রেস দলকে আলবিদা করার পর থেকেই কার্যত দলে খরা দেখা দিয়েছে। তবে একসময় হাইলাকান্দিতে দলকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে যেসব নেতারা ঘাম ঝরিয়েছেন, তাঁরাও বর্তমানে অনেকটা নিজেকে দল থেকে শতযোজন দূরে রেখেছেন নানা কারণে।

সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি জয়নাল উদ্দিন লস্কর, জেলা সেবাদলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান হীরেন্দ্র কুমার পাল সহ দলের একাংশ প্রবীণ নেতা বয়সের ভারে বা শারীরিক অসুস্থতায় সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল রোডের কংগ্রেস কার্যালয়ে আসা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে নেতার অনেকটাই অভাব দেখা দিয়েছে হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেসের। যার দরুণ অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির জ্যাম্বো কমিটিতে হাইলাকান্দি জেলা থেকে স্থান দেওয়ার মতো ‘উপযুক্ত নেতা’ খুঁজে পাননি প্রদেশ সভাপতি ভূপেন কুমার বরা।

গত বৃহস্পতিবার এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল এপিসিসি-র নয়া কমিটি ঘোষণা করার পর বরাক উপত্যকার কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলা থেকে কার্যনির্বাহী কমিটিতে অনেক প্রবীণ নেতা স্থান পেয়েছেন। আর পুর নির্বাচনের প্রাক্কালে হাইলাকান্দি জেলাকে এপিসিসি-র নয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে ব্রাত্য রাখায় ক্ষোভের পারদ চড়ছে এখানকার একাংশ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাঁদের প্রশ্ন, প্রদেশ কমিটিতে যাওয়ার মতো হাইলাকান্দিতে কি কোনও নেতা নেই? জয়নাল উদ্দিন লস্করের মতো দলের প্রবীণ নেতাকে এপিপিসি-তে অন্তর্ভুক্ত করা যেত বলে মনে করেন ওইসব ক্ষুব্ধ কর্মীরা। তবে ভূপেন কুমার বরার জ্যাম্বো কমিটিতে সবেধন নীলমণি হিসেবে হাইলাকান্দি জেলা থেকে কেবলমাত্র ইশহাক আলি বড়ভুইয়াঁকে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির ৫৯ জনের কার্যনির্বাহী সদস্যের দীর্ঘ তালিকায় সদস্য পদে রাখা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষাধিকারিক ইশহাক আলি বড়ভুইয়াঁ জেলা কমিটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে, হাইলাকান্দিতে নেতার বড় অভাব, এ কথা অকপটে স্বীকার করেছেন দলের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক সামস উদ্দিন বড়লস্কর। এপিসিসি-র নয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে হাইলাকান্দি জেলার কেউ না থাকার প্রসঙ্গে কোনও রাখঢাক না রেখে তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বলেন, মূলত হাইলাকান্দি জেলায় বিগত কয়েক বছর ধরে নেতার অভাব দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী দলের অভিভাবক গৌতম রায় থেকে শুরু করে অনেক নেতা দল ছাড়ার ফলে দলে কিছুটা নেতার অভাব নিশ্চয়ই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে ‘উপযুক্ত নেতা’ না পাওয়ার দরুন হয়তো হাইলাকান্দি জেলা থেকে এপিসিসি-তে কাউকে রাখেননি সভাপতি ভূপেন বরা, এমনটি মনে করছেন সামস উদ্দিন বড়লস্কর।

এদিকে, জ্যাম্বো কমিটিতে হাইলাকান্দি জেলা থেকে কাউকে না রাখায় হতাশ নয়া জেলা সভাপতি হীরালাল দত্ত পুরকায়স্থ। তিনি এ ব্যাপারে রীতিমতো নালিশ করেছেন অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির এক প্রবীণ নেতাকে। শুক্রবার গুয়াহাটিতে ওই নেতাকে ফোনে তাঁকে ক্ষোভের কথা শুনিয়েছেন হীরালালবাবু। এ ব্যাপারে জেলা সভাপতি হীরালাল দত্ত পুরকায়স্থ শুক্রবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, এপিসিসি-র নয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কাছাড়, করিমগঞ্জ জেলা থেকে অনেক প্রবীণ নেতাদের স্থান দেওয়া হয়েছে। এতে হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেস কমিটি বেজায় খুশি। এ নিয়ে তাদের মোটেই ক্ষোভ নেই। কিন্তু হাইলাকান্দি জেলা থেকে অন্ততপক্ষে একজনকে নেওয়া উচিত ছিল, হতাশার সুরে তাঁর মন্তব্য।

এই জেলা থেকে প্রদেশ কমিটিতে কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করায় দলে ও সমাজে ভুল বার্তা যাবে বলে জানিয়ে তিনি এপিসিসি-র ওই শীর্ষ কর্তাকে ফোনে বিস্তারিত জানিয়ে শীঘ্রই হাইলাকান্দি জেলা থেকে একজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে দাবি জানিয়েছেন সভাপতি হীরালাল দত্ত পুরকায়স্থ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *