নিজস্ব প্রতিনিদগি, আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর।। আজ সংযুক্ত কিষান মোর্চা ত্রিপুরার ডাকে দশ দফা দাবির সমর্থনে আগরতলা শহর কাঁপিয়ে যে মিছিল সংগঠিত হয়। এই সভা রবীন্দ্র ভবনের সামনে হবার কথা ছিল। পুলিশের অনুমতি না পাওয়াতে এই সভা গান্ধীঘাটে করা হয়। কৃষকদের বিশাল মিছিল একসময়ে সাধারণ মানুষের মিছিলে পরিনত হয়ে যায়। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার সভাপতি তথা সংযুক্ত কিষান মোর্চার অন্যতম নেতৃত্ব অশোক ধাওয়ালে বলেন, জবরদস্তি ভয়কে মারিয়ে যুদ্ধ জয়ের পথ তৈরি করেছেন তাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হবে। ঐক্য কৃষক আন্দোলনের সাফল্যের চাবিকাঠি আপনারাও সেটা দেখিয়েছেন। এখন একটাই শুধু শ্লোগান ‘ বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও । ভাজপা হটাও ত্রিপুরা বাঁচাও ।
ডঃ অশোক ধাওয়ালে তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে দমন পীড়নকে মারিয়ে বিশাল জনগণ যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন তারজন্য ত্রিপুরাবাসীকে অভিনন্দন জানান। স্বাধীনতার পরে ভারতের বৃহত্তম কৃষক আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন অশোক ধাওয়ালে। কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও তার ফলাফল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডঃ ধাওয়ালে বলেন ২৯শে নভেম্বর কালা কানুন রদ হয়েছে কিন্তু কৃষক আন্দোলন শেষ হয়ে যায় নি। ন্যুনতম সহায়ক মূল্যর আইন বিদ্যুৎ বিল বাতিল মামলা প্রত্যাহার শহীদ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদত্যাগ ইত্যাদি বিষয়গুলোর এখনও মীমাংসা হওয়া বাকি। সুতরাং কৃষকরা ময়দান ছাড়ছেনা। অন্নদাতাদের দেশদ্রোহীতা বলার জবাব দেয়ার জন্য মানুষ প্রস্তুত বলে দাবি করে ডঃ ধাওয়ালে বলেন ত্রিপুরার কৃষক জুমিয়া ক্ষেত মজুরদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ত্রিপুরা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার বলেন আজকের দাবি গুলো বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে তুলতে হয় নি। সরকার নিজের দায়িত্বে সেগুলো দেখতো। বর্তমান সরকার সমস্ত কিছু শেষ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করে মানিক সরকার বলেন সন্ত্রাসকে সম্বল করে সরকার চলছে। কেউ যাতে দাবি করতে না পারে সেজন্য ই সন্ত্রাস। একে প্রতিহত করতে শুধু একটা মিছিল করলেই হবে না মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে। সরকার জন বিচ্ছিন্ন হয়ে যে পড়েছে তার প্রমাণ গত কয়েকটি নির্বাচন। পুলিশকে কাঠ পুতুল বানিয়ে সমাজবিরোধিদের দিয়ে নির্বাচনে ভোট লুঠ করা হয়েছে। একতাকে সুদৃঢ় করে সন্ত্রাস প্রতিরোধের ডাক দেন মানিক সরকার। উপজাতিদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন একেবার একেক নামে এই বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। রাজন্য শাসনে তো কিছুই করেনি এখন ভুল বোঝানো হচ্ছে বলে তিপ্রা মথারও সমালোচনা করেন।
রাজ্যে মৌলবাদীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে ঐক্যকে সাথে করে এগিয়ে যাবার পরামর্শ দিতে গিয়ে মানিক সরকার বলেন ‘শুধু ২৩ এর শ্লোগান নয় ঐক্য গড়ে তুলে প্রতিরোধের মাধ্যমে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে কারন ভবিষ্যৎ আপনাদের। ‘
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক তথা গন মুক্তি পরিষদের সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন ৩৭ লাখ মানুষকে সরকারের ধোঁকা দেবার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবার জন্য আজকের মিছিল ও সমাবেশ। জুমিয়া, ক্ষেত মজুর সহ সাধারণ মানুষের ওপর যে অমাবশ্যা নেমে এসেছে তার জন্য তিনি মোদী ও রাজ্য সরকারের নীতিকেই দায়ি করেন। তাঁর অভিযোগ জুমিয়া, ক্ষেত মজুর সহ সাধারণ মানুষের ভাত কেড়ে নিয়ে আজাদীর অমৃত মহোৎসব করে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। যুব সমাজকে কাজের দিশা না দেখিয়ে তুইপ্রাল্যান্ডের বা গ্রেটার তুইপ্রাল্যান্ডের স্বপ্ন দেখিয়ে বার বার ধোঁকা দেওয়া হয়েছে বলে জিতেন্দ্র চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন ১২৫ সংবিধান সংশোধন করার দাবি আজ বিশ বাঁও জলের নিচে। তিনি বলেন সমস্ত ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে পাড়ায় মহললায় মানুষকে সাথে নিয়ে রাহু মুক্তি ঘটাতে হবে।
সংযুক্ত কিষান মোর্চা ত্রিপুরার আহ্বায়ক পবিত্র কর শুরুতেই রাজ্যের কৃষকদের দুর্বিসহ অবস্থার কথা উল্লেখ করে রাজ্য সরকারের দৈন্যতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন কৃষকদের অবস্থা নিয়ে লড়াই করতে গিয়ে রাজ্যের কৃষকদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে কিন্তু কৃষকরা পিছিয়ে আসতে জানে না। দেশের কৃষক আন্দোলন শিখিয়েছে কি করে ৫৬ ইঞ্চিকে ২৬ ইঞ্চিতে নামিয়ে আনতে হয় তাই পবিত্র কর স্পষ্ট সরকারকে কৃষকদের নোটিশ দিচ্ছেন বলে জানিয়ে বলেন কৃষকদের দাবী মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন সরকার সারকে কালো বাজারীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। গত সাড়ে তিন বছরে রাজ্যের কৃষিতে কোনো আধুনিক ব্যবস্থা চালু হয় নি এস আর আই এর মত উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ প্রায় বন্ধ, সেচের অবস্থা তথৈবচ বলে অভিযোগ করে পবিত্র কর বলেন ঢাক পিটিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে ধান কেনার কথা সরকার প্রচার করলেও ক্ষমতাসীন দলীও নেতারা নিজেদেরই মজুত ধান সরকারকে শুধু বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য ছাড়াই। বামফ্রন্টের সময়ে আটটি জেলায় আই সি এ আরের সহায়তায় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র খোলার সব কিছু করে রাখা হয়েছিল যা আজ বিশ বাঁও জলে তিনি মন্তব্য করেন।
এছাড়া ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের সভাপতি ভানু লাল সাহা, কৃষক নেতা নারায়ণ কর, সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সভাপতি অঘোর দেব্বর্মা সহসমস্ত রাজ্যের কৃষক নেতারাও মিছিলে অংশ নেন।সভার শুরুতেই কৃষক আন্দোলনে শহিদ কৃষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরবতা পালন করা হয়। ত্রিপুরা ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের সভাপতি ভানুলাল সাহা সংক্ষিপ্ত ভাষনের সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।